"ভিন্ন অনুভূতিতে ভরা একটা দিন যাপনের গল্প"
![]() |
---|
Hello,
Everyone
আশাকরি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলেরই আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।
কোনো কোনো দিন হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের মন খারাপ হয়। কোনো কারণ ছাড়াই ফেলে আসা দিনগুলো মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই সময়, যখন জীবনের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়নি।
যখন ছোটো ছিলাম, তখন বড় হওয়ার বড্ড তাড়া ছিলো। আর আজ ছোটো হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা রয়েছে আমাদের প্রত্যেকেরই।জীবনের নিয়মানুসারে বড় আমাদের হতেই হতো, তবে আজ বড় হওয়ার পরে উপলদ্ধি করতে পারি ছোটো হওয়ার আজ আর কোনো উপায় নেই।
![]() |
---|
যাইহোক বড় হওয়ার সাথে সাথে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি, পরিস্থিতি আমাদেরকে সমস্ত কিছু মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে বাধ্য করে। একটা সময় যে মানুষগুলোকে ছাড়া জীবন কল্পনা করলেও আমরা ভয়ে শিউরে উঠতাম, সেই মানুষ গুলোকে ছাড়াই যখন বছরের পর বছর পার হয়ে যায়, তখনই বোধহয় এই কথাটা আমরা আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে পারি।
আজ সকাল থেকে বেশ ব্যস্ততম সময় পার করেছি। গতকালের পোস্টে জানিয়েছিলাম শুভর ছোটো মাসি এসেছেন আমাদের বাড়িতে। তাকে সাথে নিয়ে আজ শাশুড়ি মা সকালবেলায় ননদের বাড়িতে যাবেন ঠিক করেছিলেন। শশুর মশাইকে রেখে যাবেন এই বিষয়টাতে আমার খুব বেশি সম্মতি না থাকলেও, ওনাকে আটকালাম না। কারণ নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি, কখনো কখনো একটু হলেও পরিবেশের পরিবর্তন সকলেরই প্রয়োজন, না হলে মানসিক ভাবে আমরা নিজেরাও রোগী হয়ে পড়ি।
রাতে ফিরে আসবে তাই খুব একটা আপত্তি করলাম না। তার ওপর আজ ছিলো আমার নিরামিষ, যেহেতু আজ একাদশীর পরের দিন। সকালের কিছুটা রান্না সেরে আমি স্নান করে আগে পারণ করে নিয়েছিলাম। তারপর শুভকে অফিসের জন্য টিফিন রেডি করে দিয়ে অন্যান্য কাজ সেরেছি। শাশুড়ি মায়েরা সকালের ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। এরপর থেকে মোটামুটি বাড়িতে আমি একাই সময় কাটিয়েছি।
শ্বশুরমশাই নিজের মতনই ছিলেন, সময়ে সময়ে ওনাকে ওষুধ দিয়েছি, সুগার মেপেছি, আর ওনার খাবার দিয়েছি এইটুকুই। সকলে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে আমি কমিউনিটির কাজ শেষ করেছি। আজ অ্যাডমিন ম্যাম কর্তৃক আয়োজিত কনটেস্টের শেষ দিন ছিলো, তাই কনটেস্টের সমস্ত ডিটেইলস অ্যাডমিনকে মেইল করার প্রয়োজন ছিলো বলে সেই কাজটা আগে সম্পন্ন করেছি।
তারপর ঘরের কাজ শুরু করার পূর্বে আমি ঠাকুর পুজো দিয়ে নিয়েছিলাম। আজ নিরামিষ রান্না করতে হতো। গতকালের মাছ ফ্রিজে রাখা ছিলো। দুপুরে শুধু আমি ও শ্বশুরমশাই খাবো বলে আলাদা করে আর মাছ রান্না করিনি। সারাদিন ঘরের কাজ গোছাতে গোছাতে নিজের পছন্দের গান শুনেছি। আমি দেখেছি যেদিন যেদিন অনেকটা সময় আমি আমার পছন্দের গান শুনি, সেদিনই হঠাৎ করে আমার মনটা বেশি খারাপ হয়।
নিঃসঙ্গতা এমন একটা অনুভূতি, হাজার মানুষের ভিড়েও সেটা আপনি অনুভব করতে পারবেন। গত অনেকগুলো বছর ধরে এই নিঃসঙ্গতা যেন আমার সঙ্গী হয়েছে, বা বলা যেতে পারে সঙ্গী আগে থেকেই ছিলো, তবে অনেক পরে খুব গভীরভাবে অনুভব করতে শিখেছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় এমনটা বোধহয় শুধু আমার সাথেই হয়। কিন্তু না আমার মনেহয় একটা সময়ের পরে প্রতিটি গৃহবধূর মানসিকতা এমনই হয়ে ওঠে, যেখানে শুধু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে করতে তারা যেন যন্ত্রতে পরিণত হয়।
যদি হিসেব করে দেখা যায় তাহলে হাতে গোনা কিছু মানুষ আছে যারা তাদের জীবনে এমন নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন না। তবে নিঃসঙ্গতার অনুভূতি, তার কারণ ও পরিস্থিতি সকলের জন্য ভিন্ন। তবে কিছু না কিছু, না পাওয়া আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আছে এবং থাকবে। সমস্ত কিছু পাওয়া হয়ে গেলে বোধহয় জীবনটাকে সঠিকভাবে উপভোগ করা সম্ভব হয় না।
![]() |
---|
কিছু আক্ষেপ, কিছু অভিযোগ, কিছু অনুভূতি, কিছু মানুষ, কিছু স্মৃতি, কিছু আফসোস, কিছু সিদ্ধান্ত, মানুষকে জীবনের বাস্তবতা শেখায় বলেই আমার ব্যক্তিগত ধারণা। কিছু মানুষ আমাদের জীবনে আসে কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপহার দেয়। আবার পরিস্থিতির কারণে তারা কোথাও হারিয়ে যায়। কখনো কখনো হারিয়ে ফেলা মানুষ গুলোর জন্য আফসোস হয় আমাদের। মনেহয় তারা জীবনে থাকলে বোধহয় জীবনটা অন্যরকম হতো। তবে সারা জীবন থাকবে না বলেই বোধহয় ওই ভালো সময় টুকু দিতে তারা এসেছিলো, যাতে ওই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে একদিকে যেমন ভালো লাগা কাজ করবে, অন্যদিকে কাজ করবে আফসোসও।
আবার কিছু মানুষের সঙ্গে থেকে যাওয়ার জন্য আমরা জীবনে অনেক পাগলামি করে থাকি। মনে হয় তাদের সঙ্গে থাকলে জীবনটা এতো সুন্দর হবে যেটা হয়তো আমরা কল্পনায় দেখে থাকি। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে থাকতে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে, একটা সময় উপলব্ধি করি এই মানুষটার সঙ্গে না থাকলেই বোধহয় জীবনটা আরও সুন্দর হতো।
এই অনুভূতি আমার একার নয়।অপ্রকাশিতভাবে এই ভাবনাটা বেশিরভাগ মেয়েদের মনেই থেকে যায়। তবে সংসারের যাঁতাকলে এই ভাবনাগুলোকে ভাবার মতন সময় অনেকেই পায়, আবার অনেকেই পায় না। কিন্তু প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু অনুভূতি আছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু স্মৃতি, কিছু গান, কিছু কথা, আজও আমাদের মনের গহীনে থেকে যায়। যার বহিঃপ্রকাশ হয়তো আমরা কখনোই করে উঠতে পারিনা।
![]() |
---|
আর এই সমস্ত না করা গুলো জমতে জমতে একটা সময় গলার কাছে দলা পাকিয়ে আমাদের দম আটকে দেয়। মনেহয় সেই মুহূর্তেই বোধহয় জীবন থেকে ছুটে মিলবে, কিন্তু আদেও ছুটে মেলেনা। আমরা মেয়েরা ওই পরিস্থিতিগুলোও কাটিয়ে ওঠি।
যদি জিজ্ঞেস করেন কিভাবে? সত্যিই বলতে পারব না। তবে মেয়েদের নিয়ে প্রচলিত কথাটা একেবারেই সত্যি যে- মেয়ে মানুষের প্রাণ কৈ মাছের মতো। আমরা যতই ছটফট করি, তবে মরি না সহজে। আর এটাই বোধহয় আমাদের শক্তি, যা পুরুষদের থেকে নারীদের আলাদা করে।
যাইহোক জীবন সম্পর্কে যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বুঝতে পারি জীবনে আর ভালো কিছু হওয়ার নেই। কারণ সবকিছু ভালো আমরা পার করে এসেছি। এই জন্যই সকলে বলে,- যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। ভবিষ্যৎ প্রত্যেকের কাছেই অজানা। তবে কল্পনা আমাদের সকলের কাছে আকাশ সমান। তাই আজও হয়তো ভাবি জীবনে আরও অনেক ভালো কিছু হওয়ার আছে। তবে জীবনের কিছু কিছু দিন আছে যে দিনগুলো ভাবতে বাধ্য করে, যা কিছু ভালো হওয়ার হয়ে গেছে, বাকিটুকু শুধু মেনে নেওয়া।
যাইহোক আজ সারাটা দিন এই রকমই উল্টো পাল্টা কিছু ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পোস্ট লিখতে বসেও অনেকখানি এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরলো। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে চলে যাই, যারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে। আবার কখনো এই পৃথিবীতে থেকে যাওয়া কিছু মানুষের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারি না। এই দ্বিধা দ্বন্দ্বই বোধ হয় জীবনের মূল চাবিকাঠি।
ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।