জেনারেল রাইটিং //"পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত মানুষের বিবেক "।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে জেনারেল রাইটিং শেয়ার করবো । "পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত মানুষের বিবেক "। আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

সোর্স

মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে, যা কোনো আইন, কোনো প্রতিষ্ঠান, এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী আদালতও শেষ পর্যন্ত বিচার করতে পারে না। কারণ এসব বিষয় বাহ্যিক নিয়ম-কানুনের খাতায় নয়। মানুষের অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য অথচ অটল শক্তির কাছে বিচারাধীন হয় যার নাম বিবেক। বিবেক সেই নীরব আদালত, যার আসন মানুষের হৃদয়ের একেবারে অন্তঃস্থলে। এর কোনো দরজা নেই, নেই কোনো ঘণ্টা বাজানোর নিয়ম, নেই কোনো আইনজীবী কিংবা সাক্ষী।তবুও এর উপস্থিতি অনস্বীকার্য, এবং এর রায় অমোঘ। এই আদালত মানুষের আত্মাকে শাসন করে, চোখের সামনে ভুলকে উন্মোচিত করে, আর সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে এক অদৃশ্য তাগিদ দিয়ে যায়। মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি চিন্তার আগে-পরে, প্রতিটি সিদ্ধান্তের অন্তরালে এই আদালতের নিঃশব্দ নজরদারি থাকে। যেন এক অদৃশ্য আয়না, যেখানে মানুষ নিজের কর্মের আসল রূপ দেখে ফেলে।সাজানো বাহ্যিকতার আড়ালে লুকোনো সব সত্যসহ।

মানুষ যত বড় ক্ষমতাবানই হোক, যত প্রভাবশালী পদেই থাকুক না কেন, বাহ্যিক আদালতের রায় এড়িয়ে যাওয়া বা বদলে ফেলা হয়তো কোনোভাবে সম্ভব, কিন্তু বিবেকের রায় থেকে বাঁচা অসম্ভব। এই নীরব বিচারক মানুষের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি ইচ্ছা, এমনকি হৃদয়ের অন্ধকার কোণেও নজর রাখে। যখন কেউ অন্যায়ের পথে হাঁটে, বাহ্যিক আইন হয়তো চুপ করে থাকে, সমাজ হয়তো বাহ্যিকভাবে তাকে নির্দোষ ভাবতে পারে। কিন্তু বিবেকের আদালতে তখনই তার অপরাধ প্রমাণ হয়ে যায়। সেই রায়ের পর শুরু হয় এক গভীর অস্থিরতা, যা মানুষের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়। আবার উল্টোদিকে, একজন মানুষ যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকে, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ তাকে আঘাত করলেও বিবেকের কাছে সে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। এই শান্তি বাহ্যিক কোনো ক্ষমতা দিয়ে পাওয়া যায় না ।এটি কেবল বিবেকই দিতে পারে।

বাস্তব জীবনে এমন অগণিত উদাহরণ আছে, যেখানে মানুষ বাহ্যিকভাবে দোষমুক্ত থেকেও অন্তরের ভেতর অপরাধবোধের আগুনে জ্বলেছে। একজন চোর ধরা না পড়লেও জানে, তার ভেতরে এক অদৃশ্য বিচারক প্রতিদিন তাকে অপরাধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটি চুরি করা জিনিসের দিকে তাকালে তার চোখে সেই অন্যায়ের ছায়া পড়ে। আবার একজন সৎ মানুষ হয়তো অন্যের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা অভিযোগের বোঝা বইছে, কিন্তু তার বিবেক শান্ত ।কারণ ভেতরের আদালত জানে, সে সত্যিই নির্দোষ। এই নির্ভীকতা, এই মানসিক স্বস্তি কেবল বিবেকের ন্যায়বিচারেই সম্ভব।

বিবেকের আদালত এত মহান যে, এখানে কোনো ঘুষ নেই, কোনো পক্ষপাত নেই, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির তদবির নেই। এখানে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে কোনো ধূসর সীমারেখা নেই যা সঠিক, তা সঠিক; যা ভুল, তা ভুল। আবেগ, ভয়, স্বার্থ কিংবা হুমকি কিছুই এর রায় বদলাতে পারে না। তাই যদি মানুষ সত্যিকার অর্থে নিজেকে সৎ রাখতে চায়, তবে তাকে প্রথমেই বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বাহ্যিক আইন মেনে চলা অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় দায়িত্ব হলো নিজের অন্তরের আইনকে সম্মান করা।মানুষের জীবনে বিবেকের এই ভূমিকা আসলে মানবতার মূলভিত্তি। যদি প্রতিটি মানুষ তার বিবেককে জাগ্রত রাখে, তবে সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, প্রতারণা ও হিংসা অনেকটাই হারিয়ে যাবে। কারণ বাহ্যিক শাস্তির ভয় যতটা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বিবেকের শাস্তি তার চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। বাহ্যিক শাস্তি এড়িয়ে চলা সম্ভব, কিন্তু বিবেকের শাস্তি মানুষকে দিন-রাত ভেতর থেকে তাড়িত করে, অস্থির করে তোলে। এই শাস্তি নীরব, তবুও তার তীব্রতা অসহনীয়; অদৃশ্য হলেও তা ভাঙার মতো কোনো প্রাচীর নেই।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের বিবেক বুদ্ধি থেকেও থাকে না। সব জানে, সব বোঝে, ভুল-সঠিকের পার্থক্য স্পষ্ট চোখের সামনে থাকে, তবুও অন্তরের আদালত যেন নীরব থাকে। মনে হয়, বিচারকের আসন খালি, অথবা বিচারকের চোখ ইচ্ছে করেই বেঁধে রাখা হয়েছে। এই অবস্থাই সবচেয়ে ভয়ংকর কারণ এটি শুধু নিজের নয়, অন্যের জীবনেও অসীম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন কেউ অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে, ক্ষতি করছে, প্রতারণা করছে, অন্যায় করছে ।আর তবুও তার বিবেকের কোনো নড়াচড়া নেই।তখন বোঝা যায়, লোভ, স্বার্থ, হিংসা বা ক্ষমতার নেশা তার ভেতরের আদালতকে অচল করে দিয়েছে। এমন মানুষ জানে, তার কাজে অন্যের চোখে জল আসছে, কারও জীবন ভেঙে যাচ্ছে, তবুও সে উদাসীন থাকে। এই উদাসীনতা শুধু নৈতিক অবক্ষয় নয়, মানবতারও গভীর পতন। কারণ যার বিবেক কাজ করে না, সে মানুষ হলেও তার হৃদয়ে মানবিকতার উষ্ণতা আর থাকে না; তার অন্তর হয়ে ওঠে পাথরের মতো শীতল।

পৃথিবীর সব আদালত মিলেও মানুষের বিবেকের আদালতের সমান ন্যায়বিচার দিতে পারবে না। বাহ্যিক আদালত কেবল প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেয়। কিন্তু বিবেক দেয় সত্যের ভিত্তিতে রায় যা চিরন্তন, নিরপেক্ষ এবং অচল। তাই জীবনে এমনভাবে চলা উচিত, যাতে বাহ্যিক আদালতের প্রয়োজন না পড়ে, আর বিবেকের আদালতে সবসময় আমরা নির্দোষ থাকতে পারি। কারণ শেষ পর্যন্ত, মানুষের সবচেয়ে বড় বিচারক সে নিজেই তার জাগ্রত বিবেক, যা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।