জেনারেল রাইটিং:- "মধ্যবিত্তের কান্না"

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

আমরা মধ্যবিত্ত।আমাদের জীবনটা এক অদ্ভুত সমীকরণে চলে। আমাদের চাওয়া-পাওয়ার সীমা যেন সবসময় সুতোয় বাঁধা। উচ্চবিত্তদের মতো বিলাসিতা করার স্বপ্ন দেখতে পারি না, আবার নিম্নবিত্তদের মতো অসহায়ও নই। আমাদের কষ্ট থাকে, কিন্তু তা দেখানোর জায়গা থাকে না। আমাদের কান্না থাকে, কিন্তু তা কারো কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।আমি নিজেও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।নিজের এবং প্রত্যেকটা মধ্যবিত্ত শ্রেণী মানুষের অব্যক্ত কথা আজ নিজের ভাষায় তুলে ধরবো।সকল মধ্যবিত্ত মানুষকে আমার নিজের জায়গায় রেখে কিছু কথা বলব, চলুন তাহলে শুরু করি...

1000053240.jpg

সোর্স

একটা মধ্যবিত্ত পরিবার মানেই চরম বাস্তবতার গল্প। যেখানে বাবা প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য তৈরি হন, মা সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে হাসিমুখে সবাইকে খাওয়ান, আর সন্তানরা বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের দায় নিয়ে বড় হয়। এই পরিবারগুলোতে আবেগের চেয়ে দায়িত্ব বড় হয়ে দাঁড়ায়।আমাদের নতুন জামা কেনার শখ হয়, কিন্তু বাবার পকেটের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকি। বন্ধুদের সঙ্গে দামি রেস্টুরেন্টে খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মায়ের হাতে বানানো সস্তা খাবার খেয়েই তৃপ্তির হাসি হাসতে হয়। ভালো একটা স্মার্টফোন দরকার, কিন্তু পুরোনো ফোনটাই যত্ন করে চালিয়ে নেই। আমাদের জীবন ছোট ছোট ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠে।

আমাদের স্বপ্ন থাকে, কিন্তু বাস্তবতার দেয়ালে তা ধাক্কা খায়।আমরা হয়তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বা ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু পারিবারিক দায়িত্বের চাপে অনেক সময় মাঝপথেই থেমে যেতে হয়। বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করতে আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি, ছোটখাটো চাকরির চেষ্টা করি। কখনো কখনো নিজের ইচ্ছেগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে এমন কিছু করতে বাধ্য হই যা হয়তো আমাদের পছন্দের না।আমরা প্রেম করি, কিন্তু প্রেমিকাকে দামি উপহার দিতে পারি না। আমরা ভালোবাসি, কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সব শখ পূরণ করার সাধ্য থাকে না। আমরা চুপ করে থাকি, কষ্টগুলো বুকের মধ্যে জমতে থাকে। তারপর একদিন সেই প্রেম দূরে চলে যায়, আমাদের হাতে থেকে যায় শুধুই না-পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন হাসপাতালে না গিয়ে ঘরে বসে গরম পানির ভাপ নেই, আদা-লেবুর শরবত খেয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করি। কারণ ডাক্তার দেখাতে গেলে খরচ হবে, আর সেই খরচ চালানো আমাদের জন্য বিলাসিতা। নতুন বছরের শুরুতে আমরা নতুন জামা কিনতে পারি না, পুরোনো জামাগুলো ভালো করে ইস্ত্রি করে পরি। আমাদের উৎসবগুলোও সীমিত বাজেটের মধ্যে বাঁধা।আমাদের আত্মসম্মান বড্ড বেশি।আমরা কারো কাছে হাত পাততে পারি না, কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারি না। প্রয়োজন থাকলেও ধার চাইতে লজ্জা পাই। হাজার কষ্টের মধ্যেও মুখে হাসি রেখে বলি— ‘ভালো আছি।’আমরা চাইলেও বিলাসী জীবনযাপন করতে পারি না।

আমাদের কাছে সবকিছুর একটা হিসাব থাকে— বাজার খরচ, বিদ্যুৎ বিল, বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের অন্যান্য খরচ। মাসের শুরুতে যে টাকা হাতে আসে, তার সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে পুরো মাস কষ্টে কাটে।আমাদের আবেগ প্রকাশের সুযোগ নেই। কারণ আমাদের কান্না দেখার কেউ নেই। আমরা অভিমান করলে কেউ এসে বলে না, “কী হয়েছে?” বরং সবাই ধরে নেয়, আমাদের সব ঠিক আছে। আমাদের জীবনের গল্পগুলো অন্যদের কাছে নিছক গল্প মনে হয়, কিন্তু আমাদের জন্য তা প্রতিদিনের কঠিন বাস্তবতা।

তবুও আমরা বেঁচে থাকি।তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি, ভালো কিছু করার, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর, সন্তানকে ভালো জায়গায় পৌঁছানোর। আমরা সব হারিয়েও নতুন করে বাঁচতে শিখি।

1000053241.jpg

সোর্স

আমাদের কান্না শব্দহীন, কিন্তু অনুভূতিগুলো খুব গভীর। আমরা মধ্যবিত্তরা আসলে নীরব যোদ্ধা, যারা প্রতিদিন এক অদৃশ্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে, তবুও হাসতে জানে, ভালোবাসতে জানে, স্বপ্ন দেখতে জানে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 2 months ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

1000053250.jpg

 2 months ago 

মধ্যবিত্ত জীবনের এই বাস্তবচিত্র সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। আমাদের স্বপ্ন থাকে, কিন্তু বাস্তবতার সীমাবদ্ধতা তা পূরণ করতে দেয় না। আবেগের চেয়ে দায়িত্বকে প্রাধান্য দিতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করেই হাসিমুখে এগিয়ে যেতে হয়। তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি, পরিবারকে সুখী করার, নিজের জায়গা থেকে ভালো কিছু করার। এই জীবন কঠিন হলেও, এখানেই লুকিয়ে থাকে মানিয়ে নেওয়ার শক্তি, ভালোবাসা আর আত্মসম্মানের আসল মূল্য। অসাধারণ একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ!

 2 months ago 

আমার তো মনে হয় মধ্যবিত্ত হিসেবে জন্মানো পৃথিবীর সব থেকে বড় একটি খারাপ জিনিস। কারণ মধ্যবিত্তের অতি জ্বালা। সেখানে যেমন কান্নাটা কেউ শুনতে পায় না তেমনি মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু চাওয়াও যায় না। তাই এই ধরনের জীবন অতিবাহিত করা বড় কঠিন একটি বিষয়। আপনি একদম সঠিক কতগুলো কথা এই ব্লগে শেয়ার করলেন।

 2 months ago 

ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।আসলে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার জানে এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে তারা কতটা কষ্ট করে।এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটা সন্তান তাদের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য অনেক লড়াই করে।তাদের অনেক আশা থাকে কিন্তু পরিবারের দিকে দেখলে সব কিছু ভুলে যায়।যাইহোক আপনার পোস্ট টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের গল্প গুলো একদমই আলাদা। আসলে তাদের কষ্ট গুলো আলাদা। যেটা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। ভাইয়া আপনি অসাধারণ লিখেছেন। বাস্তব চিত্রগুলোই উপস্থাপন করেছেন।

 2 months ago 

খুবই সুন্দর এবং বাস্তবিক কিছু কথা আছে আপনি আপনার এই পোস্ট এর মাধ্যমে শেয়ার করেছেন৷ আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষই জানে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কত কঠিন। পৃথিবীর যে সকল বড় থেকে ছোট কাজগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে সফলতা অর্জন করা এবং সেখান থেকে ভালো কিছু নিয়ে আসাটাও মানুষের কাছে কতটা কঠিন সেটা শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারে৷ তারা তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ যাদের স্বপ্ন পূরণ হয় তারাই প্রকৃত সফল৷ আর যারাই প্রকৃত সফল হতে পারে না তারা তাদের এই মধ্যবিত্তের পরিবারের সম্মান অনেকটা বৃদ্ধি করে দেয়৷ খুব সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ৷