বৃষ্টির দিনে পথচলার কিছু টিপস।
বৃষ্টির কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কিনা এটা নিয়ে আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ লাগে। আগে যখন ছেলেদেরকে নিয়ে স্কুলে যেতাম তখন দেখতাম প্রায় প্রতিদিনই বেলা বারোটা থেকে দুইটা /আড়াইটা পর্যন্ত কমবেশি বৃষ্টি হতো আর তিনটার মাঝেই শেষ হয়ে যেত। এত বিরক্তি লাগতো। আমিও বাসায় ঢুকতাম বৃষ্টিও শেষ। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ লাগতো বৃষ্টির সাথে বোধকরি আমার ব্যাক্তিগত শত্রুতা আছে।
আর বৃষ্টি নামা মানেই রাস্তায় জ্যাম লাগা। এমনিতেই স্কুল টাইমে ধানমন্ডির জ্যাম বিখ্যাত তার উপর যদি বৃষ্টি নামে তাহলে তো আর কথাই নেই।তাই এই বৃষ্টির মাঝে ভাইয়ের ছেলে ও আমার ছেলেদেরকে নিয়ে বেশির ভাগ দিনেই হাঁটা ছাড়া আমার কাছে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না ।পরে অবশ্য স্কুলের মেইন বিল্ডিঙে আসার পর এই যন্ত্রনা থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছিলাম কারণ সেটা আমার বাসার কাছেই ছিল।
যদিও বৃষ্টির দিন মানেই গরম গরম খিচুড়ি আর গল্পের বই পড়া। কিন্তু এই সৌভাগ্যতো আর সবসময় হয় না। শুধু স্কুলের জন্যই না বরং হাজারো কাজে বাইরে বের হতেই হয়। আর এসময় পথচলতে গিয়ে ঘটতে পারে নানা ধরণের বিপত্তি। এসময় পথ চলতে প্রয়োজন হয় কিছু অতিরিক্ত সাবধানতা ও কিছু বাড়তি জিনিস ।
বৃষ্টির দিনে কি করবেন
জমা পানি এড়িয়ে যতটা সম্ভব শুকনো জায়গা দিয়ে চলার চেষ্টা করুন। রাস্তা নয়, ফুটপাত ব্যবহার করুন ।
রাস্তায় পানি জমে থাকলে সাবধানে পা ফেলুন। কারণ জামা পানি তলায় থাকা গর্ত, ভাঙ্গাচোরা অংশ বা ম্যানহোল এর অস্তিত্ব বোঝা যায় না। ফলে অসাবধানে পা ফেললে বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ছাতা নিয়ে হাঁটার সময় যাতে রাস্তা দেখতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।।
ভিড়ের মাঝে ছাতা নিয়ে হাঁটার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার ছাতার পানিতে অন্য মানুষ ভিজে না যায়। এছাড়াও ছাতা খোলা বা বন্ধ করার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে গায়ে ছাতার খোঁচা না লাগে।
বাইরে বের হলে পুরোপুরি সুতি কাপড়ের চাইতে কিছুটা সিনথেটিক মেটেরিয়ালের কাপড় পরাটাই ভালো। ভিজে গেল দ্রুত শুকাতে সুবিধা হবে।
বৃষ্টির দিনে বাইরে বের হলে পা ঢাকা ওয়াটারপ্রুফ জুতো ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে উত্তম। এতে করে পায়ে নোংরা পানি কম লাগবে।
- গাড়ি চালালে স্পিড কিছুটা কম রাখুন কারণ ভেজা ও পিচ্ছিল রাস্তায় গাড়ি থামাতে সময় কিছুটা বেশি লাগে। এছাড়াও গাড়ি রাস্তার মাঝ বরাবর রাখার চেষ্টা করুন এখন কারণ দুই সাইডের তুলনায় মাঝে পানি কম জমে।
বেশি বৃষ্টি হলে যেসব রাস্তায় পানি জমে সেদিকে গাড়ি নিয়ে না যাওয়াটাই ভালো। কারন ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আর রাস্তা ভর্তি পানির মাঝে যদি একবার ইঞ্জিন বন্ধ হয় তাহলে এর মতো বিরক্তিকর ও ভয়াবহ জিনিস কমই আছে।
এছাড়া রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের গায়ে যাতে পানি ছিটকে না যায় সেদিকে যতটা সম্ভব খেয়াল রেখে গাড়ি চালান। এছাড়া ঘনকালো মেঘলা কিংবা বৃষ্টিময় দিনে গাড়ির হেডলাইন জ্বেলে রাখুন এতে আপনিও ভালোভাবে রাস্তা দেখতে পাবেন এবং অন্য গাড়িও আপনার গাড়িকে দেখতে পাবে।
বৃষ্টির দিনে কি করবেন না।
রাস্তায় চলার সময় সবাই কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না। কারণ ভেজা রাস্তায় পা পিছলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
রাস্তায় পানি জমা থাকলে বেশি ছটফট করে চলার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার আপনার গায়ে এবং আপনার পাশে থাকা অন্য লোকের গায়েও পানি ছিটকে যেতে পারে।
পথ চলার সময় মোবাইলে কথা বা গান শুনতে শুনতে যাবেন না।
খুব খুব বেশি ঝড় বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাত হলে খোলা রাস্তায় না থেকে কংক্রিটের শেডের নিচে যান।
বৃষ্টির দিনে রাস্তায় চলার সময় ভেজা কোন কিছু যেমন, ল্যাম্প পোস্ট কিংবা রেলিং এ হাত দেবেন না।
যা যা সাথে রাখবেন।
বৃষ্টি হোক বা বা নাই হোক, বাইরে বের হবার সময় একটা ছাতা সাথে নিতে ভুল করবেন না। দূরপাল্লায় যেতে হলে কিংবা টু-হুইলার ব্যবহার করলে সাথে রেইনকোট বা ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
সম্ভব হলে সাথে একটা ছোট তোয়ালে রাখুন যাতে ভিজে গেলও নিজেকে মুছে নিতে পারেন।
সাথে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ রাখতে পারলে ভালো হয়। এতে ভেজা জিনিসপত্র ঢুকিয়ে রাখা যাবে।
ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ও পানি ব্যবহার করুন।
ব্যাগে সব সময় অ্যান্টিসেপটিক লোশন ও অয়েন্টমেন্ট রেখে দিন ,যাতে রাস্তার জমা পানিতে হাঁটতে গিয়ে যদি কোনো কিছুতে লেগে পা কেটে যায় সেখানে লাগাতে পারেন।