প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমাদের জীবন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সখ্য অনেক পুরাতন। আমাদের দেশ বারবার নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ কমেনি বরং আরো বেড়েছে। বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েক মাস বাংলাদেশে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে। টর্নেডো, সাইক্লোন, বন্যা, নদী ভাঙ্গন ও নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগের থেকে আরও বেড়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে আমার পরিচয় সেই ছোটবেলায়। ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব একটা তেমন মনে থাকে না। কয়েক বছর পরেই আমরা ভুলে যায়। কিন্তু ১৯৮৮ সালের যে বন্যা হয়েছিল সেই বন্যার কথা আমার এখনো কিছুটা মনে রয়েছে। সেই সময় আমি বেশ ছোট ছিলাম। যার ফলে তখন বন্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করার থেকে স্কুলের ছুটিটাই বেশি উপভোগ করেছিলাম। ১৯৮৮ সালের বন্যায় যখন সারাদেশের মানুষের অবস্থা ছিল বেগতিক। তখন আমি বেশ খোশমেজাজে ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছিলাম। একটু বড় হওয়ার পর তখন বুঝতে পেরেছি ১৯৮৮ এর বন্যা কতটা ভয়াবহ ছিল। দেশের প্রায় ষাট শতাংশ জায়গা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এই বন্যা প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
সাধারণত আমাদের দেশে বন্যা হলে অল্পদিনেই পানি নেমে যায়। কিন্তু এই দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে দেশে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া তখন এখনকার মত অগ্রিম আবহাওয়ার খবর পাওয়া যেত না। এখন তো আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে আবহাওয়ার রেগুলার আপডেট পাই। তাছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২৪ ঘন্টা খবর প্রচার করতে থাকে। যার ফলে মানুষ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে।
যেমন ধরুন এবারের যে সাইক্লোন বাংলাদেশের পাশ দিয়ে চলে গেল। যার নাম দেয়া হয়েছিল মোখা। এই সাইক্লোন বাংলাদেশের সীমানায় আসার অনেক আগে থেকেই সরকার সতর্কতামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ত্রাণ নিয়ে আগে থেকে প্রস্তুত হয়েছিলো। সতর্কতার কারণে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি হয় অনেক কম। কিন্তু আগেকার দিনের ব্যাপারটা এমন ছিল না। তখন মানুষ আগে থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানতে পারত না। যার ফলে মাঝারি ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বহু মানুষ হতাহত হতো।
অবশ্য একদিক থেকে আমি নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করি। কারণ আমাদের বাড়ি যে এলাকায় বাংলাদেশের এই অঞ্চলে বন্যা ছাড়া অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন একটা হয় না। আর শহর রক্ষা বাঁধের কারণে শহরের ভেতরে বন্যার পানিও আসতে পারে না। ১৯৮৮ সালের পরে ফরিদপুর শহরে আর কখনো বন্যা হয়নি। অথচ এর ভেতরে দেশে আরও বেশ কয়েকটি বড় বন্যা হয়ে গিয়েছে। আমরা শুধু টেলিভিশনেই সেই বন্যার খবর গুলো দেখেছি। কিন্তু বন্যার পানি আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচাইতে বেশি দুর্দশা গ্রস্থ হয় নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ। উচ্চবিত্তের কাছে বন্যা এক ধরনের উপভোগের বিষয়। কিন্তু যে সমস্ত নিম্নবিত্ত মানুষ দিন আনে দিন খায় ধরনের তাদের দুর্দশা সীমা থাকে না।
তবে আমাদের শহরের মানুষজন বন্যা না দেখলেও পদ্মা নদী আমাদের খুব কাছে হওয়ায় আমরা নদী ভাঙ্গন খুব ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। যদিও নদীর পাড় এখন বাঁধাই করার কারণে বেশ কয়েক বছর হল আর নদী ভাঙ্গন দেখতে পাই না। শেষবার যখন বড় আকারের নদী ভাঙ্গন দেখেছিলাম। তখন আমি ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়তাম। মনে আছে আমরা নদী ভাঙ্গন দেখার জন্য শহরের শেষ প্রান্তে পদ্মা নদীর পাড়ে চলে যেতাম। সেবার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিলো প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা। এই নদী ভাঙ্গনে ও মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিম্নবিত্ত মানুষ তো সর্বস্বান্ত হয়ে পথের ভিকিরিতে পরিণত হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অনেক বড় সমস্যায় পড়ে। যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে কাজ করলে এই নদী ভাঙ্গন অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ মানুষ নানা ভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রীতিমত ধ্বংস করে দিয়েছে। ধ্বংস করে এখনো যে থেমে আছে ব্যাপারটা তা নয়। এখনো সেই ধ্বংসলীলা চলছে। সেই কারণেই প্রকৃতি এখন আমাদের উপর প্রতিশোধ নেয়া শুরু করেছে। তাই আমাদেরকে আরো এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলিকে সঙ্গী করেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আর সেই সাথে চেষ্টা করতে হবে নিজেদের করা ভুলগুলো যেন আমরা শুধরে নিতে পারি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া, আমিও অনেক আগেই শুনেছিলাম যে ১৯৮৮ সালের বন্যা খুবই মারাত্মকন্যা ছিল। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলা করার জন্য সরকার যেমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, ঠিক এরকম সতর্কমূলক ব্যবস্থা যদি এখন থেকেই সরকার গ্রহণ করে এবং জনগণকে গাছপালা ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখতে পারে তাহলে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের খুবই কল্যাণকর হয়। একই সাথে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য সকলকে গাছ লাগানোর উৎসাহ দিতে। একই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য আমাদের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়া। যেহেতু দিন দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাবে সেহেতু আমাদেরকে অগ্রিম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
প্রাকৃতিক দুর্য োগ যেটা ক্রম বর্ধমান প্রতিবছর কম বেশি আঘাত হানে। আমাদের এই সুন্দর সবুজ প্রকৃতির দেশে কিছু কিছু দুর্যোগ অনেক আগেই ঘটে গেছে যেগুলোর অনেক ভয়াবহতা ছিল। যেমনটা বললেন 1988 সালের বন্যা কথা তখন আমি খুবই ছোট বুঝতাম না কিন্তু বড় হওয়ার পর শুনেছি সেই বন্যার ভয়াবহ দৃশ্যপট এর কথা। সামনে আরো কত দুর্যোগ আসবে সেগুলো আমাদের মোকাবেলা করে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে এটাই জীবন।
মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদেরকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় যখন ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ি আমরা। যদিও আমাদের অঞ্চলে বন্যা ছাড়া অন্য কিছু হয় না। তবে সেটা অনেকটা গ্রামের দিকে। তাইতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেভাবে দেখা হয় না। তবে নানু দাদিদের মুখে শুনেছি এর আগে নাকি অনেক ভয়াবহ সব বন্যা হয়েছিল। সেই ভয়াবহ বন্যার স্মৃতিগুলো এখনো সবার মনে আঘাত হেনে যায়।