"উৎকণ্ঠায় ভরা একটা দিন**
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
গতকাল সন্ধ্যা থেকে বাড়িতে উৎকন্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছে একটা দুঃসংবাদ পেয়ে। শুভর জ্যেঠিমা অর্থাৎ আমার জ্যেঠি শাশুড়ির হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। গতকাল তাকে কাছের হসপিটালে ভর্তি করানো হলেও, ভোর রাতে ট্রান্সফার করেছে বারাসাত হসপিটালে। বর্তমানে সেখানে তিনি আইসিইউতে ভর্তি আছেন।
বয়সজনিত কারণে বেশ কয়েকবছর যাবৎ মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে এইবার অসুস্থতা বেশ ঘোরতর। শুনে বাড়িতে সকলের মনখারাপ, তবে শশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে এই সংবাদ পাওয়ার পর।
![]() |
---|
শশুর মশাইয়ের যখন ৭ বছর বয়স তখন জ্যেঠিমা বিয়ে করে বাড়িতে আসেন। সেই ছোট্টবেলা থেকেই বৌদির সাথে তার পরিচয়। কত বছরের সম্পর্ক, পরিচয়, কতশত মুহূর্তের স্মৃতি জমা আছে তাদের মনে, সবটাই হয়ত এইসময় মনকে নাড়া দেয়। জ্যেঠিমা তাকে ভাইয়ের মতোই ভালোবাসতেন। আমার বিয়ের পরও দেখেছি যে কোনো ছোটখাটো অনুষ্ঠান হোক বা কোনো সিদ্ধান্ত, আমার শশুর মশাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলেই তবে জ্যেঠিমা নিয়ে থাকেন।
এমন একজন কাছের মানুষের এমন অসুস্থতার খবর ওনাকে দুর্বল করবে এটা জানা বিষয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত সংবাদটা প্রথমে উনিই পেয়েছেন। আমরা পেলে হয়তো সম্পূর্ণটা জানাতাম না। যাইহোক যেহেতু উনি নিজেও অসুস্থ, তাই ওনাকে নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা রয়েছে।
আরও একটা বিষয় যেটা নিয়ে আমাদের সকলের চিন্তা রয়েছে, সেটা হল আগামী রবিবার আমাদের বাড়িতে একটা ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো, শ্বশুর মশাইয়ের বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্র করে। এর পূর্বে যদিও এই মৃত্যুবার্ষিকীর কোনো আয়োজন করা হয়নি, তবে এইবার শ্বশুরমশাই খুব চাইছিলেন যাতে এই কাজটা করা হয়।
![]() |
---|
ওনার অসুস্থতার কথা ভেবে সকলে সম্মতি দিয়েছে, কারণ কে কখন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে, সেটা আমরা কেউ জানিনা। তাই তার শেষ ইচ্ছে হিসেবে এই রবিবার বাড়িতে বৈষ্ণব সেবার আয়োজন করা হয়েছিলো। তবে এখন এই সংবাদ আসায় সকলেই চিন্তিত আদেও আয়োজন করা হবে কিনা, কারণ যদি জ্যেঠিমা মারা যান, তাহলে এমনিতেই আমাদের বাড়িতে অশৌচ পরবে, সুতরাং তখন বাড়িতে কোনো রকম আয়োজন করা সম্ভব হবে না। এমনকি বাড়ির নিত্য পূজোও বদ্ধ থাকবে।
তাই এখন যদি এতো লোকের আয়োজন অনুযায়ী বাজার করা হয়, তাহলে সেই দিন অনুষ্ঠান না হলে সেই বাজারগুলোর কি হবে, এটা যেমন একটা চিন্তার বিষয়। ঠিক তেমনি যতজনকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আদেও সেই নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত কিনা, এটা নিয়েই মোটামুটি একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বক্ষণই ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে হসপিটালে, প্রত্যেকটা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে জ্যেঠিমার শারীরিক উন্নতি খুব বেশি হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে আদেও রবিবারের অনুষ্ঠানটা নিয়ে কি করা উচিত। যাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে তাদেরকে বারণ করে দেওয়া উচিত কিনা।
একদিকে শশুর মশাইয়ের শেষ ইচ্ছা তার বাবার মৃত্যুবার্ষিক পালন করবেন, অন্যদিকে তার বৌদির শারীরিক অবস্থা, তাই এই পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত সেটাও আমরা শশুর মশাইয়ের উপরেই ছেড়ে দিয়েছি। কারণ যদি আমরা অনুষ্ঠান বাতিল করি তাহলে ওনার মনটা খারাপ হলেও হতে পারে। তাকে সবটাই বুঝিয়ে বলা হয়েছে।
এখন অপেক্ষা শুধু সংবাদ এর, সেটা ভালো হতে পারে অথবা খারাপ। ভালো হলে রবিবার যে অনুষ্ঠানটার আয়োজন করা হয়েছিলো সেটা পালিত হবে এবং খারাপ সংবাদ এলে সবটাই ক্যান্সেল করতে হবে।
![]() |
---|
আমাদের জীবন কতখানি অনিশ্চিত, কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পরেও সেটা সবসময় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না পরিস্থিতির কারণে তা আরও একবার বুঝলাম। শ্বশুরমশাই মাঝে মাঝে এতোখানি অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, আমরাই ভাবি বোধহয় এবার আর হসপিটাল থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না। আবার কখনো কখনো মনে হয় দিব্যি সুস্থ আছেন। বার্ধক্যটা বোধহয় এমনই হয়।
যাইহোক ঈশ্বর যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে, তাতে আমরা যতই দুশ্চিন্তা করি বা উৎকণ্ঠায় থাকি না কেন, তাই এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর সত্যিই কিছু করনীয় নেই। জ্যেঠিমার যা বয়স হয়েছে তাতে তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক এই প্রার্থনা আমি মন থেকে করতে চাই না। বরং ঈশ্বর ওনাকে মুক্তি দিক।
এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। আর অসুস্থ হয়ে বেঁচে থাকাটা আরও বেশি কঠিন। তাই সুস্থভাবে যদি পরপারে যাওয়া যায়, তার থেকে বড় আশীর্বাদ বোধহয় আজকের দিনে আর কিছুই হয়না।
যাইহোক এই কঠিন পরিস্থিতি ধৈর্য্য সহকারে পার করার চেষ্টা করছি। বাড়ির পরিবেশ এতটাই খারাপ হয়ে আছে যে, নিজের মন খারাপের মাত্রা আরও অনেকখানি বেড়ে গেছে। যাক আপনারা সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা সর্বদাই করি, তাই আজও এই প্রার্থনার মাধ্যমে পোস্ট লেখা এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন।
You have been supported by the team:
Curated by: @dove11
Thank you for your support @dove11 Sir. 🙏