দার্জিলিং এর অন্যতম আকর্ষণ "বাতাসিয়া লুপ" ঘোরার অভিজ্ঞতা

in Incredible India6 days ago (edited)
IMG_20250612_171631.jpg
"আমার দেশের জাতীয় পতাকা ও গোর্খা স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ বাতাসিয়া লুপের প্রধান আকর্ষণ"

Hello,

Everyone,

দার্জিলিং ভ্রমণের আগের পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম অরেঞ্জ ভ্যালি টি গার্ডেন ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা। আর আজ আপনাদেরকে ঘুরে দেখাবো দার্জিলিং এর আরও একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র "বাতাসিয়া লুপ"।

"বাতাসিয়া" এই শব্দটির অর্থ হলো, যে স্থানে বাতাস সুন্দরভাবে বইতে পারে অর্থাৎ খোলা কোনো একটা এলাকা, যা সেই স্থানের সুন্দর, শান্ত, স্নিগ্ধ ও নির্মল পরিবেশকে বোঝায়।

দার্জিলিং এর হিমালয়ান রেলওয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশে রেলগাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে, ঢাল কমানোর জন্য প্রধানত এই বাতাসিয়া লুপটি তৈরি করা হয়েছিলো। এটি একটি সুরঙ্গের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ার ওপর দিয়ে একটা সরু পথে তৈরি করা হয়েছিলো, যেখানে ১৯১৯ সাল থেকে রেলগাড়ি চলা শুরু হয়েছিলো।

IMG_20250925_223227.jpg

এছাড়াও সম্পূর্ণ বাতাসিয়া লুপের পরিধির কেন্দ্রে একটি গোর্খা যুদ্ধের স্মারক রয়েছে। সাধারণত স্বাধীনতার পর থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যে সকল বোরখা সৈনিকরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদেরকে স্মরণ করেই দার্জিলিংয়ের জেলা সৈনিকবোর্ড এটি নির্মাণ করেছেন।

তাছাড়া এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং হিমালয়ের অন্যান্য শৃঙ্গের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। তবে আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন আকাশ মেঘলা থাকার কারণে আমরা কোনো শৃঙ্গেরই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে না পারলেও এখানকার অসাধারণ ফুলের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছি।

IMG_20250612_171555.jpg
IMG-20250925-WA0027.jpg

তাছাড়া আমরা যখন সেখানে পৌঁছেছি তখন দার্জিলিং স্টেশন থেকে আসা টয় ট্রেন দাঁড়িয়েছিলো তার যাত্রীদেরকে নিয়ে। এখানে মিনিট ১৫ এর মতন সকলকে নেমে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সময় দেওয়া হয়। আমরা ভেতরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সকল যাত্রীদেরকে নিয়ে ঘুম স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলো।

এই ট্রেন যাত্রার সময় ট্রেনের হর্নটা শুনে একদমই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দার্জিলিংয়ের আশেপাশে ঘোরার সময় দূর থেকে ভেসে আসা এই ট্রেনের হর্নের এই শব্দ আপনাকে একেবারে আবেগ আপ্লুত করে তুলবে। কারণ এই শব্দটির কারণেই হয়তো দার্জিলিং এক আলাদা অনুভূতি জাগায় পর্যটকদের মনে।

যাইহোক আগের পোস্টে যেমন আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম আমরা অরেঞ্জ ভ্যালিটি গার্ডেন থেকে ফেরার পর, সামান্য কিছু খেয়ে বাতাসিয়া লুপে প্রবেশ করবো এমনটাই ঠিক করেছিলাম। ঠিক তেমনটাই হয়েছিলো। বাতাসিয়া লুপে ঢোকার আগে পাশেরই ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমরা আমাদের পছন্দ মতন খাবার খেয়েছিলাম।

IMG-20250925-WA0033.jpg
IMG-20250925-WA0021.jpg

আমার মূলত ইচ্ছে ছিলো এখানকার চিকেন মোমো ট্রাই করার সুতরাং আমি ও রাখি এক প্লেট চিকেন মোমো ও এক প্লেট এগ চাউমিন অর্ডার করেছিলাম। যেটা আমরা দুজনে ভাগ করে খেয়েছিলাম, যাতে দুটোরই স্বাদ আমরা নিতে পারি। সৌভাগ্যবশত এখানকার চিকেন মোমোটা খেতে বেশ ভালো ছিলো।

এরপর আমরা বাতাসিয়া লুপে প্রবেশের জন্য টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। প্রথম দেখার দৃশ্যটি অসাধারণ ছিলো। জানিনা সেটা ছবির মাধ্যমে বা লেখার মাধ্যমে কতখানি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবো। সেখানকার ফুলের সৌন্দর্য্য গুলি আসলেই মুগ্ধ করার মতন।

IMG-20250925-WA0031.jpg

দূর থেকে টয় ট্রেনের ধোঁয়া দেখেই বুঝতে পারলাম কিছু সময় আগেই টয়ট্রেন এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আসলে মাঝে মধ্যেই টয় ট্রেনের আওয়াজ পাওয়া যায়, তাই ঠিক বুঝে ওঠা যায় না সেটি আসছে না যাচ্ছে।

ভিতরে ঢুকে প্রথমেই যা আমাদের দৃষ্টি কাড়লো সেটি হল আমাদের জাতীয় পতাকা। প্রত্যেক দেশের জাতীয় পতাকা সেই দেশবাসীর কাছে এক মূল্যবান প্রতীক, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই পতাকা যখন খোলা আকাশে উড়তে থাকে, মনে এক অন্য অনুভূতি জাগায়। এটা হয়তো আপনারা সকলেই নিজের নিজের জায়গা থেকে অনুভব করতে পারবেন।

IMG_20250612_171311_Bokeh.jpg

তার পাশেই ছিলো স্মৃতিস্তম্ভটা। উপর থেকে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ জায়গার দৃশ্যটআ উপভোগ করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে সমস্ত জায়গাটা ঘুরে দেখলাম।

এখানেও ছোট্ট একটা দোকান চোখে পড়ল যেখানে আপনারা চাইলে পাহাড়ি ড্রেস পরে ছবি তুলতে পারবেন। এই ব্যবস্থাটা প্রত্যেকটা জায়গাতেই আছে। কারণ এমন অনেক পর্যটক আছে যারা ঘুরতে গিয়ে সব জায়গাতেই এমন পাহাড়ি পোশাক পরিহিত ছবি তুলতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

IMG-20250925-WA0025.jpg

আর উল্টোদিকে যদি ভাবি তাহলে এই ব্যবসার সসাথে জড়িত মানুষগুলোর রুজি রুটি এই পেশার মাধ্যমেই বছরের উপর বছর টিকে আছে। যদিও আমরা ছবি তুলিনি। তবে এখন ফিরে আসার পর মনে হয়, একবার অন্তত তোলা উচিত ছিলো।

IMG_20250612_171548.jpg

সম্পূর্ণ জায়গাটা ঘুরে দেখতে দেখতে চোখে পড়ল এই স্মারকটি, যেখানে বাতাসিয়া লুপ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া আছে। এছাড়াও আরো একটি স্মারক চোখে পড়েছে। এখানে অর্থাৎ বাতাসিয়া লুপে টলিউড ও বলিউডের বিভিন্ন বিখ্যাত সিনেমার শুটিং হয়েছিলো।

IMG-20250925-WA0023.jpg

কোন কোন সিনেমার শুটিং হয়েছিল তার একটা চিত্র সেখানে উপস্থাপন করা আছে, যেটা দেখলে আপনারাও হয়তো কিছুটা বুঝতে পারবেন। সেই কারণেই ছবিটা মূলত আপনাদের সাথে শেয়ার করা।

চারিপাশটা দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই ট্রেনের আওয়াজ শুনে দৌড়ে গেলাম এবং উপভোগ করলাম টয়ট্রেনের ছেড়ে যাওয়া। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। আপনাদের সাথে ছবির মাধ্যমে তার সবটা হয়তো বর্ণনা করা সম্ভব হলো না। সকলে মিলে এদিক ওদেরকে ঘুরে বেশ কিছুটা সময় সেখানে উপভোগ করলাম।

IMG-20250925-WA0035.jpg
IMG_20250612_171606.jpg
IMG_20250612_170841.jpg

সেখানকার বাগানে এতো সুন্দর ফুল ফুটেছিল যে, আপনারা সেগুলো না দেখলে বুঝতে পারবেন না। আসলে সব ছবি মিলিয়ে আমি আলাদা কিছু পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ভেবেছি। তাই আর সব ছবি আপনাদের সাথে এই পোস্টে উপস্থাপন করলাম না।

IMG-20250925-WA0029.jpg

বাতাসিয়া লুপ থেকে ফিরে আমাদের ঘুম মনেস্ট্রি ঘুরে দেখার প্ল্যান ছিলো। তাই খুব বেশি সময় সেখানে অতিবাহিত না করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম পরবর্তী ডেস্টিনেশন এর উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে কেমন সময় কাটালাম, প্রথমবার কোনো মনেস্ট্রির ভিতরে গিয়ে অনুভূতি কেমন ছিলো, সেই বিষয়ে সকল কথাই আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে শেয়ার করবো।

তবে আমার পোস্টের মাধ্যমে বাতাসিয়া লুপ পরিদর্শন করে আপনাদের কেমন লাগলো, সেটা অবশ্যই সকলে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। প্রত্যেকে খুব ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভ রাত্রি।

Sort:  
Loading...

How I can be a member as a Bangladeshi in your community.
@tanay123 sir
@sampabiswas mam