জীবন, মৃত্যু ও পরকাল - পর্বঃ ৮

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামুআলাইকুম

বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভাল আছি। জীবন, মৃত্যু ও পরকাল নিয়ে ৮ম পর্বে হাজির হয়ে গেলাম।আজকের পর্বে আমাদের সাথে আলোচনা করব মিজান আর পুলসিরাত নিয়ে। যদিও আমরা এ বিষয়গুলো আমরা সকলেই কম বেশি জানি কিন্তু আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা এগুলো যত শুনব এবং জানবো ততই আমাদের মনগুলো নরম হবে এবং আল্লাহর দিকে বেশি ঝুঁকে যেতে পারব।তাই আমার এই প্রচেষ্ঠা। আসলে শয়তান সবসময়ই চায় ভাল কাজ হতে আমাদেরকে দূরে রাখতে। আমরা প্রতিনিয়ত তার সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। কেউ কেউ এ যুদ্ধ জয়ী হয় আবার কেউ কেউ হেরে যায়।তাই যতই ধর্মীয় জ্ঞান আহরন করা যায় ততই খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা যায় এবং মনে অনেক শান্তি পাওয়া যায়। আশা করি আজকের পর্বটিও আপনাদের ভাল লাগবে।চলুন চলে যাওয়া যাক তাহলে মূল পর্বে।

C513F2C4-E36C-42D9-92E5-6730FE907363.jpeg

Image source

আগের পর্বে বলেছিলাম কিছু কিছু মানুষকে বিনা হিসেবে জান্নাতে দেয়া হবে, কিছু কিছু মানুষের হালকা হিসাব নেয়া হবে এবং কিছু কিছু মানুষের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেয়া হবে।আর এই হিসাব নেওয়ার জন্য তখন সামনে আনা হবে মিজান।এই মিজান কেমন হবে তা আমাদের ধারণা নেই, শুধু এটাই আমরা বুঝতে পারি যে ছোট বড় সব কিছুরই (পাপ ও পূর্ণের ) ওজন করা হবে এই মিজানে। যে সমস্ত কাজ পূর্ণ বিশ্বাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নবীর দেখানো পথ অনুসারে করা হয়েছে সেসব কাজগুলো মিজানের পাল্লায় অনেক ভারী হবে।নিয়মিত যিকির ও তেলওয়াত এগুলো মিজানের পাল্লায় অনেক ভারী হবে। হাদীসে বর্ণিত আছে এক ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসা করা হবে তার কোন নেকী আছে কিনা? তখন সে বলবে তাঁর কোনো নেকী নেই।কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলবেন নেকী আছে, তোমার প্রতি অবিচার করা হবেনা।তাঁর সামনে মিজান নিয়ে আসা হবে। এরপর তাঁর নিরানব্বইটি বড় বড় গুনাহ যা দু চোখ যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে তা মিজানের পাল্লায় রাখা হবে এবং আরেক পাল্লায় একটি কাগজে লেখা থাকবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।তখন লোকটি বলবে এত গোনাহের কাছে এই সামান্য একটি কাগজে আর কি হবে? তখন কাগজের পাল্লাটি ভারী হয়ে যাবে ওই বিশাল গুনাহের পরিমাণের কাছে।এ ধরনের ছোট ছোট অনেক আমল আছে যা আমরা ইখলাসের সাথে করে থাকি তা মিজানের পাল্লায় অনেক ভারী হবে।*

এরপর মিজান শেষে সবাইকে আনা হবে পুলসিরাতের কাছে।পুলসিরাত হচ্ছে শুরু, চুলের চেয়েও চিকন, তলোয়ার এর চেয়ে ধারালো একটি সেতু। আরে পুলসিরাতের নিচে রয়েছে জাহান্নাম।বর্ণিত আছে জাহান্নামের 99 হাজার শিকল রয়েছে, আর ওই শিকলকে 99 হাজার ফেরেশতা টেনে ধরে রেখে আছে। জাহান্নাম ওই সময় খুবই ক্ষিপ্ত থাকবে।এ সময় প্রত্যেক জাতি বিভিন্ন দল বা গোত্রে ভাগ হয়ে যাবে।যেমন নবী মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর উম্মত থাকবে এক দলে । ঈসা নবীর উম্মত থাকবে এক দলে। প্রত্যেক নবীর গোত্র তাদের নিজ নিজ গোত্রে থাকবে। এ সময় মুশরিকরা সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।এই পুলসিরাত কেউ কেউ পার হবে ঝড়ো গতিতে, কেউবা বিজলী চমকানোর মতো কেউ বা ঘোড়ার গতিতে, কেউবা কয়েক বছর, মাস বা কয়েক দিনে যা নির্ভর করবে তাদের কৃত কর্মের ফলের উপর।

পুলসিরাত যখন সবাই পার হবে তখন এই পৃথিবীর মতো রাতে যেমন অন্ধকার নেমে আসে সেখানেও ঠিক তেমনি ভাবে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আসবে। কিন্তু এই অন্ধকারে প্রতিটি বান্দা যার যার নেক আমলের উপর ভিত্তি করে নিজ নিজ আলোর মাধ্যমে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।কেউ কেউ তাঁর চারিপাশের বিশাল এলাকা নিয়ে আলো পাবে, কেউ কেউ মোটামুটি চলার মত আলো পাবে, কেউ কেউ আবার তাঁর পায়ের আঙ্গুলের সাথে সামান্য একটু আলো পাবে তা দিয়েই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।আর সর্বশেষে যে পার হবে সে অনেক কষ্টে টেনে হেঁচড়ে পুলসিরাত পার হবে। এরপর পুলসিরাত পার হয়ে যাওয়ার পরও অনেকে অল্পের জন্য ঠেকে যাবে কারণ তারা দুনিয়াতে মানুষের হক নষ্ট করেছিল, গীবত করেছিল। গীবত বড়ই ভয়ংকর জিনিস, আমরা কয়েকজন এক জায়গায় হলেই গীবত করা শুরু করে দেই। আল্লাহ যেন আমাদেরকে গীবত করা থেকে বিরত রাখেন। যাদের গীবতের পরিমান এতই বেশি ছিল যে কোন অবস্থাতেই তা তারা মাফ করাতে পারেনি।এ ছাড়া যারা মুনাফিক ছিল তারাও এখানে এসে আটকিয়ে যাবে অর্থাৎ জাহান্নামই হবে তাদের একমাত্র ঠিকানা। সত্যিই এটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার যে মৃত্যুর পর থেকে এতগুলো ধাপ পার হয়ে জান্নাতের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে ফিরে যেতে হবে তাদেরকে।

আজকে তাহলে এইটুকুই। আগামী পর্বে এরপর থেকে আবার আলোচনা করব।

বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন। আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসর থেকে এতোটুকুই আলোচনা করলাম।আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে। পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব।

ধন্যবাদ,

@tangera

1927F0BC-A81B-459C-A2F6-B603E4B2106C.png


👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

আসলেই এই বিষয় গুলো যতই জানব ততই আল্লাহর পথে অগ্রসর হবো।কার কোন ভালো কাজের জন্য মিজানের পাল্লা ভারি হবে তা কেবল আল্লাহ জানে।এত সরু এবং বেল্ড এর চেয়ে ধার পুলসিরাত কেমনে পার হবো মাঝে মাঝে তা ভেবে বেশ ভয় লাগে।আল্লাহ আমাদের সকল কে বেশি বেশি করে কালেমা আর আমল করার তৌফিক দেক আর গীবত থেকে মুক্ত রাখুক।আর মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সহজ করে দেক।ভালো লাগলো লেখাগুলো পড়ে।ধন্যবাদ

 2 years ago 

অনেক ভাল লাগলো পড়ে। আসলে এসব কথা যত সামনে আসবে তত আমরা আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করব এটা খুব সত্যি কথা। আপনি প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করবেন আশাকরি। সবাইকে আল্লাহ হেদায়েত দান করুন, আমিন।

 2 years ago 

মিজান আর পুলসিরাত জীবনের সবচেয়ে বড় সময়। দাঁড়িপাল্লায় সকল হিসেব-নিকাশ এরপর পুলসিরাত পার করেই জান্নাতের দিকে প্রবেশ করতে হবে। তবে আমাদের কার ভাগ্যে সেই জান্নাত রয়েছে আর কার ভাগ্যে পুলসিরাত পার হতে হতেই দোযখে নিক্ষিপ্ত হওয়ার অবস্থা রয়েছে সেটা আমাদের কারো জানা নেই। তবে এই বিষয়গুলো আমরা যতটা মনে লালন করব ততটাই পরকাল ভীতি এবং ঈমান ঠিক রাখার মত শক্তি থাকবে। প্রিয় রাসূলের উম্মত হয়ে আমরা হয়তোবা অনেক বেশি ভাগ্যবান। তবে এই ঈমান ধরে রাখতে পারলে এবং রাসুলের দেখানো পথে চলতে পারলেই হয়তো বা আমরা সৌভাগ্য অর্জন করতে পারব। লেখাগুলো পড়ে সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল আপু।

 2 years ago 

আজকেই আপনার লেখা জীবন মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কে আট নম্বর পর্বটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। যদিও বা এর মধ্যে থেকে অনেক কথায় আগে থেকে জানা তারপরও আজকে অনেক নতুন কিছু জানতে পারলাম। সত্যি দুনিয়াতে মানুষের হক নষ্ট কারী এবং গীবতকারীদের সেই সময় খুবই খারাপ অবস্থা হবে। কারণ এতগুলো ধাপ পার করে এসেও তাঁরা জান্নাতে যেতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে সব ধরনের পাপ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা যত শুনব এবং জানব আমাদের ভেতরে তত বেশি ভয় কাজ করবে এবং ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। আপু আপনি অনেক সুন্দর ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো তুলে ধরেছেন। অনেক ভালো লেগেছে আপনার লেখা গুলো পড়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।