“মানুষ ও কবরস্থান”

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানে মানুষ বাঁচে। এই বেঁচে থাকাটাই এক অদ্ভুত গল্প। কেউ হাসে, কেউ কাঁদে, কেউ স্বপ্ন দেখে আবার কেউ স্বপ্ন ভাঙার শব্দ শোনে। মানুষ নিজের মতো করে জীবনকে সাজায়, প্রেম করে, যুদ্ধ করে, ঈর্ষা করে, আবার ভালোবাসতেও শেখে। কিন্তু শেষ ঠিকানাটা সবার এক, কবরস্থান।

1000058121.jpg

আজিমপুর কবরস্থান,ঢাকা

শহরের বাইরে কিংবা গ্রামের শেষ সীমানায় ছায়াঘেরা গাছপালার মাঝে চুপচাপ পড়ে থাকে সেই জায়গাটা। নাম তার কবরস্থান। এখানে এলে জীবনের আসল মানেটা বোঝা যায়। কত রাজা, কত ফকির, কত সাধু, কত পাপী সবাই মাটির নিচে। কারও কাছে এখানেই মুক্তি, কারও কাছে ভয়।ছোটবেলায় নানারর হাত ধরে কবরস্থানে যেতাম। নানা বলত, “দেখ রে, এখানেই সবার ঘর। যতো দৌড়-ঝাঁপ করিস, শেষ ঠিকানা তো এখানে।” তখন বুঝতাম না কথার মানে। বড় হয়ে বুঝলাম, জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য এখানেই লুকিয়ে।

কবরস্থান অনেক কিছু শেখায়। এখানে মানুষের অহংকার থাকে না, থাকে না হিংসা কিংবা প্রতিযোগিতা। সব মানুষকেই এখানে মাটির একচিলতে জায়গা নিতে হয়। জীবনে যে মানুষটা সবার আগে থাকতে চেয়েছে, সে-ও এখানে এসে সবার সমান। আর এই সমান হয়ে যাওয়া মানেই প্রকৃত শান্তি মানুষ যত বড় হোক, যত টাকা-পয়সা করুক, নাম যশ করুক শেষমেশ একটা সাদা কাপড় আর তিন হাত মাটি। এই চিন্তাটা করলেই বুক কেমন হালকা হয়ে যায়। মনে হয়, যা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করি, এত লড়াই করি, সব তো একদিন মাটির নিচে চাপা পড়বে।

জীবন খুবই ক্ষণিকের। এই ক্ষণিক সময়টায় কেউ কারও জন্য সময় দেয় না। অথচ মৃত্যুর পর সবাই ফুল নিয়ে কবরস্থানে আসে। তখন আর শোনার কেউ থাকে না। তাই মানুষ থাকতে মানুষকে ভালোবাসা উচিত। মনের কথা বলা উচিত। ক্ষমা চাওয়া উচিত।কবরস্থান শুধু মরা মানুষের জায়গা নয়। এটা জীবিতদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, জীবনের আসল মানে কী। তাই সময় থাকতে জীবনকে বুঝে নিতে হয়। কারণ, একদিন এই মাটির নিচেই সবাই মিলেমিশে এক হয়ে যাবে।

1000058122.jpg

আজ যখন নিউমার্কেটের কাজ শেষে সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে আজিপুর কবরস্থানের ভেতরে ঢুকলাম, তখন চারপাশের নিস্তব্ধতা আর ঝিম ধরা বাতাস যেন ভেতরের অনুভবগুলোকে জাগিয়ে দিল। কবরের পাথরে খোদাই করা নামগুলো, শুকনো পাতার মচমচে শব্দে সব কিছু মিলিয়ে মনে হলো, জীবন আসলে কতো ক্ষণস্থায়ী। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, আর দেরি নয়। বাসায় ফিরে আমার তৈরি করে রাখা ফটোগ্রাফি পোস্ট বাদ দিয়ে আজকের এই ভিন্ন রকম অনুভূতি লেখাটাই শুরু করলাম।আসলে কবরস্থান আমাদের শেখায়, জীবন বেশি দিনের না।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"মানুষ ও কবরস্থান"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 last month 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

এই লেখার সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা হলো—"মানুষ থাকতে মানুষকে ভালোবাসা উচিত"। সত্যিই, আমরা যতদিন বেঁচে আছি, ততদিনই একে অপরকে বুঝতে, ক্ষমা করতে ও ভালোবাসতে পারি। মৃত্যুর পর কোনো ফুল, কান্না কিংবা অনুশোচনাই আর কাউকে স্পর্শ করে না।