"খারাপ সংবাদে ভরা একটি দিনযাপনের গল্প"

in Incredible India4 days ago
IMG_20250604_213929.jpg

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলেরই আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে। সত্যি কথা বলতে আমার দিনটি আজ একেবারেই ভালো কাটেনি। সারাদিন এতোগুলো খারাপ সংবাদ শুনেছি যে, মনটা বড্ড বেশি খারাপ হয়ে আছে।

তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে সেই কথাগুলো শেয়ার করি। সত্যি কথা বলতে জীবনে ভালো কথা হোক কিংবা খারাপ কথা, আমার জীবনে সেই কথাগুলো শেয়ার করার মত মানুষের সংখ্যা যেন দিন দিন কমে আসছে। আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটা বিষয় খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে শিখেছি যে, আমরা যতই ভাবি না কেন আমাদের সকল প্রিয়জন বা আমাদের আশেপাশে যারা পরিচিত রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই আমাদের খারাপ লাগার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনে বা আমাদের খারাপ লাগা গুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন।

IMG_20250604_213511.jpg

বাস্তবে কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। সবাই কেবলমাত্র শোনার ভান করে বা বোঝার ভান করে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা আমাদের অনুভূতিগুলো ততটাও উপলব্ধি করতে পারে না, যতটা তারা ভান করে। এটাই হয়তো জীবনের আসল বাস্তবতা। যতক্ষণ কারোর জীবনে একই ঘটনা না ঘটে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, সেই একই ঘটনা ততটাও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবো না। এই কথাটা শুধু অন্যের ক্ষেত্রে নয়, আমার নিজের ক্ষেত্রেও ততটাই সত্যি।

যাইহোক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনকার মতন সমস্ত কাজই শেষ করেছিলাম। শুভর টিফিন গুছিয়ে দেওয়ার পর কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসবো, এমন সময় আমার শ্বশুর মশাই এসে জানালেন, আমাদের যিনি গুরু মা রয়েছেন অর্থাৎ আমার শশুর শাশুড়ি মা যে গুরুদেবের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, তার স্ত্রী। এই একই গুরুদেবের কাছ থেকে আমি ও শুভও দীক্ষা নিয়েছি। যাইহোক ঐ গুরু মা হঠাৎ করে শনিবার দিন মারা গেছেন।

IMG_20250604_213603.jpg

আসলে আমাদের পাশের বাড়িতেও একজন রয়েছেন, যারা একই গুরুদেবের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে শ্বশুর মশাই শুনে এসেছেন। এরপর শাশুড়ি মা ফোন করায় জানতে পারলাম, তিনি পুকুরে গিয়েছিলেন থালা বাসন ধুতে এবং সেখানে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরবর্তীতে তাকে পুকুর থেকে তুলে আনা হলেও ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছিলেন।

এই ঘটনাটার কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের পরিচিত একজন আমার শ্বশুর মশাইয়ের ফোনে ফোন করে আরও একজনের মৃত্যু সংবাদ দিলেন। আমি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি না। তবে শাশুড়ি মায়ের মুখে তার কথা শুনেছি, যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন। তাই তিনি মারা গেছেন শুনে ততটা খারাপ লাগেনি।

এরপর বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই আমার ননদ ফোন করে জানালো, তাদের বাড়ির সামনে দুপুরের দিকে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। যেখানে বাইকে থাকা তিনটি ছেলে জায়গায় মারা গেছে। ছেলে গুলোর বয়স খুব বেশি নয়। তিনজনের কারোর মাথাতেই হেলমেট ছিলো না এবং বেশ স্পিডেই ওরা বাইক চালাচ্ছিল।বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাইকটা সমেত ওরা ছিটকে পড়েছিল এবং বেশ কিছুটা দূর পর্যন্ত বাইকের সাথে ঘসতে ঘসতে এসেছে।

IMG_20250604_213345.jpg

তবে শেষ পর্যন্ত কাউকে নাকি চেনাই যাচ্ছিলো না। কথাটা শুনেই মনটা খারাপ হলো। একই সাথে তিন মায়ের বুক খালি হলো। আসলে আমরা সন্তানেরা বোধহয় রাস্তায় বেরোলে আর বাবা-মায়ের কথা ভাবি না। বিশেষ করে বাইক জিনিসটা আমার এতটাই অপছন্দ যে, সেটা বলার ভাষা নেই। কিন্তু প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার তো করতেই হয়।

যাইহোক দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবেমাত্র বসেছি। আমার বান্ধবী ফোন করে জানালো, আমার এক বন্ধুর দাদু মারা গেছে, সে নাকি ফেসবুকে পোস্ট করেছে। বান্ধবীর কথা শুনে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম যে, হ্যাঁ আমার বন্ধুর দাদু মারা গেছে গত পরশু। দাদুর একটা ছবিও দিয়েছে। ছবিটা দেখেই পুরনো দিনের কত স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো তা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

কলেজে পড়াকালীন এই বন্ধুর বাড়িতে যখন যেতাম, তখন এই দাদুর সাথে কত যে হাসি মজা করেছি, তার কোনো হিসেব নেই। বয়সের কারণেই তিনি মারা গেছেন। তবে ছবিটা দেখে নিজেকে আটকাতে না পেরে ওকে ফোন করলাম। জানতে পারলাম শুধু দাদু নয়, তার ১৬/১৭ দিন আগে ওর শাশুড়ি মা ও মারা গেছেন।

যদিও ৬-৭ বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন, তবে কয়েক দিনের মধ্যে একদিকে শাশুড়ি মা, অন্যদিকে দাদুকে হারালো ও। কর্মসূত্রে ও বিদেশে থাকে, তাই না শাশুড়ি মায়ের জন্য না দাদুর জন্য, কারোর জন্যই ওর সেখান থেকে আসা সম্ভব হলো না। সেটা নিয়েই আফসোস করছিলো। সত্যিই জীবন আসলে আমাদের কত কিছুর সম্মুখীন করে।

IMG_20250604_213329.jpg

যে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা, তাদের জীবনের শেষ দিনে পাশে না থাকতে পারার মতন আফসোস বোধহয় আর কিছুই হয় না। ওর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর, বেশ খানিকটা মন খারাপ নিয়ে অনেকক্ষণ শুয়ে রইলাম। হিসেব করছিলাম সকাল থেকে একটা দিনের মধ্যে কত কিছুই না শুনলাম।

সব থেকে অবাক হলাম যখন অফিস থেকে এসে শুভ বললো, ওর বন্ধুর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে মধ্যমগ্রামে। বাইক নিয়ে অফিসেই যাচ্ছিলো, উল্টোদিক থেকে আসা আর একটা বাইক তাকে ধাক্কা মারে। আসলে মাঝে একটা কুকুর চলে এসেছিলো, তাই উল্টো দিকের লোকটা কুকুরটিকে বাঁচাতে গিয়ে বাইকটাকে এমন ভাবে ঘুরিয়েছেন যে, সেটা এসে সোজা অভির বাইকে ধাক্কা মেরেছে।

ও তৎক্ষণাৎ সেখানে ছিটকে পড়েছে। অন্য কোথাও কোনো ক্ষতি না হলেও, পায়ের নিচেটা অনেকটা গভীরভাবে কেটে গেছে। সেই সাথে পায়ের দুটি আঙুলও ভেঙে গেছে। পরে শুনলাম ঘা যতক্ষণ না শুকাবে ততক্ষণ প্লাস্টার করা সম্ভব নয়। আর প্লাস্টার করতেই হবে, আর সেটা এক মাস রাখতেও হবে।

এইমাত্র এই খবরটা শুনে আরো বেশি মনটা খারাপ হলো, কারণ শুভ প্রতিদিন বাইকে করে অফিসে যাতায়াত করে। আসলে যতই ভয় করি না কেন, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বাইক ব্যবহার করতেই হবে। সত্যি কথা বলতে অ্যাক্সিডেন্ট শুধুমাত্র যে অসাবধানতার কারণে হয়, এমনটা নয়। নিজে সাবধানতা অবলম্বন করলেও, অন্যের অসাবধানতার কারণেও কখনো কখনো নিজের ক্ষতি হয়। অভির এক্সিডেন্ট তেমনই একটা ঘটনা।

শুভ আবার গেলো অভির সঙ্গে দেখা করতে। আর আমিও বুমিং এর কাজ সেরে আপনাদের সাথে পোস্ট লিখতে বসলাম।। সত্যি কথা বলতে মনটা এতো খারাপ হয়ে আছে যে, কোনো কিছুতেই যেন মন বসছে না। একই দিনে এতগুলো খারাপ সংবাদ কোথাও যেন মনের ভেতরে একটা ভয় সৃষ্টি করছে। গতকাল পর্যন্ত খুব খুশি ছিলাম ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু খবরে যে যে বিষয় গুলো দেখছি, তাতে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়েও আনন্দ যেন কমতে শুরু করেছে। যাইহোক এইভাবে খারাপ সংবাদে ভরা একটা দিন কাটালাম আজকে।

আপনারা সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। অবশ্যই সাবধানে থাকবেন। শুভরাত্রি।


54TLbcUcnRm3sWQK3HKkuAMedF1JSX7yKgEqYjnyTKPwrcsUhSBkR263BW3aGFrDJ4LY4NAcqRpChuw63auxR2oHphrAU559PgwAbnwHoQWQKzZva17V7WKMAKJvwX9UxnTbAxXty.gif

Sort:  
Loading...