"ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই সকল শক্তির আধার"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আমার শেয়ার করা গতকালকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে আমার দিদি বাড়িতে হওয়া শিব গুরু চর্চা পুজোর কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছিলাম। একেবারে শেষে জানিয়েছিলাম, এই পুজো সংক্রান্ত একটি বিষয় আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আপনারা যারা আমার গতকালের পোস্ট পড়েছেন, তারা আশাকরি একটা ছবি দেখেছেন যে ছবিটি মূলত পুজো করা হয়েছিলো। যদিও এটা শিব ঠাকুরের আরাধনা ছিলো, কিন্তু শিব ঠাকুরের কোনো মূর্তি বা ছবি কিন্তু এই দিন পুজিতো হয়নি। এদিন পুজিত ছবিটি দেখে আমার মনে কৌতুহল জেগেছিলো, কেন এই রকম একটি ছবিকে ওনরা এই দিনে পুজো করেন? কারণ শিব ঠাকুরের এমন ছবি বা ফটো আমি এর পূর্বে কোথাও দেখিনি।
যখন দিদি এবং ওর প্রতিবেশী দিদি মিলে পুজোর সমস্ত আয়োজন করেছিলেন, তখন এই প্রশ্নটা করাতে ওই দিদি আমাকে এই ছবির মূল কাহিনীটি বলেছিলেন। আজ সেটাই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
![]() |
---|
ওনার কথা অনুযায়ী মহাদেব শিবের একজন একনিষ্ঠ বিহারী ভক্ত ছিলেন। নিজেকে শিব ঠাকুরের পূজায় ব্রতি রেখেছিলেন বহু বছর ধরেই। আর প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন, একটাই ইচ্ছা নিয়ে যে, তিনি একবার শিব ঠাকুরকে নিজের চোখে দেখতে চান। এমন ভাবেই দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ভগবান শিব তার ভক্তের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তাকে দেখা দেন।
তবে তার উপস্থিতির উজ্জ্বল্য এতটাই প্রখর ছিল যে, সেই ভক্ত চোখ মেলে ভগবানের মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ দর্শন করতে পারেননি। আসলে চর্মচক্ষু দিয়ে বোধহয় ভগবানের উপস্থিতি এমন ভাবে দেখা আমাদের মতন সাধারন ভক্তদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু তবুও তিনি তার দর্শন দিয়েছিলেন এটাই বা কম কিসে? যাইহোক সেই প্রখর তেজ রশ্মির মধ্যে দিয়ে তিনি ভগবানের মুখদর্শন করতে না পারলেও, যতটা তিনি তার দিব্য চক্ষুতে দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন, সেই চিত্রই হলো এই ছবিটি। যেটি বিহারী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতি ঘরে ঘরে শ্রাবণ মাসে পুজিত হয়।
আমার বিশ্বাস এই রকম চিত্র পট আপনারা হয়তো এর পূর্বে অন্য কোথাও দেখেননি।অনেক সময় আমরা মেলায় অনেক ফটোর দোকানে বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখে থাকি, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মহাদেবের এমন ছবি এই দিনে প্রথম দেখলাম এবং এর পিছনের যে মূল কাহিনী সেটাও শুনলাম।
এরপর আপনাদের সাথে যে ঘটনাটি শেয়ার করবো, সেটি হল ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি মানুষের মনোবল কতখানি বাড়িয়ে তুলতে পারে তার একটা সামান্য উদাহরণ।আপনাদের জানিয়েছিলাম দিদি বাড়িতে এই অনুষ্ঠানে মূলত মহিলারাই শিব ঠাকুরের নাম গান করে থাকেন। দিদিদের বাড়িতে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন যিনি এই দলের প্রধান সঙ্গীতশিল্পী। এমনকি গানের সাথে সাথে নিজেই বাদ্যযন্ত্র বাজান। আর তার গলার সুর এতো সুন্দর যে, সেই গান শুনে আপনার ভেতরেও যেন তাল উঠতে থাকবে।
যাইহোক প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে দিদি আমাকে বললো, ওই মহিলা একজন ক্যান্সার পেশেন্ট এবং জেনে আরো অবাক হলাম ওনার ক্যান্সার হয়েছে গলায়। আসলে ওনার থাইরয়েড থেকে ক্যান্সার হয়েছে, যে কারণে গলাটা কেটে থাইরয়েড গ্রন্থিটা বাদ দিতে হয়েছে। সেই সময় ওনার একেবারেই বাঁচার কথা ছিল না। যাইহোক সেই সময়ের তুলনায় এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ, তবে এখনো রীতিমতো ওনাকে টাটা ক্যান্সার হসপিটাল থেকে কেমো নিতে হয়।
অথচ ওনার গলার স্বর শুনে, ওনার গান শুনে বোঝার উপায় নেই যে উনি এত বড় একটা অসুখ থেকে উঠেছেন এবং এখনো তার চিকিৎসা চলছে। ওনরা অনুষ্ঠান শেষ করে প্রসাদ নিয়ে চলে যাওয়ার পর দিদির প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনলাম, তিনি এই শিব গুরুর একনিষ্ঠ ভক্ত। গোটা শ্রাবণ মাসে জুড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার বাড়িতে উনি এই অনুষ্ঠান করেন এবং একাই সমস্ত বাড়িতে গান গেয়ে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
উনি বিশ্বাস করেন ওনার এই মানসিক ও শারীরিক শক্তির মূল আধার হলো শিব গুরুর আর্শীবাদ। কারণ ঈশ্বর ওনার সহায় না হলে, ঈশ্বর তার নাম কীর্তন করার সুযোগ না দিলে, তার পক্ষে করা কখনোই সম্ভব হতো না। এই ঘটনাটা জানার পর সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। একজন মানুষের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি তাকে কতখানি মানসিক ও শারীরিক জোড় দিতে পারে যে, তিনি এই ধরনের অনুষ্ঠান নির্দ্বিধাই করে চলেছেন। এই ঘটনা জানার পর সত্যিই মনে হয়েছিল যে, "বিশ্বাস মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর" এই প্রচলিত কথাটি মিথ্যে নয়।
যাইহোক হয়তো আলাদা করে ওনার কোনো ছবি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না, কারণ তেমনভাবে আলাদা ছবি তোলা হয়নি। তবে সেদিন একটা ভিডিও করেছিলাম, এখান থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে দুটো ছবি শেয়ার করলাম, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন আমি কোন মহিলার কথা বলছিলাম।
এই দুটি ঘটনা সেদিন আমাকে বেশ অবাক করেছিলো। দিদি পর্যন্ত মহিলাটির কথা জেনে অবাক হয়েছিলো, কারণ ও এই ধরনের পেশেন্ট মাঝেমধ্যেই হসপিটালে দেখে থাকে। যাদের এইরকম থাইরয়েড গ্রন্থির অপারেশন হয়। তবে এইরকম একটা অপারেশনের পরেও যে এইরকম ভাবে গান করা সম্ভব, এই বিষয়টি সামনাসামনি দেখার পর ও নিজেও অবাক।
যাইহোক আমারও ইচ্ছে ছিলো আপনাদেরকে বিষয়গুলি একবার জানাই, কারন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এ কথাটা আমরা মুখে যতবার বলি, হয়তো উদাহরণস্বরূপ এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সব সময় সুযোগ হয় না।
যাইহোক আজকের পোস্ট এখানে শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।