"অতীতের পিছুটান ও মায়া কাটিয়ে বাড়ি ফেরার গল্প"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলেরই আজকের দিনটা বেশ ভালো কেটেছে। গতকাল থেকে একটানা বৃষ্টি চলছে, কিন্তু তবুও গরম কমছে না কিছুতেই। যাইহোক প্রকৃতির উপরে আমাদের কারোর নিয়ন্ত্রণ চলে না, তাই সবটাই সহ্য করা এবং মানিয়ে নেওয়াতেই আমরা অভ্যস্ত।
যাইহোক গতকাল আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম একটু দরকারে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে দিদির বাড়ি পৌঁছে ব্রেকফাস্ট শেষ করার পর বেশ কিছু পুরনো কাগজ পত্রের ফাইল খুলে বসেছিলাম।
আসলে আজকাল আমাদের গ্রামের দিকে অনেক বেশি চুরি ডাকাতি হচ্ছে এমনটা খবর পেয়েছিলাম। যেমনটা আপনারা জানেন, ঠাকুরমা মারা যাওয়ার পর আমাদের গ্রামের বাড়িতে এই মুহূর্তে কেউ থাকেনা। তাই ফাঁকা বাড়িতে চুরি করার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
![]() |
---|
যদিও আমাদের বাড়িতে ভীষণ মূল্যবান তেমন কোনো কিছুই নেই শুধুমাত্র এই কাগজপত্রগুলো ছাড়া। এই কারণে অনেক আগেই দিদি সেগুলো নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিলো। তাই সেই জিনিসগুলোই খুঁজে খুঁজে দেখছিলাম। আমারও বেশ কিছু ডকুমেন্টস সেই ফাইলের মধ্যে ছিলো, মূলত সেগুলো আনতেই আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম।
![]() |
---|
কাগজপত্র গুলো নাড়তে গিয়ে আমার ঠাকুরদার একটা পাসপোর্ট খুঁজে পেলাম। বহু বছর আগে একবার দেখেছিলাম মনেও নেই। এইবার বেশ ভালো করে দেখলাম। আমার বাবার চার বছর বয়সে তিনি মারা গিয়েছিলেন, তাই তাকে সামনা সামনি দেখার সৌভাগ্য কখনোই হয়নি। তবে ছবির মধ্যে দেখে বাবাকে যেন ওনারই প্রতিচ্ছবি মনে হলো। বাবার যত বয়স বাড়ছে, ধীরে ধীরে ঠাকুরদার মতই দেখতে হচ্ছে।
![]() |
---|
তখনকার সময়ের সব ছবি সাদা কালো, তবে একটা জিনিস দেখে অবাক হলাম আজকালকার দিনে স্টুডিওতে ছবি তুললে দু'বছর বাদেই ছবিগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। কিন্তু এই ছবিগুলো কত বছরের পুরনো, কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেশ ভালো আছে। আসলে পুরনো জিনিস গুলোই ভালো ছিলো। যত নতুন জিনিস বের হচ্ছে, ততই যেন নকল এবং খারাপ জিনিস আমরা হাতে পারছি।
![]() |
---|
![]() |
---|
যাইহোক সেখানকার সমস্ত কাজকর্ম সেরে দুপুরবেলায় এলাম আমার বান্ধবীদের বাড়িতে। কারণ ওদের বাড়িতে দুপুরে নিমন্ত্রণ ছিল আমার ও পিয়ালীর। অশৌচ থাকার কারণে অনেক দিন নিরামিষ খেতে হয়েছিলো। তাই এতদিন বাদে বান্ধবীদের বাড়িতে মাংসের ঝোল দেখে বেশ লোভ লাগছিলো। চিকেনটা খেতেও অসাধারণ হয়েছিলো, আশা করছি ছবিটা দেখে আপনারাও আন্দাজ করতে পারবেন। তার সাথে ছিলো ফ্রায়েডরাইস।
জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করার পর বেশ কিছুক্ষণ চললো আমাদের আড্ডা। এরপর থেকে বাইরে ধীরে ধীরে বৃষ্টি শুরু হলো। গ্রামের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে নেটওয়ার্কের অবস্থা যতটা খারাপ হয়ে যায় সে আর বলার মত নয়। তার থেকে বড় বিষয় কারেন্ট থাকে না বেশিরভাগ সময়ই। তবে সেদিন কারেন্ট থাকলেও নেটওয়ার্কের অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো।
![]() |
---|
সন্ধ্যার পর পিয়ালীর সাথে ওদের বাড়িতে গেলাম। ওদের বাড়িতে পাঁচটা বিড়াল আছে। তার মধ্যে তিনটে বাচ্চা। বিড়াল গুলো ওর মায়ের এতটা বাধ্য যে, আপনারা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। ওর মা আলতা পরতে বসলেই নাকি বিড়াল গুলো সামনে পা বাড়িয়ে বসে থাকে। আর তিনিও কি সুন্দর বিড়ালদের পায়ে আলতা পরিয়ে দেন।
![]() |
---|
সারা ঘর ময় ওদের অবাধ বিচরণ। কখনো চেয়ারের উপর, কখনো মাদুরের উপরে, তারা বসে থাকে। আর সব থেকে খেলার পছন্দের জিনিস হল পর্দা। ছবিগুলো একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন ওরা পর্দা নিয়ে কি সুন্দর খেলা করে।
![]() |
---|
![]() |
---|
বেশ কিছুক্ষণ ওদেরকে দেখে সময় অতিবাহিত করে, বাড়িতে ফিরে রাতের খাওয়া সম্পন্ন করে পোস্ট ভেরিফাই করতে বসেছিলাম। কয়েকটা পোস্ট ভেরিফাই করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। তাই খুব বেশিক্ষণ দেরি না করে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম। তখন বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিলো।
তাড়াতাড়ি শুলেই বা কি হবে, ওই যে বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। তারপরে আবার জায়গা বদলেছি। শোয়ার পর থেকেই আমাদের গ্রামে কাটানো পুরনো স্মৃতিগুলো যেন আমাকে তাড়া করতে শুরু করলো। বিশেষ করে আমাদের ফাঁকা বাড়িটির দিকে তাকালেই মনটা একেবারে হু হু করে ওঠে। সেরকমভাবেই রাত পার হয়ে গেলো। এক ফোঁটাও ঘুমাইনি।
ভোরের দিকে একটু চোখ বুজলাম। একটু বাদেই উঠে বেশ কিছু কাজ সারলাম। প্রথমে প্রাইমারি স্কুলে গিয়েছিলাম সেখানে মাস্টার মশাই না আসাতে কাজ হয়নি। পরে সেখান থেকে পঞ্চায়েতে গিয়েছি। আর তখনই মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। তবুও কাজ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরেছিলাম চারটে নাগাদ।
![]() |
---|
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিতে মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। ভেবেছিলাম হয়তো বাড়িতে ফেরা হবে না। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি। প্লাটফর্মে যখন পৌঁছালাম তখনও বৃষ্টি পড়ছিলো, তবে আগের থেকে কম। এরপর ট্রেনে করে সোজা পৌঁছালাম দত্তপুকুরে, যেখানে তখন একেবারেই বৃষ্টি ছিল না।
গ্রামের বাড়িতে গেলে আসলে আমার মনটা অনেক বেশি খারাপ হয়। একটা সময় জীবনের সবথেকে আনন্দের মুহূর্ত যে বাড়িটাতে কাটিয়েছে, আজ সেই বাড়িটার দিকে তাকালে এতটা খারাপ লাগে যেটা আপনাদের সাথে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এমন একটা ফাঁকা বাড়িতেই একটা সময় হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস ভরে থাকতো। আর আজ মাসের পর মাস বাড়িটি ফাঁকা পড়ে থাকে। যার মায়া কাটিয়ে ফিরে আসা খুব কঠিন। সত্যিই ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। জীবনের এমন বাস্তবতাও যে দেখতে হবে এমনটা সত্যিই আগে বুঝতে পারিনি। ভালো থাকবেন সকলে।
SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted from the steemcurator07 account.