Ship of the desert! মরুভূমির জাহাজ!

in Incredible Indiayesterday
1000060252.jpg

আপনারা কতখানি অবাক হন জানিনা, তবে প্রায়শই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভীষণরকম অবাক করে!

এই পৃথিবীতে তাঁর সৃষ্টির প্রতিটি প্রাণের মধ্যে কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে তাকে এই ধরায় পাঠিয়েছেন।
যার যেমন প্রয়োজনীয়তা আছে প্রকৃতিতে তেমনি করে তাকে দিয়েছেন প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকবে অসীম ক্ষমতা।

সৃষ্টির আদি থেকে, অর্থাৎ যখন মানবকুলের চিহ্ন ছিল না এই পৃথিবীতে, তার আগে থেকেই প্রাণীকুলের অবস্থান।

এক্ এক্ পরিবেশে টিকে থাকার এক্ এক্ ক্ষমতা নিয়ে এই ধরায় এদের আগমন।
এরকম একটি প্রাণী যাকে মরুভূমির জাহাজ বলেও আখ্যায়িত করা হয়, তার সহিষ্ণুতা অন্যান্য অনেক প্রাণীর চাইতে অধিক।

মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে কাটা গাছ খেয়ে, প্রকৃতির বালিঝর, উচ্চ তাপমাত্রা সবটাই এদের সয়ে বেঁচে থাকতে হয়, যেখানে জলের আধিক্য একেবারেই নেই।

অথচ, এই প্রাণীদের মানুষ সব রকম ভাবে ব্যবহার করে থাকেন!
মানুষ এই পৃথিবীতে আসার পরে ব্যবহার শব্দটি যথাযথ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
যাক, যে কথায় ছিলাম, এই মরুভূমির জাহাজ অর্থাৎ উট মরুভূমিতে টিকে থাকতে সক্ষম, তাই মানুষ এদের নিজেদের বাহন হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে এই টুকুতেই ক্ষান্ত হননি তারা!

এদের কেটে খাওয়ার প্রচলন আছে, আর এখানেই আমার সমস্যা!
পৃথিবীর বুকে এত কিছু খাবার থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই মানুষের পেট আর লোভ দুটোকে সংবরণ করানো খুব মুশকিল!

1000060250.jpg

আমার কাছে এই উট মানে সেই সত্যজিৎ রায়ের অনবদ্য সৃষ্টি "সোনার কেল্লা!"
ভারতীয় বাঙালির কাছে খুব পরিচিত ছায়াছবি,
রাজস্থানের জয়সলমের দুর্গ, আমার জন্মের বহু পূর্বের ছবি কিন্তু গোয়েন্দা গল্পের নেশায় বই তথা ছায়াছবিটি দেখে আমি মুগ্ধ।

1000060251.jpg

গ্রন্থের রচয়িতা যখন পরিচালক তখন সেই সৃষ্টিতে ত্রুটি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
এরকম একটি গল্প যেখানে মুকুল নামের একটি শিশু রাজস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সোনার কেল্লা আছে বলে দাবি করে, সঙ্গে ছিলেন তার চিকিৎসক।

এরপর, তার কিডন্যাপ! যথারীতি, পরের ঘটনায় আবির্ভাব মহান ফেলুদা(সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি গোয়েন্দা চরিত্র)আর তোপসে তার সহকারী ;
আর সেই অতি প্রিয় চরিত্র জটায়ু ওরফে সন্তোষ দত্তের উটে চড়ার দৃশ্য এখনও হাসির খোরাক জোগায়।
উট বাবলা গাছের পাতা খেতে থাকে, এখন এই গেছে থাকে প্রচুর কাঁটা।
লালমোহন বাবু ওরফে জিটায়ুর জিজ্ঞাসা, "উট কি কাঁটা বেছে খায়?"।
অর্থাৎ তিনি মানুষের মাছের কাঁটা বেছে খাওয়ার সাথে এদের সাদৃশ্য খুঁজে বের করবার প্রয়াস করছিলেন।

তবে, এটাও সেই ছায়াছবি থেকে শিখেছিলাম উটের পিঠে বসার পরে, শরীর কে কিভাবে এগোতে এবং পিছোতে হয়, উট উঠে দাঁড়াবার সাথে সাথে।

1000060249.jpg

যে কথা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। একটি কষ্ট সহিষ্ণু প্রাণী যে বিভিন্ন ভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের রুজির সাধন অথচ চাহিদা নিমিত্ত মাত্র! এদেরকে হত্যা করে নিজের খোরাক না করলেই কি নয়?

আমি খানিক উদ্ভট খেয়ালী, তাই মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি কোনোদিন এই পশুরা বিদ্রোহ করে বসে মানুষের বিরুদ্ধে? আর একে একে নিশ্চিহ্ন করে দেয় মানবকুল?
কারণ, তাদের দাবি তো আমাদের চাইতে অনেক অধিক এই ধরায়, সেদিন কি এরাও কেটে খাবে মানুষ?

সামান্য চাহিদা কিছু পশুর, কাজেই এদের নিজেদের জগতে বাঁচতে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এরা মানব জীবনে হস্তক্ষেপ করতে কখনোই আসে না, অথচ মানুষ এমন কোনো বিষয় নেই এই প্রকৃতির মাঝে যেখানে হস্তক্ষেপ করে না!

বুদ্ধিজীবী মানে তার যথেচ্ছ প্রয়োগ নয়, বুদ্ধিজীবী মানে বুদ্ধিকে উন্নতির কাজে ব্যবহার করে পৃথিবীকে সকলের সমানাধিকার দিয়ে বসবাস যোগ্য করে তোলা!

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় বসে যত সহজে নিজের নিজের ইচ্ছেপূর্তি করা সম্ভব, মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে দাড়িয়ে একঘন্টা জল ছাড়া, খাবার ছাড়া অতিবাহিত করলে হয়তো বুদ্ধিজীবীদের খানিক চেতনা ফিরলেও ফিরতে পারে! তবে, সেখানেও আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে!

আগেও বহুবার লিখেছি, পুনরাবৃত্তি করছি, উপরিউক্ত অভিমত একান্তই নিজস্ব, কাজেই সহমতের প্রত্যাশা ছাড়াই উল্লেখ্য।

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 yesterday 

উটের সাথে আমার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই। ওদের অদ্ভুত দেহগঠন আমার সবসময়ই নজর কেড়েছে। সত্যজিত রায়ের ফেলুদার জন্য আগে অপেক্ষা করতাম। শুধু ফেলুদাই না ,তার প্রফেসর শঙ্কু ,,এমন আরো কোনো সিরিজ ছিল কিনা এই মুহূর্তে অবশ্য মনে পড়ছে না। সত্যজিত রায়ের পুরো সমগ্রই আমার কাছে রয়েছে।
সোনার কেল্লা দেখেছিলাম অনেক আগে। ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনার লেখা পড়ে মনে পরলো।
শুদু উট কেন ,কোনো জীব হত্যাই আমার কাছে ভালো লাগে না।
এটা হয়তো আমি আমার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। তাকেও দেখতাম মাছ খুব কম খেত আর মাংস খেতই না। আমার অবস্থা আরো খারাপ বলা যায়। নিজের অবস্থা দেখে মনে হয়তো আস্তে আস্তে পুরোপুরিই একসময় নিরামিষভোজী হয়ে যাবো।
আমার কাছেও মনে হয় সব জীবের বাঁচার অধিকার রয়েছে। আর এটা হয়তো প্রকৃতিও চায়। আমাদের পশু হত্যার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনও খানিকটা জড়িয়ে রয়েছে।
ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। ভালো থাকবেন সবসময়।

Loading...