"কলকি আইসক্রিম- শৈশবের মিষ্টি স্মৃতির স্বাদ"
নিশ্চয়ই সবার মনে আছে কলকি আইসক্রিমের কথা! কলকি আইসক্রিম যেন শৈশবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাদা-কালো টিভির যুগে, গরমের দুপুরে কিংবা বিকেলের আড্ডায় কলকি আইসক্রিমের ঠান্ডা মিষ্টি স্বাদ আমাদের জীবনে এক অন্যরকম আনন্দ এনে দিত। গ্রামের মেঠোপথে সাইকেলের ঘণ্টি বাজিয়ে আইসক্রিমওয়ালা যখন আসত, তখন ছেলেবেলার সেই খুশি ছিল দেখার মতো। আমাদের শৈশবের সহজ আনন্দ আর স্মৃতির গন্ধ মিশে আছে এই আইসক্রিমের প্রতিটি ফোঁটায়। আজকের ব্লগে আমি, ফয়সাল আহমেদ, আপনাদের নিয়ে যাব সেই স্মৃতিমাখা দিনগুলোর দিকে। থাকুন আমার সাথে, আর মনে করুন আপনার শৈশবের প্রিয় কলকি আইসক্রিমের কথা...
কিছুদিন আগে এমনই একটি ছোট্ট মেলায় গিয়েছিলাম। গ্রামের মেলা মানেই চঞ্চলতায় ভরা প্রাণবন্ত পরিবেশ। চারদিকে মানুষের ভিড়, ছোট ছোট দোকানের পসরা, শিশুদের খেলনা কেনার তাড়াহুড়ো,এসব মিলিয়ে মেলার পরিবেশ যেন মনটা একেবারে ভরে দেয়। তবে এই মেলার এক কোণায় যা দেখলাম, তা আমাকে এক মুহূর্তে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। একটি ভ্যানে করে এক ব্যক্তি কলকি আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন।
কলকি আইসক্রিমের প্রতি দুর্বলতা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন গ্রীষ্মের দুপুরে কিংবা স্কুল থেকে ফেরার পথে কলকি আইসক্রিমের জন্য কতই না অপেক্ষা করতাম! ছোট ছোট কলকির ঠাণ্ডা মিষ্টি স্বাদ যেন গরমের সমস্ত ক্লান্তি এক মুহূর্তে দূর করে দিত। তাই এই মেলায় কলকি আইসক্রিম দেখতে পেয়ে আমি এক মুহূর্তও দেরি করলাম না। ভ্যানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, “একটা কলকি দিন তো।”অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, এখনো প্রতিটি কলকি আইসক্রিমের দাম মাত্র ৫ টাকা। ভাবা যায়! এই যুগে যেখানে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া, সেখানে কলকি আইসক্রিমের দাম এখনো ৫ টাকায় আটকে আছে। এটি যেন ছোটবেলার সেই সরল সময়ের একটি টুকরো, যা এখনো টিকে আছে।
লোকটি শুধু কলকি আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন না, সাথে ছিল দুই রকমের শরবতও। এক ধরনের শরবত নরমাল, যার দাম ১০ টাকা, আর অন্যটি স্পেশাল শরবত, যার দাম ২০ টাকা। শরবতের গন্ধ এতটা টানছিল যে ভাবলাম, এক গ্লাস স্পেশাল শরবতও নিয়ে দেখি। দোকানদার নিজ হাতে স্পেশাল শরবতটি বানালেন। তার মধ্যে ছিল লেবুর রস, একটু মিষ্টি, আর হয়তো পেপের বিচি, যা শরবতটিকে অন্যরকম মজাদার করে তুলেছিল। শরবতের প্রতিটি চুমুক যেন মেলার সেই আনন্দময় পরিবেশকে আরও উপভোগ্য করে তুলছিল।
কলকি আইসক্রিমের কথা উঠলেই শৈশবের এক মধুর স্মৃতির ঝাঁপি খুলে যায়। আমাদের ছোটবেলার সরল আনন্দের অন্যতম অংশ ছিল এই আইসক্রিম। বাড়ির সামনে, স্কুলের গেটের কাছে কিংবা বাজারের কোণে আইসক্রিমওয়ালার ঘণ্টাধ্বনি শোনা মাত্রই আমরা দৌড়ে যেতাম। তার কাঠের বাক্স থেকে যখন রঙিন কলকি বের হতো, সেই মুহূর্তটি যেন স্বর্গীয় আনন্দ বয়ে আনত। মাত্র ৫ টাকায় ঠাণ্ডা, মিষ্টি, আর রঙিন এই আইসক্রিমের স্বাদ ছিল আমাদের ছোটবেলার বড় আকর্ষণ।
বর্তমান সময়ে যখন ফাস্টফুড আর নামিদামি ব্র্যান্ডের আইসক্রিম বাজার দখল করেছে, তখন কলকি আইসক্রিম প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে, সম্প্রতি একটি গ্রামীণ মেলায় এই আইসক্রিম দেখে মনে হলো, ছোটবেলার সেই আনন্দ আজও অনেক মানুষের অন্তরে জীবন্ত। মেলায় বহু মানুষের মুখে এই আইসক্রিমের মিষ্টি স্বাদ আর শিশুদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হলো, এই আইসক্রিমের আবেদন আজও অক্ষত।আইসক্রিম বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, “গ্রামের মেলাগুলোতে এখনো এই আইসক্রিমের চাহিদা আছে। এটি শুধু খাবার নয়, শৈশবের স্মৃতি বহন করে।” তার এই কথায় বুঝলাম, কলকি আইসক্রিম আসলে একটি অনুভূতি, যা আমাদের সরল দিনগুলোর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
মেলার উচ্ছল পরিবেশ, মানুষের হাসি, আর কলকি আইসক্রিমের মিষ্টি স্বাদ,সবকিছু যেন এক মুহূর্তে শৈশবের সরল আনন্দ ফিরিয়ে নিয়ে এলো। এই ছোট্ট মেলায় এই আইসক্রিমের পুনরাবিষ্কার যেন শৈশবের এক হারিয়ে যাওয়া আনন্দের উৎসকে আবার খুঁজে পাওয়ার মতো। তাই বলি, সুযোগ পেলে গ্রামীণ মেলায় ঘুরে আসুন। হয়তো আপনিও ফিরে পাবেন আপনার শৈশবের সেই সরল আনন্দ।
গ্রামীণ মেলার এই ছোট্ট অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল এক বিশেষ মুহূর্ত। এই মেলার কলকি আইসক্রিম শুধু একটি সাধারণ আইসক্রিম নয়, এটি আমার শৈশবের এক অমূল্য স্মৃতি। আশা করি, আপনাদেরও কলকি আইসক্রিমের প্রতি ভালোবাসা আছে। যারা অনেকদিন কলকি আইসক্রিম খাননি, তাদের বলব, সুযোগ হলে একবার গ্রামীণ মেলায় ঘুরে আসুন। হয়তো আপনিও খুঁজে পাবেন শৈশবের সেই সরল আনন্দ।আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করছি।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "কলকি আইসক্রিম- শৈশবের মিষ্টি স্মৃতির স্বাদ" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ - বাংলাদেশ |
X-Promotion
এই ধরনের আইসক্রিম গুলো দেখলেই শৈশবের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। আমি এখনো এই আইসক্রিম গুলো দেখলে খেয়ে নেই। আমাদের এখানে স্কুলের সামনে বেশিরভাগ পাওয়া যায়। আর আমাদের এখানে সবাই মালাই আইসক্রিম বলে। সত্যি ভাইয়া আজ আপনার পোষ্টটি পড়ে ছেলেবেলার এই আইসক্রিম গুলোর মাঝে হারিয়ে গিয়েছি।
কলকি আইসক্রিম আমার বেশ পছন্দের। তবে এখন আর এগুলো তেমন একটা দেখাও যায় না। আপনি মেলায় গিয়ে খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন। সেই সাথে কলকি আইসক্রিম খেয়েছেন। এগুলো দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আপনার মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন।ছোটবেলায় এই কলকি আইসক্রিমের জন্য অনেক কান্না করেছিলাম খাওয়ার জন্য।তবে আমি জানতাম না যে পুরো আইসক্রিম টি খাওয়া যায়।যাইহোক এটা আমার অনেক পছন্দের একটি আইসক্রিম। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আমাদের এখানে এই আইসক্রিমকে বলা হয় কুলফি আইসক্রিম। তবে যাই হোক আপনি কিন্তু একদম ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন একটি পোষ্টের মধ্যে দিয়ে। অনেক ভালো লাগলো চমৎকার এই পোস্টটি দেখে। অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন।
হ্যাঁ ভাই বর্তমান বাজারে ফাস্টফুড আর্ট নামেদামি ব্র্যান্ডের আইসক্রিম আগেকার সেই আইসক্রিম গুলোকে যেন হারিয়ে দিচ্ছে। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের আইসক্রিম হলেও আগেকার আইসক্রিম গুলো আমাদের অতীতের সাথে মধুর স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আমিও অনেক বেশি পছন্দ করতাম এই আইসক্রিম। এটা কেন জানি আমার কাছে বেশি ভালো লাগতো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর স্মৃতি স্মরণ করার জন্য।
কি অসাধারণ ভাবে আপনি আপনার ছোটবেলার স্মৃতিকে গ্রামের মেলায় গিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আসলেই আমিও ছোটবেলায় কুলফি আইসক্রিম খেতাম আপনার স্মৃতিচারণ গল্প পড়ে আমার নিজের ছোটবেলাকে মনে করলাম। আসলে এটা আমাদের সবারই ছোটবেলার স্মৃতি। বর্তমানে আসলে এটা পাওয়া যায় না। আপনার উপস্থাপনের ধরনটি আমার বেশি অসাধারণ লেগেছে।
আপনার পোস্ট দেখে মনে পড়ে গেলো আর সেই ছোটবেলার কুলফি খাওয়ার কথা। ছোটবেলাটা কতই না মধুর ছিল সেই সময় তো সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। তারপরও কিছু স্মৃতি সামনে আসলে সত্যিই অনেক ভালো লাগে।
আপনার পোস্ট টা পড়ে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল ভাই। আহ কী ছিল সেই দিনগুলো। এই আইসক্রিম গুলো কিন্তু খুব যে সুস্বাদু সেটা না। কিন্তু এটার সাথে আমাদের ছোটবেলার অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে আছে। যদিও এখন দেখা যায় খুবই কম। সুন্দর ছিল আপনার লেখাটা।