রংপুর কাচ্চি ডাইনে একটি দুপুরের গল্প ।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে রংপুর কাচ্চি ডাইনে একটি দুপুরের গল্পের অনুভূতি শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

একটি স্বচ্ছ রোদেলা দুপুর, হালকা বাতাস আর ছুটির দিনের নিরবতা।সবকিছু মিলিয়ে মনটা তখন কিছুটা মুক্তির খোঁজে ছিল। শহরের ব্যস্ততার মাঝেও কোথাও একটু প্রশান্তির সন্ধান যেন সবসময়ই থাকে। ঠিক তখনই পা রাখলাম রংপুর শহরের পরিচিত এক নাম, কাচ্চি ডাইন-এ। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়ল রেস্টুরেন্টের লাল ব্যানার আর পাশে চকচকে গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখা কিছু সুস্বাদু খাবারের পোস্টার। প্রবেশদ্বারে পা রাখতেই যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলাম। শীতল এসির পরশ, ঝকঝকে মেঝে, সোনালি আভায় সাজানো দেয়াল আর শান্ত, পরিপাটি পরিবেশ।

টেবিলে বসে চারপাশটা একটু দেখছিলাম। সাজসজ্জার দিক থেকে একদম পরিপাটি ও আধুনিক। বসার জায়গাগুলো আরামদায়ক, আলো-ছায়ার খেলা যেন ছবির মতো।চোখে পড়ে ছিমছাম পরিবেশে কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খাবার উপভোগ করছে। কোথাও কোনো চিৎকার নেই, কোলাহল নেই, কেবল একরাশ আরাম আর এক চিলতে ভালোবাসার গন্ধ। কিছুটা সময় চুপচাপ বসে থাকার পর, মেন্যু হাতে নিতেই বুঝলাম এখানকার বিশেষত্ব কাচ্চি, তবে পাশে আরও কিছু চমকপ্রদ আইটেমও আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম সবচেয়ে পরিচিতটা দিয়েই শুরু করি।এক প্লেট বাসমতি কাচ্চি, সঙ্গে বরহানি আর ডেজার্টে ফিরননি অর্ডার দিলাম।আমি বসে ছিলাম জানালার পাশে। অপেক্ষা করতে করতে তাকিয়ে থাকি বাইরে । জাহাজ কোম্পানি মোড়ের ব্যস্ত রাস্তাটা এখান থেকেও দেখা যায়, তবে কাচের ওপারে বসে তা যেন আর কোলাহল মনে হয় না।

খাবার এল বেশ যত্ন করে সাজানো ট্রেতে। ধোঁয়া ওঠা বাসমতি চালের সুগন্ধে মন ভরে গেল। মাংসটা ছিলো নরম, ঝরঝরে ভাতের সঙ্গে দারুণভাবে মিশে গেছে। প্রতিটি কামড় যেন ছিলো একেকটি অভিজ্ঞতা। বরহানির টক-মিষ্টি স্বাদ মুখে দিলে আরও প্রশান্তি। শেষপর্যায়ে ফিরনির হালকা মিষ্টতা যেন দুপুরটাকে শেষ করল এক মায়ার আবরণে।ঘণ্টাখানেকের সেই দুপুর যেন কেটে গেল চোখের পলকে। খাওয়ার মাঝেও খেয়াল করলাম, ওয়েটাররা বেশ আন্তরিকভাবে সবার পাশে গিয়ে সাহায্য করছে। কারও কোনো অনুরোধ পেলে বিরক্তি নেই, বরং হাসিমুখেই সাড়া দিচ্ছে। এমন পরিবেশে শুধু খেতে নয়, সময় কাটাতেও ভালো লাগে।

খাবার শেষে একটু দাঁড়িয়ে রেস্টুরেন্টের দেয়ালে টাঙানো পোস্টারগুলো দেখছিলাম। ‘Roast, Rezala & Kacchi The Perfect Combo’ লেখা একটাতে চোখ আটকে গেল। সত্যি কথা বলতে, এই জায়গাটার নামটা যেমনই হোক, খাবারের স্বাদ ও পরিবেশ একে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। সেবার মান, সাজসজ্জা, আর খাবারের মান ।সব মিলিয়ে এটি শুধু একটি দুপুরের খাবার নয়, বরং এক রকম মানসিক প্রশান্তি।হয়তো শহরের সব রেস্টুরেন্টেই আজকাল কাচ্চি পাওয়া যায়, কিন্তু কাচ্চি ডাইনের কাচ্চিতে যে একরকম ঘরের স্বাদ আছে ,সেটা অনুভব না করলে বোঝা যাবে না। এখানে একদম ঘরোয়া আমেজে খেতে পারা যায়, অথচ পরিবেশনটা রীতিমতো রেস্টুরেন্ট স্ট্যান্ডার্ডে।সেদিনের সেই দুপুর এখনো মনে পড়ে একটা নির্ভার সময়, কিছু মনের মতো স্বাদ, আর নিজের সঙ্গে নিজের কিছুটা একান্ত মুহূর্ত।

একটি দুপুর যে এতোটা স্মরণীয় হতে পারে, তা হয়তো ভাবিনি। কাচ্চি ডাইনে কাটানো সময়টুকু শুধু একটি খাবারের অভিজ্ঞতা ছিল না।ছিলো একটুখানি আরাম, একটু নিরবতা, আর অনেকখানি তৃপ্তি। খাবারের স্বাদ, রেস্টুরেন্টের পরিবেশ, আর আত্মিক প্রশান্তি ।সবকিছু মিলিয়ে মনে হলো যেন শহরের কোলাহলের মাঝেও শান্তির একটা দ্বীপ খুঁজে পেলাম। এমন সময় বারবার আসে না, কিন্তু একবার এলেই মনের ভেতরে রয়ে যায় দীর্ঘদিন। রংপুরে থাকলে কিংবা ভ্রমণে গিয়ে একবার হলেও কাচ্চি ডাইনে সময় কাটিয়ে আসার মতো একটি জায়গা এটি যেখানে খাবার নয়, স্মৃতিই মুখে লেগে থাকে সবচেয়ে বেশি।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।