"ডায়েরীতে বন্দী তিন বছরের স্মৃতি- আমার প্রিয় কমিউনিটির জন্য জন্মদিনের উপহার"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আমরা অনেক সময় একটি কথা শুনে থাকি যে মানুষ বড়ই স্বার্থপর। আমি নিজেও এই স্বার্থপরের দলেই সামিল, কারণ আমিও মানুষ। তবে সত্যি কথা বলতে যেই যেই বিষয়গুলিতে নিজের স্বার্থপরতা দেখাতে পারলে হয়তো ভালো থাকতে পারতাম, সেই বিষয়গুলিতেই আমি বড্ড বেশি আবেগপ্রবন।
এই কারণে কিছু জায়গা বা বলতে পারেন কিছু মানুষকে আঁকড়ে ধরে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা বারবার আঘাত করে আমাকে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও নিজেকে বদলানোর চেষ্টায় আমি আজও অসফল।
সত্যিই যদি পুরনো কিছু সম্পর্ক, পুরনো কিছু জায়গা, পুরনো কিছু আবেগ, যদি বদলে ফেলতে পারতাম তাহলে জীবনটা হয়তো আরও সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেতাম।
আজ নিজের ডায়েরিটাকে বিদায় জানালাম, নিজের জীবনে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে। তাকে শেষবার খুব ভালোভাবে দেখলাম, আর সেই ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করলাম।
তেমনভাবেই আমার জীবনে জড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের সাথে কাটানো সকল মুহূর্তগুলোকে আরো একবার মনে করে, যদি তাদেরকেও জীবন থেকে বিদায় জানিয়ে বলতে পারতাম, তাদের আর আমার জীবনে প্রয়োজন নেই, তাহলে হয়তো কষ্টের মাঝেও একটু আনন্দ খুঁজে পেতাম।
আজ এই ডায়েরিটা বাদ দিতেও আমার খারাপ লাগছে, হয়তো এরপর আর এই ডায়েরিটাকে কখনো খুলে দেখা হবে না। কিন্তু এই ডাইরির পাতায়ও আমার অনেক মুহূর্ত জমা হয়ে আছে। যার মধ্যে কিছু যেমন ভালোলাগার আছে, তেমন কি কিছু খারাপ লাগারও বটে।
তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও একবার শেয়ার করি, এই কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী এই ডায়েরির কিছু পাতার গল্প। সময় আসলে কত দ্রুত অতিবাহিত হয়, আজ ডাইরির পাতাগুলো উল্টাতে গিয়ে সেটাই ভাবছিলাম মনে মনে। জীবনে ফেলে আসা বছরগুলিতে কত কত সময় এই ডায়েরিতে ব্যয় করেছি, আজ কোথাও না কোথাও তার হিসাব মেলাতেই বসেছিলাম।
এত বছর কমিউনিটিতে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে হোক বা অন্য যেকোনো কারণে, যখন অন্যত্র যেতে হয়েছে এই ডায়েরিটা কিন্তু আমার সাথেই গিয়েছে। কারণ কমিউনিটির সকল কাজের হিসাব জমা থাকতো এই ডায়েরির পাতায়। কখনো মনের আনন্দে ডায়েরির পাতায় আঁখিবুকি করেছি। কখনো নিজের মনে যা খুশি এঁকেছি। কখনো আবার নিজের নাম খোদাই করেছি।
আজ এই ডায়েরিটা দেখতে গিয়েও পিকলুর কথা মনে পড়লো। এই ডায়েরির উপরে মাথা দিয়ে না জানি কতদিন পিকলু শুয়েছে। মুখটা ডায়েরির উপরে দিয়ে আড় চোখে আমার দিকে তাকাতো, যেন আমার লেখাগুলো সম্পূর্ণ সে পড়তে পারছে।
সত্যি বলতে অনেকগুলো বছর ধরে জীবন থেকে সব জিনিস কেমন যেন হারাতে শুরু করেছি, পাওয়ার হিসেব করলে হারানোর কষ্ট কম অনুভূত হয়, একথা একেবারেই সত্যি। কিন্তু আমার পাওয়ার ঘর অন্য অনেকের তুলনায় অনেক বেশি শূন্য। তবে আমি তার হিসেব অনেক কম করি বলেই হয়তো হতাশা আমাকে ততটাও গ্ৰাস করতে পারেনি, যতটা এতো বছরে করা উচিত ছিল।
ডায়েরির পাতা শেষ হয়ে গেছে, তাই ডায়েরিটা যত সহজে পাল্টে ফেলতে পারছি, ঠিক এতটা সহজেই যদি জীবনের কিছু সম্পর্কগুলোকে বাদ দিতে পারতাম। তাহলে বাঁচাটা আরও অনেক বেশি সহজ ও সুন্দর হতো। কিন্তু এখানেই এসে আমি বারে বার হেরে যাই। নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখে পথ চলতে শিখছি, মাঝেমধ্যে হোঁচট খাই, কষ্ট হয়, আবার উঠে দাঁড়াই। কারণ নিজের অনুভূতি নিয়ে নিজে কষ্ট পাওয়া ঢের ভালো, অন্তত অন্যের কাছে তা প্রকাশ করে অপমানিত হওয়ার থেকে।
গতকাল থেকে নতুন ডায়েরির পাতা খুলেছি, সেখানে কমিউনিটির কাজগুলো আবার নথিভুক্ত করতে শুরু করেছি। যদিও জানি না এই ডায়েরির পাতা শেষ করতে পারবো কিনা। কারণ মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে হ্যাঁ যেদিন এই ফেলে দেওয়া ডায়রিটির প্রথম পাতায় লিখেছিলাম, সেদিনও হয়তো আশা করিনি পথ চলা এতো দীর্ঘ হবে।
এতো বছরে অনেক ওঠা পরা দেখেছি। জীবনের অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি। যেমন এই ডায়েরির হাত ধরে অনেক নতুন জিনিস শিখেছি অনেক কিছু দিয়েছে আমাকে এই ডায়েরিটি, তাই ওকে বিদায় জানাতে গিয়ে আজ মনটা ভারাক্রান্ত। কেন যেন মনে হচ্ছে আরও একবার অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে আমার জীবন থেকে।
তবে মানুষের জীবন চলমান, চলতে থাকবে এভাবেই আসা-যাওয়া। সময় বদলে গেলেও কিছু অনুভূতি যেন কিছুতেই বদলাতে চায় না। তবে সম্পর্কের রুপ পরিবর্তন হয় এ কথা আমি বিশ্বাস করি. আজ হয়তো এতো কথা লিখতামই না, যদি কিনা এই ডায়েরিটির স্মৃতি আমি ধরে রাখতে না চাইতাম।
এই কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে অনেক মানুষের সঙ্গে এমন আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যাদেরকে হয়তো এই জীবনে আর কখনো ভুলতে পারবো না। হয়তো কথা হবে না, দেখা হবে না, সুসম্পর্ক বজায় থাকবে না, শুধু সুসম্পর্ক কেন হয়তো আর কোনো সম্পর্কই থাকবে না, তবু মানুষগুলো আজীবন আমার মনে থাকবে। অনেক হাসি মজার মুহূর্তের সঙ্গী ছিল তারা, আবার অনেক খারাপ লাগার ও।
তবুও এগুলি আমার প্রাপ্তি। এই প্ল্যাটফর্ম, এই কমিউনিটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তাই বলতে পারেন সেই সমস্ত কিছু স্মৃতির পাতায় জমা করার ক্ষেত্রে এই ডায়েরির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভাবলাম প্রতিটি পাতার স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে না পারলেও, অন্তত কিছু পাতা আজ আপনাদের সামনে মেলে ধরি, যার মাধ্যমে আপনারাও জানতে পারবেন কিভাবে প্রতিটি দিন এই ডায়েরী আমাকে সঙ্গ দিয়েছে।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন একটা ডায়েরিকে ঘিরে এতো কথা কেন লিখলাম। তারও কারণ আছে, চলুন সবশেষে কারণটাই না হয় আপনাদের সাথে শেয়ার করি,- আজ ১৭ ই মে। ১৫ ই মে আমাদের কমিউনিটি ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। অন্যান্য বছর আমরা এই বিশেষ দিনে ডিসকর্ডে একত্রিত হয়ে সুন্দর সময় কাটানোর আর্জি জানিয়ে অ্যাডমিন ম্যামকে অনুরোধ করি। এ বছরও তিনি হয়তো সেই রকম আর্জির প্রতীক্ষা করেছেন সারাটা দিন। কিন্তু দিন শেষে তিনি নিরাশ হয়েছেন, কারণ কমিউনিটির সকলেই বেমালুম ভুলে গিয়েছিল কমিউনিটির জন্মদিনের কথাটি।
সত্যি কথা বলতে এ বছর ইচ্ছে করেই অ্যাডমিন ম্যাম এগিয়ে এসে এই বিষয়টি কাউকে জানাননি। কারণ সম্পর্কে যখন ভাঙন ধরে তখন বোধহয় সেই ভাঙ্গনটা ঠিক করার দায়িত্ব দুই তরফের মানুষেরই থাকা উচিত। কিন্তু আমার ও ম্যামের দুর্ভাগ্য এটাই, সম্পর্কগুলো সঠিকভাবে চালনা করার দায়িত্ব আমরা সব সময় নিজেরা নিয়ে থাকি। এটা কর্মজগতেও যেমন সত্যি, তেমন ব্যক্তিগত জীবনেও।
তবে আমরা আমাদের জায়গাতে সেই একই আছি। প্রতিটি সম্পর্ক আমাদের জীবনে অনেক মূল্যবান। তবে সেই সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে না পারা মানুষদের কাছে তার বহিঃপ্রকাশ ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করেছি, যাতে প্রত্যাশা আমাদেরকে কষ্ট দিতে না পারে। কোনো কিছু ছেড়ে যেতে, কোনো কিছু ভেঙে ফেলতে শিখিনি আমরা। তাই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি সবটা সামলে নেওয়ার, কিন্তু যখন বুঝি অন্য দিক থেকে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে, যা আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তখন চুপচাপ যা ঘটার তা ঘটতে দিই।
আপনাদের অনেকের কাছেই মনে হতে পারে আমার কথাগুলো অযৌক্তিক, তবে এটা আমার মনের অনুভূতি। তাই আপনাদের কেমন লাগবে সেই প্রত্যাশা না করেই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করা আমার অভিপ্রায় নয়, আঘাত করতে শিখিনি কখনো। তবে হ্যাঁ খারাপলাগা, কষ্ট আমাদেরও আছে।
কারণ তো সেই একটাই শুরুতে যেমনটা লিখলাম, আমরা স্বার্থপর ঠিকই, তবে মানুষ তো। তবে কিছু মানুষের সাথে আমাদের সামান্য পার্থক্য আছে, সেটা হল আমরা আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে শিখিনি।কমিউনিটির প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ যারা আমাদের সাথে মন থেকে ছিলেন, আছেন, বা যারা মন থেকে ছিলেন না, তাদেরকেও। কারণ জীবনের ভালো-মন্দ সমস্ত অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন রয়েছে, তাই কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের দ্বারাও প্রাপ্তি হয়েছে, তাই এই ধন্যবাদ এর অংশীদার আপনারাও।
সাথে থাকুন বা দূরে, আপনাদের মঙ্গল কামনা সর্বদা করেছি, আজও করি। তবে হ্যাঁ বিশ্বাস করা বা না করা সেটাও আপনাদের উপরেই ছাড়লাম। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।