মৃত্যুলোক থেকে মুক্ত আরেকটি প্রাণ!

আজকে মনটা অতিরিক্ত ভারাক্রান্ত! বিগত তিন রাত এক্ প্রকার জেগেই কাটছিল, আমার মন, মেজাজ এমনিতেই ভীষণ নিম্নগামী কিছুদিন যাবত!
এই বছরটা যেনো মৃত্যু মিছিল, আর অরাজকতার আদর্শ উদাহরণ!
গতকালের লেখায় পাশের বাড়ির একটি প্রতিবেশীর কথা উল্লেখ করেছিলাম!
আজকেও বিছানা ছেড়েছি সকাল তিনটে বেজে আটান্ন মিনিটে, কাজেই একপ্রকার জেগেই কাটছে দিন এখনও পর্যন্ত।
বৃষ্টির কারণে বিছানার চাদর কিছুতেই ধোবার উপায় ছিল না, তবে মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম, আজকে যেরকম আবহাওয়া থাকুক, সবকিছু কেচে নিতেই হবে।
বিনিদ্র রজনী সহ, কাজের ধকল শারীরিক ক্লান্তি খুব তাড়াতাড়ি বয়ে নিয়ে আসে।
এরপর, সকলের দৈনন্দিন কাজগুলো সেরে, গিজার (geyser) এ জল গরম বসিয়ে, সিলিং ফ্যান পরিষ্কার সহ, বাদবাকি কাজ সেরে নিয়েছিলাম।
যেহেতু, অনেক সকালে উঠেছি, তাই সমস্ত কাজ আর পুজো বেলা বারোটায় শেষ হয়ে গিয়েছিল।
এরপর, ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে, কি মনে করে ঠিক জানিনা, অনেক মাস বাদে আজ মনে হলো, ফেসবুক দেখি!
খুলতেই, দেখলাম আমার শৈশব যে পাড়ায় কেটেছে, সেই পড়ার এক্ দিদি, নিজের মা কে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছে!

প্রথমে বুঝতে পারিনি, কারণ ওই দিদি প্রায়শই গান, কবিতা ইত্যাদি পোস্ট করতেই থাকে।
এরপর, যখন কবিতার শেষ লাইনে পড়লাম, মা পরজন্মে আবার মা হয়েই এসো!
আমার বুকের ভিতর একটা কষ্ট এমনভাবে ভিতরটা নাড়া দিল, সঙ্গে সঙ্গে লগআউট করে, ফোন করলাম জেঠিমার একমাত্র ছেলেকে।
জেঠু জেঠিমার তিন সন্তান, দুই কন্যা আর এক পুত্র সন্তান।
চোখের সামনে তখন আমার সব অন্ধকার হয়ে আসছিল, ছেলের ফোন নম্বরে ডায়াল করতেই ফোন তুলে কিছু জিজ্ঞাসা করবার আগেই, বললো হ্যাঁ সুনিতা! মা, গত পরশু রাতে গত হয়েছেন!
আমার ঘোলাটে চোখ অবাধ্য জল অঝোর ধারায় বইতে শুরু করলো, শুধু বললাম, একটু জানালি না!
আমার অবস্থা দেখে বললো ঝুম্পা দিদির সাথে কথা বল!
জেঠিমার বড় মেয়ে, বিয়ের পর বর্তমানে গোয়ায় থাকে, আমাকে বললো মনা, তুই আয় আমি এসেছি!

সাথে আরো একটি মূল্যবান কথা বললো, দেখবি, এই জেনারেশন যাবার সময় কাউকেই পাওয়া যাবে না।
তারপর আবার নিজের ভাইকে ফোন দিয়ে দিলো, কিন্তু আমার তখন আর গলা থেকে স্বর বের হচ্ছিল না!
আমাকে যেতে বললো, সঙ্গে ছোটো বেলার কথায় আমার বাবার ওদের বাড়ির প্রতি অবদানের স্বীকৃতি করতে ভুললো না!
জেঠু পুলিশে চাকরি করতেন, আমার বাবা গত হবার পরে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন।
লিখে শেষ করা দায়, জেঠু জেঠিমার বাড়িতে আমার শৈশবের স্মৃতি।
মানুষগুলো মনের দিক থেকে কি যে অসাধারণ সেটা না মিশলে লেখনীতে উল্লেখ অসম্ভব!
শেষ জেঠিমাকে দেখেছিলাম আমার ছোট মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে দেখে এসেছিলাম জেঠীমাকে।
অনেক রক্তের সম্পর্কের চাইলে লক্ষ লক্ষ মূল্যবান ছিল এই জেঠু জেঠিমার সাথে আমাদের বাড়ির সম্পর্ক।
এই জেঠুদের তিন ভাই তথা জেঠিমার বাবার বাড়ির সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক ছিল।
জেঠিমার দিদির মেয়ের কাছে আমি এবং দিদি শৈশব থেকে পড়েছি।
একাধিক স্মৃতির পুনরাবৃত্তি করলাম, দিদির সাথে ফোনে।
দিদি জানলেও আমাকে জানায়নি, কারণ ও জানতো আমি কতটা কষ্ট পাবো।
আমার দিদি ঘরে থেকে বড় হয়েছে, আর আমার প্রতিদিন পাড়ার সকলের সাথে খেলাধুলা করে।
অবাধ বিচরণ ছিল জেঠিমার বাড়িতে, দুপুরের খাওয়া হোক, মায়ের মারের হাত থেকে উদ্ধার পেতে নিরাপদ আশ্রয় ছিল এই জেঠিমার বাড়ি।
মানুষ সময়ের সাথে বদলে গেছে, কিন্তু যে শিক্ষা আমরা শৈশবে এই মানুষগুলোর থেকে পেয়েছি, সেগুলো আমৃত্যু পাথেয় হয়ে থাকবে।
এদের সহচর্য্য আমার মায়ের গত হবার পরে অনেকখানি আমাদের দুজনকে আগলে রাখতে সহায়ক ছিল।
জেঠিমার বড় মেয়ে বললো, মায়ের সকলের সাথে উপরে দেখা হবে, কাঁদিস না, বলে নিজেও কেঁদেই ফেলেছিল।
আজকে, আকাশে মেঘ ছিল না বটে, তবে মনের অভ্যন্তর আবিষ্ট হয়ে ছিল ঘনো কালো মেঘে!
ভালো থেকো জেঠিমা, তোমার আত্মার শান্তি কামনা করি।
ইচ্ছে করেই ফেসবুক থেকে ছবি, কিংবা দিদিদের থেকে ছবি চাই নি, আমার মনের মধ্যে জেঠিমার সেই হাসিমুখ অমলিন রাখতে।


SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted from the steemcurator07 account.