ভালো বন্ধুর মুখোশে প্রতারণা
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।
বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। আমার তখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। খুব বেশি দিন হয়নি। ছয় মাস এক বছর হবে। হাসবেন্ড মোটামুটি ভালো একটি চাকরি করতো । তাই ভাবলাম যে এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু কিছু সেভিংস করি, তা না হলে হাতে টাকা থাকলে সব খরচ হয়ে যায়। কোথায় সেভিংস করলে ভালো হয় এমন খুঁজতে খুঁজতে আমার হাজবেন্ডের এক ফ্রেন্ডের ব্যাংকে গেলাম। খুব সম্ভবত সোনালী ব্যাংক ছিল। আমার হাজবেন্ডের ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড। অনেক ভালো সম্পর্ক। একই সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছে। অনেক ভালো মানুষও। ভাইয়ার কথা বেশ ভাল আমাউন্টের একটি সেভিংস একাউন্ট উনার ব্যাংকে খুলি। আমি যখন রংপুরে ছিলাম তখন আমার হাজবেন্ড নিয়মিত ব্যাংকে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতো। এক বছর পর আমার হাজবেন্ডের ঢাকায় বদলি হয়ে যায়। আমরাও ঢাকা চলে আসি। এখন ঝামেলা শুরু হয় একাউন্টে মাসিক কিস্তি দেওয়া নিয়ে। আমার হাসবেন্ডকে অনেক বললাম যে একাউন্টটা ঢাকায় ট্রান্সফার করে নিয়ে আসি। কিন্তু তার কথা যে তার বন্ধু আছে তাহলে কেন এত ঝামেলা করতে হবে। ও যতদিন আছে ওর কাছেই টাকা পাঠালে ও ব্যাংকে জমা দিয়ে দিবে। এত কাছের বন্ধু খারাপ কিছু হবে তা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। এভাবেই প্রতিমাসে কিস্তির টাকা ভাইয়ার একাউন্টে আমার হাজবেন্ড পাঠিয়ে দেয় এবং ভাইয়াও খুব সুন্দর টাকা জমা করে দেয়। বেশ কিছুদিন পর ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে আমার হাসবেন্ডের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে । তো ভাইয়ার কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সুন্দর ব্যাংক স্টেটমেন্টটা পাঠিয়ে দিল। বিশ্বাস আরো বেড়ে গেল। সব ঠিকঠাক আছে।এত ভালো মানুষ ছিল যে কোনো মাসে আমার হাজবেন্ডের কিস্তির টাকা দেয়া দেরি হলে ভাইয়া ফোন দিয়ে মনে করিয়ে দিত যে এ মাসে কিস্তির টাকা দেওয়া হয়নি । এভাবে আরো এক বছর চলে গেল।
তারপর হঠাৎ একদিন শুনি যে ভাইয়া মোটরসাইকেলের এক্সিডেন্ট করেছে। খুব খারাপ অবস্থা। শুনে এত খারাপ লাগছিল যে কি বলবো । বারবার তার জন্য দোয়া করছিলাম । এত ভালো মানুষ এরকম একটি এক্সিডেন্ট করলো । তারপর সে হসপিটালে অনেকদিন ছিল। এরই মাঝে আমাদের ব্যাংকে কিস্তি দেওয়ার ডেট চলে এসেছে। এখন ব্যাংকের কিস্তি দিতে হবে।তা না হলে তো একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আমার হাসবেন্ডকে বললাম যে তোমার কাজিন আছে ওর কাছে টাকা পাঠিয়ে দাও। ও জমা দিয়ে দিবে। কি জানি আমার হাসবেন্ড কিছু শুনেছিল কিনা নাকি। হঠাৎ তার মনে হল যে ব্যাংক একাউন্টের কি খবর একবার খোঁজ নেই তারপরে টাকা জমা দিব। ওর কাজিনকে ব্যাংকে পাঠানোর পর জানতে পারলাম যে আমাদের একাউন্ট কিস্তি না দেয়ার কারণে অনেক আগেই ক্লোজ হয়ে গিয়েছে। অনেকদিন হলো কোন টাকা পয়সা জমা দেয়া হয়নি। কি কারন খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে ভাইয়া নাকি একটু খারাপ পথে চলে গিয়েছিল। সেজন্য সে আমাদের প্রতি মাসের টাকা নিজে ভেঙ্গে ফেলেছে এবং সেই সাথে আমাদের নামের একাউন্ট ক্লোজ করে দিয়েছে। তাছাড়া আরো অনেকের কাছে থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। ততদিনে আমাদের প্রায় দুই আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়ে গিয়েছে। তখন ভাইয়া মোটামুটি সুস্থ। আমার হাসবেন্ডকে বারবার বললাম যে উনার কাছে জিজ্ঞাসা কর। ততদিনে ওনাকে চাকরিতে সাসপেন্ড করে দিয়েছে। আমার হাসবেন্ড এতই ভালো মানুষ যে সে তার বন্ধুর এই কাজের জন্য নিজেই খুব লজ্জিত। সে তার সঙ্গে কিভাবে এই বিষয়ে কথা বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। তাছাড়া আমরা যে টাকাটা জমা দিয়েছিলাম ব্যাংকের কাছে কমপ্লেইন করতে বলেছিলাম যে আমাদের সিগনেচার ছাড়া সে কিভাবে টাকা তুলল। কিন্তু আমার হাজবেন্ড সেই কাজটি করতেও রাজি নয়। যাতে বন্ধু চাকরিতে আরো সমস্যা সৃষ্টি না হয়। অনেকদিন পর উনি অবশ্য চাকরি ফেরত পেয়েছিল ডিমোশন পোস্টে। কিন্তু আমার হাজবেন্ড আর কোনদিন ওনার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। টাকা চাওয়াতো দূরের কথা। এভাবেই একটি ভালো মানুষের মুখোশ খুলে গেল। বন্ধুত্বের মুখোশ নিয়ে সে এভাবে আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে। তারপর থেকে আমার হাসবেন্ডকে সবসময় বলি যে টাকা পয়সার বিষয়ে আর কাউকে বিশ্বাস না করতে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ওনার এই অ্যাক্সিডেন্টের হওয়াতে আমাদের এই উপকারটি হয়েছে। তা না হলে তো আমরা আরো টাকা দিয়েই যেতাম।
এরকম কাছের মানুষের প্রতারণার আরো একটি গল্প আছে। সেই গল্প আপনাদের সঙ্গে অন্য আরেকদিন শেয়ার করব।
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে।
ধন্যবাদ
@tania
Photographer | @tania |
---|---|
Phone | oppo reno5 |
আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি। |
---|
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy

এই কথাটা অবশ্য ঠিক বলেছেন কাছের মানুষরাই ধোঁকা বেশি দেয়। দূরের মানুষদের সঙ্গে তো এরকম লেনদেন হয় না। এজন্য আমার মনে হয় টাকা পয়সার বিষয়ে মানুষের সঙ্গে লেনদেন কম করাই ভালো।
কাউকে এভাবে অন্ধ বিশ্বাস করা কখনো ভালো না।বেশি বিশ্বাস করছে বলে তাই আজ অনেক গুলো টাকা আত্মসাৎ করে ফেলল।টাকার লোভ খুব খারাপ জিনিস।আমি আবার এত বেশি কাউকে বিশ্বাস করি না আপু।তবে কর্মের ফল সে নিজে ভোগ করবে।ধন্যবাদ আপু।
এই কথাটা আমার হাসবেন্ডকে বোঝাতে পারি না। সে যাকে বিশ্বাস করে অন্ধের মতই বিশ্বাস করে। শত বোঝালেও বুঝতে চায় না। পরে যখন একটা বিপদে পড়ে তখন আর কোন কথা বলতে পারে না।
এই একটা দোষ আপু সাহেবদের😴😴😴
আপু তার পাপের শাস্তি সে পেয়ে গিয়েছে তারজন্য হয়তো ভাইয়া আর কিছু বলতে চায়নি। তবে টাকা পয়সার ব্যাপার এই বিষয় নিয়ে কাউকে বিশ্বাস না করাই ভালো। তার এক্সিডেন্টে না হলে হয়তো আপনাদের আরও বড় বিপদ হতে পারতো। কথায় আছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। টাকা পয়সা নিয়ে ভাই ভাইকে বিশ্বাস করতে চায়না আর বন্ধুতো দূরের কথা। এখন ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। যাই হোক খুব সুন্দর পোস্ট করেছেন। ধন্যবাদ।
তা ঠিক আপু তার অ্যাক্সিডেন্টটা না হলে হয়তো আমরা টাকা এভাবেই দিয়ে যেতাম এবং আরো কয়েক বছর পর বিষয়টা জানতে পারতাম। তখন হয়তো আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেত। যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
মানুষ এভাবে কিভাবে পরের আমানত খেয়ানত করে? আসলে মানুষের মনুষ্যত্ব বিবেক দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে,আর মানুষ হচ্ছে অমানুষ।কপাল ভাল যে আগেই জানতে পেরেছিলেন,নইলে আরো বেশি হারাতে হত।ধন্যবাদ আপু পোস্টটির জন্য।
আমরা এভাবে চিন্তা করি কিন্তু যারা মানুষের টাকা পয়সা মেরে দেয় তারা এই বিষয়টি কখনো চিন্তাই করে না। তারা মনে করে যে এইটাই ঠিক।
খুবই খারাপ লাগলো আপু কাহিনীটি পড়ে। কিভাবে আপনার হাজবেন্ডের বন্ধু ভালো মুখোশের আড়ালে এতগুলো টাকা মেরে দিল। আসলে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, তা না হলে ওনার এক্সিডেন্ট না হলে আপনারা হয়তো আজ অব্দিও টাকা দিয়ে যেতেন। কিন্তু ওনাকে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল টাকাগুলো নেই কেন ভেঙে ছে,আপনাদের না বলে। এটা এক ধরনের প্রতারণা।
আপু আমার হাজবেন্ডের বন্ধু কেমন মানুষ ছিল তা আমি হয়তো জানি না। কিন্তু এত খারাপ ছিল না। কোন কারণে সে নেশার জগতে জড়িয়ে গিয়েছিল জন্যই এরকম অঘটনটি ঘটিয়েছে। কিন্তু সে চাইলে পরে টাকা ফেরত দিতে পারতো কিন্তু তা সে দেয়নি।
ঈশ্বরের অশেষ কৃপা ছিল বলেই অল্পতেই বুঝতে পেরেছেন যে উনি প্রতারক, যদি এরকম বছরের পর বছর চলতে থাকতো তাহলে তো আপনারা আরও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন আপু,ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
বিশ্বাসের মর্যাদা যারা রাখতে পারেন না তারা আসলে মানুষের পর্যায়ে পড়েনা,বর্তমান সমাজে মুখোশধারী বন্ধুর অভাব নেই,তাই বুঝেশুনে মানুষ কে বিশ্বাস করতে হবে।ভাইয়া বন্ধুত্বের কারনে চায়নি যে কোন পদক্ষেপ নিক তাহলে তার চাকরির আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। ভাইয়ার মহত্ত্বের ফল একদিন উনি ঠিক পাবেন কোন না কোন ভাবে,ভালো কাজ কখনো বিফলে যায় না। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুক এই প্রার্থনা করি।
বিশ্বাস না করার কোন কারণ ছিল না আপু। কারণ দীর্ঘ অনেক বছর একসঙ্গে থেকেছে।তখন তো ভালোই ছিল। পরে নেশার জগতে যাওয়ার কারণে এরকম অধঃপতন হয়েছে। এই জগতটাই এরকম মানুষের জ্ঞান শূন্য করে দেয়। তারপরও মানুষের বুঝে শুনে টাকা ইনভেস্ট করা উচিত।
মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে মাথায়ই আসেনা। নিজের বন্ধুর টাকা যে এতো বিশ্বাস করে তার কাছে টাকা গুলা দিতো সেই টাকাই মেরে দিলো। ব্যাটারে পাইলে আচ্ছা এক ধোলাই দিতাম আমি। ভাইয়া ভালো মানুষ দেখে কিছু বলে নি। আমি হলে ওই ব্যাটার নাক ফাটাই দিতাম। যাক আল্লাহ সহায় ছিলেন ওই বাটপার এর এক্সিডেন্ট না হলে তো সরল বিশ্বাসে আরো কতো গুলো টাকা দিয়ে দিতেন।
আসলে ওই ভাইয়া খারাপ ছিল না। কোন কারণে সে নেশার জগতে জড়িয়ে গিয়েছিল। তার জন্যই তার এই অধঃপতন হয়েছিল। আমরা কিছু না বলে আল্লাহর উপরে বিচার ছেড়ে দিয়েছি।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া আপনার কোন একটি সম্পত্তি কারো কাছে দীর্ঘদিন রেখে দেন এবং দীর্ঘদিন পর যখন ফেরত চাইতে যাবেন তখন দেখবেন যে সহজে সেই জিনিসটি আর সে দিতে চাইবে না। মানুষের স্বভাবে এমন কি আর করবেন।
একজন ভালো বন্ধু জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। ঠিক তেমনি ভালো বন্ধুর আড়ালে থাকা অসৎ বন্ধু জীবনকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করতে পারে। আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে অনেক সময় বিশ্বাস করে ঠকতে হয়। এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া বন্ধু নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভালো মানুষের জন্য মানুষের জীবন অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার একজন খারাপ মানুষের জন্য জীবনের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।