সদ্ব্যবহার!(Utilisation!)
![]() |
---|
একটি নরম মাটিকে যখন নিজের আকার নিজেকে ধারণ করতে হয় কুমোরের সহযোগিতা ছাড়া, অথবা অর্ধেক তৈরির পরে যখন কুমোর কোনো কারণে তার তৈরী পাত্রটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হন না;
এর মাঝেই এসে যায় সুবিশাল ঝড়, তখন ঐ অসম্পূর্ণ কাঁচা মাটির পাত্রটি নিজেকে উড়ে আসা খড় কুটোর আড়ালে লুকিয়ে রাখে!
কারণ একটাই, প্রকৃতির ঝঞ্ঝার সাথে মোকাবিলা করে আগামীতে নিজের অর্জিত শিক্ষা তথা কর্মের দ্বারা কোনো না কোনো ব্যক্তির কাজে যেন নিজেকে সমর্পিত করতে পারে।
শুরু থেকেই তাকে টিকে থাকার লড়াইটা একলাই করতে হয়, যেহেতু কুমোর অসময়ে তার হাত ছেড়ে চলে যায়!
সেই কারণেই তাকে একলাই লড়াইটা লড়ে যেতে হয় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে!
তাই যারা খুব যত্নে বিভিন্ন কুমোরের হাতে তৈরি হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই সময়ের সাথে তাদের বাজার দর বৃদ্ধি পায়, সকল ক্রেতার নজর কাড়ে দেখতে সুন্দর এবং নিখুঁত আকারের পাত্রের দিকে!
ভিড়ের আড়ালে থাকা অদ্ভুত আকারের পাত্রটি কখনও মন খারাপ করে, আবার কখনও নিজেকে বোঝায় তার প্রয়োজন নিশ্চই একদিন কেউ না কেউ অনুভব করবে।
সময় বদলায়, সাথে বদলে যায় মানুষের আধুনিক জিনিসের প্রতি ঝোঁক!
একদিন এক মহিলা যার একটি নামকরা রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে সে ঠিক করে গতানুগতিক পাত্রের পরিবর্তে সে একটু অন্য রকমের পাত্র ব্যবহার করবেন তার রেস্টুরেন্টে!
সেইমত সে পৌঁছে যায় কুমোর এর কাছে, সে তার তৈরী সমস্ত পাত্র এক এক করে মহিলাকে দেখাতে থাকে, কিন্তু মহিলার কোনোটাই পছন্দ হয়না! কারণ?
সবগুলোই গতানুগতিক! ব্যতিক্রমী কিছুই নজরে না পড়ায় হতাশ হয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, ঠিক সেই সময় তার নজরে পড়ে আড়ালে পড়ে থাকা একটি পাত্রের উপরে, এক্ মুহূর্ত দাড়িয়ে পড়ে কুমরকে পাত্রটি বের করতে বলেন মহিলা।


কুমোর জানায়, ওই পাত্রটি কেউ কেনে না, ওটির আকৃতি ভিন্ন এবং অসম্পূর্ণ!
মহিলা তবুও পাত্রটি বের করতে বলেন, এরপর আর কি? মহিলা পাত্রটি দেখে ওই একই রকম দেখতে প্রচুর পাত্রের অর্ডার দিয়ে চলে যায়।
এরপর, কুমোর পড়ে বিপদে! কারণ পাত্রটি সে তৈরি করেনি, অনেক পাত্রের মাঝে নরম অর্ধ নির্মিত পাত্র সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের আকার ধারণ করেছে;
এদিকে এতবড় উপার্জনের সুযোগ হাতছাড়া করবার উপায় নেই!
দুঃশ্চিন্তায় রাত্রে ঘুমোতে পারে না কুমোর, এটাই তার জীবিকা! হঠাৎ করে পাশ থেকে পাত্রটি বলে ওঠে, আমাকে অযোগ্য ভেবে চিরদিন তুমি আমায় অবজ্ঞা করেছো, কিন্তু দেখার সঠিক দৃষ্টি দিয়ে আজকে একজন আমাকে খুঁজে বের করেছে, শুধু তাই নয়, আমিও যে ব্যবহারে আসতে পারি সেটা অনুভব করেছে!

যেহেতু, তুমি এতদিন তোমার কাছে আমাকে রেখেছো, সেটি অবজ্ঞা ভরা মন নিয়ে হলেও, তাই আমার লড়াইয়ের গল্প শুনতে শুনতে তুমি কাল পাত্র তৈরি করবে, দেখবে তুমি সফল হবে।
আজকে আপনাদের সাথে একটি গল্প যেটি লিখতে লিখতে আমার সৃষ্টি, সেটি ভাগ করে নিলাম।
যদি মিলিয়ে দেখেন নিজেদের সাথে দেখবেন সজীব তথা নির্জীব উভয় ক্ষেত্রেই সদ্ব্যবহারের অভাবে আমরা অনেক কিছুই হেলায় হারাই সেগুলোর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি না বলে।
তবে, যারা লড়াইটা এই বিশ্বাস নিয়ে চালিয়ে যায় একদিন না একদিন, সৃষ্টিকর্তা তার লড়াইয়ের যোগ্য সম্মান ঠিক দেবেন!
জানবেন, একমাত্র সদ্ব্যবহার এর মূল্যায়ন জীবনের কোনো একটা সময় তারা ঠিক পায়। আমি নিজেও এটা বিশ্বাস করি, আর তার ভিত্তিতেই আজকের এই কাল্পনিক গল্পের সৃষ্টি।
যোগ্যতার সদ্ব্যবহারের জন্য, তার ফলাফলের জন্য, লড়াইটা বোধহয় চালিয়ে যাবার প্রয়োজন আছে।
যাতে একটা সময় কোনো না কোনো চোখ সেই লড়াইয়ের যোগ্য সম্মান দিতে পারেন।
আর কেউ না দিক আমার বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তা নিশ্চই পর্যবেক্ষণ করেন প্রতিদিনের লড়াইটা।
প্রতিটি সৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকে একটি সুপ্ত উদ্দেশ্য যেটি মুষ্টিমেয় মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম, কারণ সেখানেও যোগ্যতার প্রয়োজন।

