**কুমোরটুলি ঘুরে দেখার পরবর্তী পর্ব**
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
গতকাল কুমোরটুলি ঘুরে দেখার প্রথম পর্ব শেয়ার করেছিলাম, যেখানে আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম বেশ কিছু অলিগলি ঘুরে আমরা একটা পুরনো রাজবাড়ীর কাছে গিয়ে পৌঁছেছিলাম।
![]()
|
---|
দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই, সেটা বাড়ির অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে। এমনকি সেটার ভাঙ্গনকার্যও শুরু হয়েছে। গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার কোনো অনুমতি ছিল না, তাই গেটের বাইরে দাঁড়িয়েই পুরনো ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখলাম।
সত্যি বলতে কলকাতায় এমন একমাত্র জায়গা যার ওলি গলিতে এখনও সেই পুরনো দিনের ঐতিহ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাই পুরনো কলকাতাকে অনুভব করতে হলে আপনাকে এই অলিগলির মধ্যে দিয়েই ঘুরতে হবে।
![]()
|
---|
গেটের ওখানে দাঁড়িয়েই দেখলাম ভেতরে একজন মানুষ বাড়িটির ভাঙ্গন কার্য সম্পন্ন করছেন। হয়তো বাড়িটি ইতিমধ্যেই হস্তান্তর হয়েছে। নতুন করে এখানেই হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে নতুন কোনো বিল্ডিং তৈরি হবে, আর সেই বিল্ডিং এর তলায় চাপা পড়ে যাবে এই পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর ইতিহাস। এইরকম ভাবেই না জানি কতো ইতিহাস আজ নতুন বিল্ডিং এর তলায় চাপা পড়ে আছে।
![]()
|
---|
যাইহোক সেখান থেকে বেশ কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল এক অভিনব চায়ের দোকান। এই চায়ের দোকান সম্পর্কে সত্যিই এর আগে আমি জানতাম না। শুধু আমি বললে ভুল হবে আমাদের মধ্যে কারোরই জানা ছিল না। তবে চায়ের দোকানে যারা বসেছিলো, তাদেরকে দেখে মনে হল এরা প্রায়শই আসে এই চায়ের দোকানে। কারণ দোকানের মালিকের সাথে তাদের কথোপকথন দেখে মনে হল অনেক পূর্ব পরিচিত।
![]()
|
---|
![]()
|
---|
চায়ের দোকানের যেটা সবথেকে ভালো লাগলো সেটি হল এখানে আমাদের টলিউডের প্রায় সকল নামিদামি শিল্পীরা এসেছেন এবং তাদের স্মৃতি দোকানের মালিক খুব সুন্দর ভাবে নিজের দোকানে রেখে দিয়েছেন যত্ন সহকারে। কুমোরটুলির এটি বিখ্যাত চায়ের দোকান, যেটা খানিকটা বাসের আদলে তৈরি। হঠাৎ করে যদি আপনি দোকানটাকে খেয়াল করেন, তাহলে আপনার মনে হবে কোনো একটা বাসের ভিতরে এই চায়ের দোকানটি খোলা হয়েছে।
![]()
|
---|
![]()
|
---|
জানিনা ছবি দেখে আপনারা কতটা আন্দাজ করতে পারছেন, তবে দোকানটা সত্যিই অনেক বেশি অভিনব লেগেছিলো তার সাজসজ্জা কারণে। তবে সেদিন প্রচণ্ড গরম থাকার কারণে আমাদের মধ্যে কেউই চা খায় নি। তবে সেখানে আখের রস বিক্রি হচ্ছিলো, তাই আমরা আখের রস ও কোল্ড ড্রিংকস কিনে নিয়েছিলাম। আর চারজনে মিলে সেগুলো খেতে খেতেই সেই দোকানের পুরনো ইতিহাস শুনছিলাম দোকান মালিকের মুখেই।
কারণ অনেকেই কৌতুহলবশত তার কাছে ছবি সংক্রান্ত বিষয়গুলি জানতে চাইছিলো। আমরাও যেহেতু সেখানে উপস্থিত ছিলাম তাই ওনাদের সাথে সাথে আমাদেরও শোনা হলো। আসলে কুমোরটুলিতে বহু বাংলা সিনেমার শুটিং হয়, এটা বোধহয় আপনারা দেখেছেন।
![]()
|
---|
![]()
|
---|
তাই যতো শুটিং কোমরটুলিতে হয় সেই শুটিংয়ের ফাঁকে প্রত্যেকেই বিশ্রাম নেয় এই চায়ের দোকানে। আর এই দোকান থেকেই ওদের জন্য চা, বিস্কুট, জল সমস্ত কিছু সরবরাহ করা হয়। এই কারণেই শুটিং করতে আসা প্রত্যেকটি শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার সুবর্ণ সুযোগ পান দোকান মালিক ও তার স্ত্রী। কারণ দুজনে মিলেই সম্পূর্ণ দোকানটা সামলান।
চায়ের দোকানটা ছোটো হলেও তাতে উপচে পড়া ভিড় আপনাকে বলে দেবে এই দোকানের পরিচিতি কতখানি। টলিউডের প্রায় সকল নামিদামি শিল্পীরাই এখানে এসে শুটিং করেছেন, এই দোকানের চা খেয়েছেন এবং ছবি তুলেছেন দোকান মালিকের সাথে। যে ছবিগুলো ওখানে দাঁড়িয়ে আমিও তুলে এনেছিলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
![]()
|
---|
দেখতে দেখতে মানুষের ভিড় আরও বাড়তে শুরু করলো তাই আমরাও আমাদের আখের রস পান করা শেষ করে দোকান থেকে বিদায় নিলাম। বেশ ভালো একটা অনুভূতি নিয়েই ফিরলাম সেখান থেকে। গলি ধরে এগোতে এগোতেই রাস্তায় ওঠার মুখে খেয়াল করলাম রাস্তার উল্টোদিকে এক বিশাল লাল রঙের বিল্ডিং। এই লাল রঙের বিল্ডিং গুলো আমাকে পুরনো কলকাতার ইতিহাস আরও বেশি করে মনে করায়।
![]()
|
---|
![]()
|
---|
ফিরতি পথে তিনজনে মিলে একটা ছবি তুলে নিলাম। কুমোরটুলি ছেড়ে বেরোনোর মুহূর্তেই চোখে পড়লেও শ্বেত পাথরের তৈরি করা বিভিন্ন মূর্তির একটি ছোট্ট দোকান। যেখানে দুটো মূর্তি আমার চোখ কাড়লো, তাই ক্ষনিকের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। কি অপূর্ব লাগছে না মূর্তিটি? আমার তো ভীষণ ভালো লেগেছে, আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।
যাইহোক তারপর সেখান থেকে আমরা বাসে করে রওনা করলাম আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। সেখানে ঘোরার অভিজ্ঞতা আমি ইতিপূর্বেই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। তবে যে বিষয়টি আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়নি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার পথে বাস আমাদেরকে রাস্তার যে পাশে নামিয়ে ছিলো, রাস্তা পার করে আমাদেরকে উল্টোপাশে যেতে হতো।
![]()
|
---|
রাস্তা পার করতে যাওয়ার মুহূর্তেই দেখলাম রাস্তার এপরে অনেকগুলো পায়রা একসাথে খাচ্ছে। একসাথে এতো পায়রা কলকাতার বুকে দেখতে পাওয়াও খানিক সৌভাগ্যের বিষয়। অনেক মানুষ রাস্তার উপরেই তাদেরকে খেতে দেয় এবং তারা একসাথে সেখানে দল বেঁধে খায়। আর খাওয়া শেষ করে নিজেদের মতন উড়ে যায়। ছবিটা খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, উপরে আর নিচে মিলে এখানে অনেক পায়রা রয়েছে। তাই এমন দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করার সুযোগ আর হাতছাড়া করতে পারলাম না।
![]()
|
---|
এরপর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে সেখানে আরো সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপভোগ করে সন্ধ্যা নাগাদ আমরা সকলে এসে পৌঁছালাম শিয়ালদহ স্টেশনে সেখান থেকে ট্রেন ধরে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম একটা দিন সকলে মিলে খুব সুন্দর ভাবে পার করেছিলাম সব থেকে উপভোগ্য ছিল দুটি ঐতিহাসিক স্থান দর্শনের অভিজ্ঞতা।
কেমন লাগলো আপনাদের কাছে এই দুটি পর্বে কুমোরটুলি ঘোরার অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়ে, সেটা অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে আমার সাথে শেয়ার করবেন। আর সম্ভব হলে নিজেরাও একবার অবশ্যই ঘুরে দেখবেন, কলকাতার ঐতিহ্যবাহী স্থান এই কুমোরটুলি।
ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।