"শেষদিনের কিছু কথা- Rest in peace Picklu"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
সকাল ৬.০৭ মিনিট। শশুর মশাইয়ের ফোনের রিং এর শব্দে ঘুম ভাঙলো। কোনো রকমে ফোনটা তুলে হ্যালো বললাম। অন্যপ্রান্তে শশুর মশাইয়ের গলা শুনে অস্বাভাবিক লাগলো। সাধারণত শাশুড়ি মা ফোন করেন, শশুর মশাইয়ের শরীর খারাপ হলে। তবে শশুর মশাই ফোনে করেছেন দেখে আরও টেনশনে পড়ে গেলাম।
বিগত দুতিন দিন রাতের দিকে প্রায়ই ফোন করে ডেকেছে, নীচে এসে দেখি সুগার কমতে শুরু করেছে বলে শরীর খারাপ লাগছে। এদিন ও তেমনটাই ভেবেছিলাম। যাইহোক কোনো রকমে চোখে মুখে জল দিয়ে নীচে এসে শশুর মশাইকে বিছানায় না দেখে আরও টেনশনে শুরু হলো।
শশুর মশাইয়ের ঘর পেরিয়ে শাশুড়ি মায়ের ঘরে ঢুকতে গিয়েই থমকে গেলাম। দু সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখলাম শশুর মশাই মেঝেতে বসে পিকুলুর সারা শরীরে হাত বোলাচ্ছেন ও কান্না করেছেন।
![]() |
---|
কারনটা তখনও বুঝিনি। কারন আদর করলে পিকলু সব সময়ই অমন ভাবেই শুয়ে থাকে। হঠাৎ পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে শশুর মশাই বললেন,- বাবুকে ডাকো পিকলু মনেহয় আর নেই।
পাশে থাকা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে শুধু না শব্দটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলাম। একদৌড়ে উপরে গিয়ে শুভকে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। ও ঠিক আমার মতোই শশুর মশাইয়ের শরীর খারাপ ভেবেছে। পিকুর কথা বলতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,-কি বলছো কি?
একসাথে দুজনেই নেমে এলাম। আমি আবার দরজায় দাঁড়িয়ে রইলাম, শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অন্য কিছু শোনার আশায়। আমার দিকে ফিরতেই বুঝলাম সব শেষ। আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়াইনি। সোজা উপরে এলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম আদেও যা হচ্ছে তা কতটুকু সত্যি, নাকি স্বপ্ন দেখছি।
হঠাৎ সম্বিত ফিরতেই আগে নিজের পোস্ট সাবমিট করলাম, কারন কনটেস্ট পোস্ট সাবমিট করার সময় সীমা অতিক্রম হয়ে যেতো। সবটাই রেডি ছিলো শুধু পোস্ট করলেই হয়ে যেতো।
তারপর চেক করে দেখলাম যে পোস্টগুলো ভেরিফাই করতে হতো, সেগুলো যা সময়সীমা পরে করলেও হবে, শুধু ম্যামের পোস্ট ছাড়া। তাই দ্বিতীয় কাজ যেটা করলাম, আমাদের কমিউনিটিতে কর্মরত মডারেটর ভাইকে ঐ একটা পোস্ট ভেরিফাই করে দেওয়ার অনুরোধ করলাম।
![]() |
---|
এরপর চুপচাপ খাটে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। একটু বাদে শুভ উপরে এলো, পিকলুর পারফিউমটা বের করে বললো, -এটা ওর গায়ে দিয়ে দাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ওকে প্রশ্ন করলাম,- তুমি কি শিওর? বাপি বুঝতে পারেনি হয়ত। ভালো করে দেখো,ও আদর পেয়ে ঘুমাচ্ছে। ডাক্তার ডাকো। ও তো সুস্থই ছিলো। অসুস্থ থাকলে তাও নয় বুঝতাম।
শুভ বললো,- ডাক্তার ডাকতে হবে না। আর নেই।
ব্যাস দুজনের কেউই আর......
শাশুড়ি মা উপরে এসে বললেন,- এইভাবে বেশিক্ষণ রাখতে নেই। নীচে এসে একটা সাদা ওড়নায় শোয়ালাম ওকে। মাথার সামনে শাশুড়ি মা ইতিমধ্যেই ধূপ কাঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। সারা গায়ে পারফিউম দিলাম। অন্য সময় পারফিউম দিলে শুধু নড়াচড়া করতো। মনে মনে আশা করছিলাম বোধহয় আগের মতই নড়ে উঠবে। কিন্তু না তাকিয়েই রইলাম, একটুও নড়লো না।
![]() |
---|
না, ওকে ঐ ভাবে আর শুইয়ে রাখতে পারছিলাম না। কোলে নিলাম, জীবনে শেষ বারের মতো আদর করলাম। আমার ডাক, আমার কান্না সবটাই শুনেছে ও, শুধু সাড়া দিতে পারেনি দুষ্টুটা। চুপচাপ শুধু আদর খেয়েছে।
শুভ বেড়িয়ে গেলো ফুল,মালা, মোমবাতি, ধূপ কাঠি আনতে। আমরাও বাড়ির গাছের কয়েকটা সাদাফুল দিলাম ওর সাথে। এরপর আমি ওকে কোলে নিয়ে শাশুড়ি মায়ের সাথে রওনা দিলাম ওর শেষ যাত্রায়। শুভ বাইকে করে শশুর মশাইকে নিয়ে গেলো। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে, শাশুড়ি মায়ের জ্যাঠামশাইদের একটা বাগান বাড়িতে ওকে রেখে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
আমাদের বাড়িতে কোনো পাশেই একটুও জায়গা নেই যেখানে ওকে রাখতে পারতাম।ও নিশ্চয়ই রাগ করেনি তারজন্য, কারন ও জানে উপায় থাকলে ওকে আজীবন নিজের কাছেই রাখতাম। ওখানে শুভ সবটা করেছে।আমি ওকে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলাম। যতক্ষণ রাখতে পারি এই আর কি।
![]() |
---|
কিছুক্ষণ বাদে সবটাই শেষ হলো। বাড়িতে ফিরে গেটখুলে ঢুকতে গিয়েই চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো, পিকলু আর কখনো আসবে না ভেবে। সব জামাকাপড় ধুয়ে স্নান করলাম, পুজো দিলাম। তৎক্ষণাৎ শুরু হলো মুষলধারায় বৃষ্টি। প্রকৃতি বোধহয় আমার সমব্যাথী হয়েছিল নিজের মতো করে।
শুভ একটা বড় প্লাস্টিক নিয়ে ছুটলো আবার ঐ বাগান বাড়িতে, বৃষ্টিতে যাতে মাটি গুলো ধুয়ে না যায় তাই ঢেকে দিয়ে এলো। ততক্ষনে আমি কমিউনিটির কনটেস্টের ডিটেইলস গুলো চেক করে ম্যামকে মেল পাঠালাম। সারা ঘরে পিকলুর চিহ্ন, ওর উপস্থিতি এখনও বিদ্যমান।
দিনটা কিভাবে কেটেছে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে কমিউনিটির দায়িত্ব পালন করেছি। নতুন মডারেটরকে সবটা দেখানোর দায়িত্ব ছিল আমার। তাই পরিস্থিতি যাইহোক ওটা করতেই হতো। ঐ দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে পারিনি। পোস্ট ভেরিফিকেশন, বুমিং এর কাজ, পোস্ট লেখা সব করছি, তবে মনটা ওখানেই ছিলো, যেখানে রেখে এসেছিলাম আদরের পিকলু কে।
![]() |
---|
মনেই হচ্ছে না পিকলুকে ছাড়া একটি দিন কাটিয়ে দিলাম। ওর স্মৃতি থেকে পালানোর উপায় নেই। কারন ও সর্বত্র। গতকাল থেকে এখনো ঘুমাতে পারিনি। শুধু আমি নই, শুভ ও। সারা রাত দুজন দুজনের ফোনে পিকলুর ছবি, ভিডিও দেখে গেছি। কেউ কারোর সাথে কথা বলিনি, পাছে পিকলুর জন্য লুকিয়ে রাখা কষ্ট, কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসে।
যাইহোক, শেষ করি আজ। গলা আটকে আসছ, চোখ ঝাপসা, আসলে পিকলুর সাথে কাটানো শেষ দিনের কিছু মুহূর্তের কথা লিখে রাখতে চাইছিলাম, অন্য কারোর জন্য নয় শুধু নিজের জন্য। ওর শেষ মুহূর্তের একটাও ছবি তুলিনি, ওগুলো রাখতেই চাইনি নিজের কাছে। স্মৃতি যদি থাকে তবে ভালোটুকুই থাক। আপনারা যারা ওকে ভালোবাসতেন তারা একটু ওর জন্য প্রার্থনা করবেন, যেন ওর পরজন্ম ভালো হয়।
যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
আজকে আপনার পোস্ট পড়ে খুব খারাপ লাগলো, আপনার পোস্টে যখন পড়তাম অধিকাংশ সময় জুড়েই পিকলু থাকতো আজকে পিকলু খবর শুনে চোখ দিয়ে পানি বেরোনোর মতোন অবস্থা। এই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আপনি তাও প্লাটফর্মে সমস্ত কাজ শেষ করেছেন।
সত্যি আপনার এই পোস্টটা পড়ে আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছে যেটা হয়তো ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারবো না, গত দুই বছর ধরে এই প্লাটফর্মে আছি প্রত্যেকটা দিন না হলেও কিছু কিছু দিন হলেও আমি পিকলুর লেখা আপনার অনেক পোস্ট করেছি, কত হাসি আনন্দ আর ওর অসম্ভব দুষ্টামি সত্যি মন কেড়ে নেওয়ার মতো,,
আমি এত দূরে থেকেও এটা মানতে পারছি না, আর আপনার কাছে এটা সত্যিই অসম্ভব এবং স্বপ্নের মতই মনে হবে তবে ভেঙে পড়বেন না সৃষ্টিকর্তা ওকে ওপারে ভালো রাখবে সে প্রার্থনা করবেন,,।
পিকলুর খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য যে জন্মেছি যখন তখন আমাদেরও এই দুনিয়া ছেড়ে এক না একদিন চলে যেতে হবে। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস রে।
আপনার এই পোস্টটি পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগছে পিকলু হারিয়ে অনেক কষ্ট আপনি পেয়েছেন এটা বুঝতে পারছি। তার সাথে কাটানো স্মৃতি তার সাথে জড়ানো মায়া সবকিছু কষ্ট দিয়ে গিয়েছে আপনাকে। এবং তার না থাকার খবরটি আপনাদের পরিবারের মানুষ মেনে নিতে পারে নাই সে আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে ছিলো তার সাথে মায়া ভালোবাসা আপনার পোষ্টের মধ্যে অনেক পড়েছি আজ তার না থাকার খবরটি সত্যি অনেক কষ্ট দিয়ে গেলো।
আসলে আজকে হয়তোবা অনেক দিন বাদে আপনার পোস্ট পড়েছি তবে সত্যি কথা বলতে আপনার লেখা পড়ার পর আমার নিজের চোখেই পানি চলে আসলো আপনার প্রতি তার ভালোবাসা কতটুকু ছিল একটা সন্তান এবং একজন মায়ের মতই ছিল আমি মনে করি সে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে আপনার বাড়িতে এতটুকু জায়গাও ছিল না তাকে রাখার তা না হলে আপনি আজীবন তাকে আপনার কাছে রেখে দিতেন আসলে দোয়া করেন তার স্মৃতি হয়তো বা আপনাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াবে কিন্তু আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে।