আমার ঘুড়ি
হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আসেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। ঈদের ছুটিতে আমি এখন বাড়িতে। গতকাল সারাদিন একটু ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কেটেছে। অনেকদিন পর আজকে আমাদের বাড়ির পাশের মাঠের দিকে একটু হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম। ঢাকা হল যান্ত্রিক শহর, সেখান থেকে এসে এমন নির্মল সবুজ প্রকৃতির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার আনন্দটাও বিশাল।
হঠাৎই ছোটবেলায় ঘুরি উড়ানোর দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ল। স্কুল থেকে এসে বাগানে চলে যেতাম ঘুড়ি বানাতে। প্রায় প্রত্যেক দিনই একটা করে ঘুড়ি বানাইতাম। ঘুড়ির নাম ছিল চিলে। এটা বানানো খুবই সহজ ছিল। একটা স্কয়ার সাইজের পেপার কেটে নিয়ে মাঝখান দিয়ে একটি শলা আর রংধনুর মতন বাঁকিয়ে আর একটা। এরপর বওলা গাছের আঠা দিয়ে পট্রি মেরে দিতাম। ব্যাস হয়ে গেল একটা ঘুড়ি। ওই সময় দুই টাকা করে টুটার সুতো পাওয়া যেত। ওটা একটা করে কিনে নিয়ে আসতাম আর একটা করে ঘুড়ি উড়িয়ে দিতাম । ওই ঘুড়ি আবার সুতো গুছিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। ওটা ছেড়েই দিতাম।
মাঝেমধ্যে একটু বড় সাইজের ঘুড়ি বানাতাম। সেগুলো উড়াতাম লাইলনের সুতো দিয়ে। একটা লাটাই বানিয়ে রাখতাম সেটাতে বেশ কয়েক তুলা সুতো কিনে নিয়ে এসে পেচিয়ে রাখতাম। কোন বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো মিচ যেত না। মাঝেমধ্যে একজন আরেকজনের ঘুড়ি কেটে দিতাম। আমরা যে মাঠে ঘুড়ি উড়তাম ওই মাঠ ছিল অনেক বড়। মাঝে মধ্যে আমরা ইচ্ছে করে ঘুড়ি কেটে দিয়ে ঘুড়ির পিছনে দৌড়াতাম। অল্প সুতো ছাড়া থাকলে পেয়ে যেতাম মাঠের মধ্যেই। অনেক বেশি সুতো থাকলে অনেক দূরে চলে যেত, সেগুলো আর পেতাম না। আমার এক ভাই ছিল নাম মনিরুল। ও প্রত্যেকদিন একটা করে টুটার সুতো কিনে নিয়ে আসতো আর একেবারে সব সুতো ছেড়ে উড়িয়ে দিত। এটাই ছিল ওর নেশা।
আমাদের মধ্যে যারা সিনিয়র ছিল তাদের আবার বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি ছিল। কইরো, ঢাকুস, সাপ, ফুল, ডোল ইত্যাদি। বিকেলবেলা আকাশটা ঘুড়ির বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে থাকতো। আমার এক চাচা ছিল উনি খুব ভালো ঘুড়ি বানাতে পারতো। উনার কাছ থেকে আমরা ভালো ঘুড়িগুলো বানিয়ে নিতাম। যেমন উনি আমার একটা ঢাকুস ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছিল। সেটার মাথায় আমি আবার আলো লাগিয়েছিলাম। রাত্রে যখন ব্যাটারির সাথে বাল্বের কানেকশন দিয়ে উড়িয়ে দিতাম নিচ থেকে দেখতে দারুন লাগতো। রাতের অন্ধকারে ঘুড়ি দেখা যেত না, উপর থেকে শুধুমাত্র ওই আলোই দেখা যেত। আর ঘুড়ির মাথায় ব্যত বাঁধা থাকতো। যে কারণে বাতাস বেশি হলে বাঁজতো।
এই বড় ঘুড়ি গুলোর জন্য আবার সুতো লাগতো ভালো মানের। কট সুতো পাওয়া যেত বাজারে। আমি পাঁচ তোলা ছয় তোলা কিনে নিয়ে আসতাম একবারে। সেগুলো লাটাইয়ে পেচিয়ে রাখতাম। টুটার সুতো ব্যবহার করতাম চিলে ঘুড়ির জন্য, লায়লনের সুতো ব্যবহার করতাম বড় চিলে ঘুড়ির জন্য আর কট সুতে ব্যবহার করতাম ঢাকুস ঘুড়ির জন্য। কত ঘুড়ি হারিয়েছি, কতবার সুতো কিনেছি এর কোন হিসাব নেই। সে এক দারুণ মজার স্মৃতি।
গত তিন বছর আগে আমি শেষ ঘুড়ি উড়িয়েছি। সেবার করোনার সময় সবাই বাড়িতেই ছিলাম। সেই সুযোগে আমরা কয়েকটা ঘুড়ি বানিয়েছিলাম। আমি নিজের হাতেই বানিয়েছিলাম দুটো ফেন্সি ঘুড়ি। সেবার ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম সত্যি। আবারো ইচ্ছে হয় ছোটবেলার মতন মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াই। সেটা তো আর সম্ভব না, কিন্তু এখন যাদের ঘুড়ি উড়াতে দেখি শুধু মনে মনে ভাবি তোরা এখন এই সময়টা এনজয় করে নে। তোরাও এক সময় এই দিনগুলোকে মিস করবি।
যাই হোক আমার ছোটবেলার ঘুড়ি ওড়ানোর কিছু ছোট ছোট মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। গ্রামে যে কদিন আছি এরকম আমার কিছু স্মৃতির গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করে ব্লকচেইনে রেখে দিব। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে ইন শাহ আল্লাহ পরবর্তী কোন পোস্টে। আল্লাহ হাফেজ।
নোট: এই ছবিগুলো হয়তো আমার পূর্বের কোন পোস্টে আপলোড দিয়ে থাকতে পারি আমার সঠিক খেয়াল নেই
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

আমার ছোটবেলায় এভাবে ঘুড়ি উড়ানোর সৌভাগ্য হয় নাই। তোমার এই ঘুড়ি উড়ানোর অনূভুতি গুলা আমার খুব ভালো লেগেছে।যদিও আমি ঘুড়ি উড়াইতে পারিনা কিন্তু ঐ বিশাল আকাশের মাঝে ঘুড়ি উড়তে দেখতে খুবই ভালো লাগে।
আমারও ঘুড়ি উড়তে দেখতে ভালো লাগে।
যাক, তোমার ফার্স্ট কমেন্ট আমার পোস্টে 😍
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
যদিও ঘুড়ি উড়ানো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেদের খেলা, তবুও ছেলেবেলা এই ঘুড়ি নিয়ে অনেক স্মৃতি আমারও আছে। আমার ছোট ভাই ও আপনার মত স্কুল থেকে ফিরে নানা রকমের আর নানা নামের ঘুড়ি বানাত। কি যে দুষ্টু ছিল। আপনার ছেলেবেলার রংবেরঙের ঘুড়ির নাম শুনে মাথাটা হঠাৎ ঘুরে গেল। কি অদ্ভুত নাম। একথা সত্য যে এখন যারা মনের সুখে তাদের ছেলেবেলা ইনজয় করছে, তারাও একদিন এই দিনগুলোর জন্য আফসোস করবে।
একদম ঠিক বলেছেন আপু। সত্যি এই দিনগুলো স্মৃতির পাতায় রয়ে যায়।
সত্যিই ভাইয়া ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যে ছিল এক অনাবিল আনন্দ। ঘুড়ি উড়ানো সম্পর্কে লেখা আপনার এ পোস্টটি পড়ে আমার ছোটবেলার ঘুড়ি উড়ানোর কথা মনে পড়ে গেল। আমার আজও মনে আছে শেষবার ২০১৪ সালে ঘুড়ি উড়িয়েছিলাম। তারপরে আর ঘুড়ি উড়ানোর সময় পায়নি, যদিও এখনো ইচ্ছা আছে। তবে এটা সত্য যে, ঘুড়ির মধ্যে চিলে ঘুড়ি তৈরি করাটা সবচেয়ে সহজ। আপনি নিজের হাতেই দুইটি ফেন্সি ঘুড়ি বানিয়েছিলেন এটা জেনে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে আপনি নিঃসন্দেহে ঘুড়ি তৈরি করতে বেশ দক্ষ ছিলেন।
সত্যি ভাই। দিনগুলো ছিলো অনাবিল আনন্দের।
আমিও উড়িয়েছি ঘুড়ি বন্ধুরা মিলে। যেহেতু কলোনিতে বড় হয়েছি এবং বড় মাঠ ছিল। তাই ঘুড়ি উড়ানোর সুযোগও ছিল। তবে আপনার মতো এতো ঘুড়ি বানাতে পারতাম না । কেনা ঘুড়িই উড়াতাম। আপনার লেখা পড়ে আমিও ছোট বেলায় ফিরে গেলাম। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কিছু স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
আশা করি ভাইয়া ভালো আছেন? ঘড়ি দেখে শৈশবের কথা মনে পড়ে গেলো। শৈশবে কত সোনালি মুহূর্ত কাটিয়েছে ঘড়ি উড়িয়ে। ঘড়ি উড়ানোর অনুভূতি গুলো সত্যি খুব অসাধারণ। আসলে ঘড়ি উড়ানোর মাঝে অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায় । ধন্যবাদ ভাইয়া, ভালো থাকবেন।
ভাই আপনার ঘুড়ি ওড়ানো দেখে সেই ছোট কালের কথা মনে পড়ে গেল। কত যে মাঠে ঘুড়ি উড়িয়েছি তা ঠিক নেই। গ্রামে যে আনন্দ ভাই সেই আনন্দটা ঢাকা শহরে কই পাবেন। নির্মল বাতাস সবুজ শ্যামল মাঠ আর মাঠের মধ্যে সবাই মিলে ঘড়ি ওড়ানোর মুহূর্তটা অন্যরকম। তবে একটা বিষয় ভাই বওড়া গাছ কিন্তু আগের মত আর পাওয়া যায় না। পাকা বওড়া আমার অনেক খেয়েছি। অনেক সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন ভাই এবং সেটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইল।
বাহ দারুন তো। আমরাও পাকাগুলো খেতাম বেশ মিষ্টি লাগতো খেতে।
হাহাহা,😋 সত্যি খেতে অনেক মিষ্টি লাগতো ভাই।
ওয়াও ভাই আপনার ঘড়ি দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কয়েকদিন আগে আমি একটি ঘড়ি বানিয়ে পোস্ট করেছি। আপনার ঘড়ি দেখছে অনেক উপরে উঠেছে ভাই। এর আগে আমি অনেক ঘড়ি বানিয়েছি কিন্তু আপনার ঘড়ি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি ধন্যবাদ মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার ঘুড়ি ওড়ানোর মুহূর্ত গুলো বেশ সুন্দর ছিল।স্কুল থেকে এসে বাড়ির পাশে মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দই হয়তো আলাদা।তারপরে আবার নিজের হাতে তৈরি করতেন ঘুড়ি।সবাই বড় হলে শৈশব মিস করে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।