এই অকাল মৃত্যুর পেছনে দায়ী কে?

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ছোট্ট একটি শিশু ফেরি করে নামাজ শিক্ষার বই বিক্রি করতো। হঠাৎ করে দুটো বাসের ভেতরে চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। শিশুটি তার বাবা মার সাথে গুলিস্তানে ভাসমান অবস্থায় থাকতো। খবরটি পড়ার পর থেকেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশে শিশুশ্রম নতুন কিছু নয়। ঢাকায় তো বেশিরভাগ বাসা বাড়িতে দেখা যায় কাজের লোক হিসেবে ছোট্ট শিশুদেরকে রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন দোকানপাট কল কারখানায় হর হামেশাই এই বাচ্চাদেরকে দেখা যায় কাজ করতে। আবার রাস্তাঘাটে হকারি করে এমন শিশুর সংখ্যাও কম নয়। আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরা দাবি করেন বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশ নেই। যদি দেশের দারিদ্রতা না থাকে তাহলে এত শিশুকে কেনো কাজ করে খেতে হচ্ছে? কেনো যে বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা খেলাধুলা করার কথা তখন তাদেরকে পরিবারের বোঝা বহন করতে হচ্ছে?

এই অকাল মৃত্যুর পেছনে দায়ী কে_20240405_103834_0000.png

Canva দ্বারা তৈরি করা হয়েছে

দেশের রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের বাচ্চারা যখন দেশের বাইরে এক্সপেন্সিভ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে। সেখানে দেশের বড় একটা অংশের বাচ্চারা এভাবে রাস্তাঘাট দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এই ধরনের মৃত্যু যে তাদের প্রথম হয়েছে তা নয়। এটা হর হামেশাই ঘটে থাকে। সৌভাগ্যক্রমে হয়তো এই শিশুটির নাম প্রথম আলোর মতো পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু এমন বহু শিশু প্রতিদিন মারা যাচ্ছে তাদের খবর কেউ রাখেনা। আমরা মেট্রোরেল আর পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের উন্নয়ন মাপার চেষ্টা করছি। কিন্তু রাস্তার পাশে পড়ে থাকে এমন লাখো শিশু যে অনাহারে রয়েছে অনাদরে বেড়ে উঠছে সমস্ত রকম মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়া সে কথা আমরা একবারও চিন্তা করছি না।


যে বাচ্চাটি মারা গিয়েছে তার বয়স কতো হবে? বড়োজোর ৯ বা ১০ বছর। এই বয়সের একটা বাচ্চা সাধারণত কি করে? স্কুলে যায় বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। অথচ এই বাচ্চাটাকে তার নিজের পেট চালানোর জন্য হকারী শুরু করতে হয়েছিলো। দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটাতে হলে দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটানো জরুরী। রাস্তার পাশে ফুটপাতে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন অবস্থায় শুয়ে থাকবে আর আপনি উন্নয়নের বুলি আউড়ে যাবেন এভাবে দেশ কখনোই উন্নত হবে না। সরকারের নজর শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে। কিন্তু মানুষের জীবনমান উন্নয়ন না হলে দেশ কখনো এগিয়ে যাবে না। আপনি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে অবহেলিত অবস্থায় পেছনে রেখে কখনো এগিয়ে যেতে পারবেন না।


চিন্তা করুন দেশের এই লক্ষ লক্ষ পথ শিশুকে যদি শিক্ষিত করে জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যেতো তাহলে দেশ কতোটা এগিয়ে যেতো। এরা জনসংখ্যা থেকে জনশক্তিতে পরিণত হোতো। দেশের উন্নয়নে এরাও ভূমিকা রাখতে পারতো। সেই সাথে তাদের নিজেদের জীবন মানেরও উন্নয়ন হোতো। কিন্তু তাদের জন্য আসলে কেউই চিন্তা করেনা। সরকার আসে সরকার যায় তারা সেই পথেই পড়ে রয়। তাদের পুনর্বাসন করার কথা, তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার কথা, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার কথা কেউ বলে না। রাজনীতিবিদেরা বলে তারা নাকি জনসেবা করার জন্য রাজনীতি করতে আসে। তাহলে এই মানুষগুলোর সেবা করবে কারা? যদি জনসেবা করার জন্যই তারা রাজনীতি করতে আসে তাহলে এরা কি জনগণের আওতাভুক্ত না? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ধন্যবাদ

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন ভাই সরকার আসে সরকার যায় তাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। তারা তাদের অবস্থানেই থাকে। আপনার কথাগুলো একেবারে আমার বিবেকে গিয়ে লেগেছে। আমাদের দেশের মন্ত্রীদের ছেলে মেয়েরা যেখানে বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে সেখানে এদের ভাগ্যে সাধারণ খাবার টাও উঠে না। আবার তারাই বলে দেশে দারিদ্রতা নেই অভাব নেই। তাহলে এগুলো কী??

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

রাজনীতিবিদেরা বলে তারা নাকি জনসেবা করার জন্য রাজনীতি করতে আসে।

তারা আসে একমাত্র নিজেদের লাভের আশায়। জনগণদের নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই। যদি তারা জনগণ নিয়ে ভাবতো,তাহলে ঝড়-বৃষ্টি,তীব্র শীতে গৃহহীন মানুষেরা রাস্তায় শুয়ে থাকতো না। তারা শুধুমাত্র মুখে মুখে বলে দেশ তো সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত হয়ে গিয়েছে। প্রকৃত অর্থে আমাদের দেশ জীবনেও উন্নত হবে না। যাইহোক খবরটি জেনে বেশ মর্মাহত হলাম ভাই। এই পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

খুবই খারাপ অবস্থা বাংলাদেশ শিশুশ্রমের। বাংলাদেশের বড় একটা সেক্টরে শিশুশ্রমের আওতাভুক্ত! এই ছোট্র শিশুটি মারা গেল কিন্তু এর দায়ভার কেউ নিবে না! প্রতিদিন এভাবে কতো শিশু মারা যাচ্ছে, কতো শিশু অনাহারে থেকে যাচ্ছে সেটার খরব কেউ রাখে না।

সরকারের নজর শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে।

এটা একদম বাস্তব কথা বলেছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনমানের উন্নয়ন জরুরি। প্রত্যেক শিশুকে জনশক্তিতে পরিণত করা জরুরি। তবেই দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে।