"আমার পোষ্য পিকলুর জন্য শেষ আয়োজন"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
কিরে পিকলু কেমন আছিস?
মাঝে একদিন কথা হয়নি আমাদের, তবে নিশ্চয়ই আমার ব্যস্ততা তুই দেখেছিস। যেহেতু পরিবারের একজন ছিলিস তাই পারিবারিক কি কি দায়িত্ব থাকে আমার উপরে সেটা তোর জানা। এমনকি কমিউনিটিরও কি কি কাজ করতে হয় তুই জানিস।
এরপরেও গতকাল থেকে তোর জন্য একটু আলাদা রকমের ব্যস্ততা ছিলো। তাই আর তেমন ভাবে কথা হয়নি। আজ সমস্ত ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠে ভাবলাম, তোর থেকে জেনে নিই তোর জন্য করা সকল আয়োজনগুলো তোর পছন্দ হয়েছে কিনা।
দিব্যি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলি। সারাক্ষণ যেন মনে হয় আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াচ্ছিস। এইরকম একটা অনুভূতি নিয়ে দিন কাটানো কতটা কষ্টকর সেটা তো কখনো অনুভব করলি না, বরং আমাকে তা অনুভব করতে বাধ্য করছিস প্রতিনিয়ত।
![]() |
---|
যাইহোক আজকের এই পোস্ট পড়ে অনেকে হয়তো অনেক রকম ভাববে। তবে ভাবুক তাতে আমার বিশেষ কিছু যায় আসে না, কারণ মানুষ হিসেবে আমরা সকলেই ভিন্ন তাই আমাদের অনুভূতিও ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে লোকে কি ভাববে এটা ভেবে, তোর জন্য যদি এটুকুও করতে না পারতাম, তাহলে বোধহয় নিজে স্বস্তি পেতাম না।
নিজের জীবনের অনেক ইচ্ছেই কখনো পূরণ করিনি শুধু লোকে কি ভাববে এই চিন্তা করে। কিন্তু তোর সাথে এমনটা কিছুতেই হতে দিতে পারতাম না। কারণ তুই আমার জন্য অন্য সকলের থেকে আলাদা ছিলিস, আর আজীবন থাকবি। তাই তোর জন্য এতটুকু তো করতেই হতো।
গতকাল বুমিং এর কাজ শেষ করে বাইরে গিয়েছিলাম। আমি জানি তুই জানিস আমি কেন গিয়েছিলাম। কিন্তু যারা এই পোস্ট পড়বে, তাদেরও জানা উচিত। কারণ এর মধ্যে অনেকেই আছে যারা তোকে ভালোবাসতো।
![]() |
---|
তোর চলে যাওয়ার আজ চার দিন। হিসেব মতো আজ তোর জন্য আলাদা করে কিছু করতে চেয়েছিলাম। হয়তো এ জীবনের মত শেষবার, তারই কিছু কেনাকাটা করার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় বের হতে হয়েছিলো। অবশ্য আমি একা যাইনি, শুভ ও সাথে গিয়েছিলো। দুজনে মিলে তোর পছন্দের সমস্ত জিনিস একটা একটা করে খুঁজে কিনে এনেছি।
হ্যাঁ আমি জানি বেঁচে থাকাকালীন অনেক সময় তোকে তোর পছন্দের জিনিস আমি খেতে দিইনি, তবে কেন দিইনি সেটা কিন্তু তুইও খুব ভালো করে জানিস। তাই ভেবেছিলাম আজ অন্তত তোর পছন্দের সব কিছু সাজিয়ে দেবো, যাতে তুই তৃপ্তি করে খেতে পারিস। হ্যাঁ অনেকেই ভাবতে পারে তুই কি করে এসে খেয়ে যাবি, তবে এটা যার যার বিশ্বাস। তাই বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই।
সবকিছু কিনে এনেছিলাম গতকাল। তবে আয়োজনটা শুরু করেছিলাম আজ সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে। শুভ গতকাল বলে দিয়েছিল আগে ঘরের পুজোটা দিয়ে নিতে। তারপর তোর জন্য সবকিছু রান্না করতে। ও হ্যাঁ তোর বন্ধুদেরকে আজ নিমন্ত্রণ করেছিলাম। ওদেরকে না দিলে তো আবার তোর রাগ হতো।
তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে, আগে পুজোর ফুল তুলেছি। তারপর সমস্ত ঘর মুছে, তোকে খেতে দেওয়ার জন্য আনা মাটির থালা, গ্লাস ভালো করে ধুয়ে জল ঝরানোর জন্য রেখে দিয়েছিলাম। তারপর বাড়ির নিত্য পূজো করে, রান্না বসিয়েছিলাম।
![]() |
---|
তোর পছন্দের তেলাপিয়া মাছ, মাংস, সয়াবিন সিদ্ধ, ডাল সিদ্ধ, পেডিগ্ৰি, গ্রেভি চিকেন, পাউরুটি, রসগোল্লা, বাবুজিকেক, টকদই, শাকআলু আর সবশেষে তোর খুব পছন্দের আমলকি। এইটুকু আয়োজন তো আমাকে করতেই হতো, না হলে এর মধ্যে থেকে কোনো জিনিস বোধহয় এ জীবনে আমি আর কখনো খেতে পারতাম না।
হ্যাঁ আর তার সাথে মোমবাতি, ধূপকাঠি, রজনীগন্ধা ফুলের মালা, গাঁদা ফুল, সমস্তটাই নিয়ে এসেছিলাম। ঘরের ঠাকুরের পূজো দেওয়ার পর তোর জন্য সুন্দর করে চেয়ার সাজিয়েছিলাম। তোর ব্যবহার করা তোয়ালে দিয়েছিলাম, তার সাথে তোর পছন্দের পারফিউম। তোকে তো চেয়ারের উপরে অনেকবার বসিয়েছি, আজ তোর ছবিটা বসানোর সময় খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
![]() |
---|
তুই খুব ভালো করে জানিস মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে মায়ের ফটোতে মালা দিতে আমার ঠিক কতখানি কষ্ট হয়। আজও আমার তোর ছবিতে মালা দিতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবে আজ দিতে হয়, আর তোরও তো গন্ধ কত প্রিয় ছিলো। তাই শেষমেষ দিলাম। আচ্ছা তোর পছন্দের পেডিগ্রি ও রসগোল্লা দিয়েছিলাম, খেয়েছিস তো?
![]() |
---|
এরপর এক এক করে সমস্ত রান্নার শেষ করলাম। তারপর তোর থালা সাজালাম। আমি জানি এতো সুন্দর করে থালা সাজিয়ে এর আগে আমি তোকে কখনো খেতে দিইনি। বরং সবকিছু একসাথে খেতে চাইলে তোকে আমি বকা দিতাম। কিন্তু আজ আর বকা দেওয়ার উপায় নেই, আর তোকে নিজের হাতে খাওয়ানোরও উপায় নেই। তাই জন্যই তো এই আয়োজন, যাতে অন্য কারো মাধ্যমে হলেও তুই যাতে মন ভরে এসে খেয়ে যেতে পারিস।
![]() |
---|
আজ গিয়েছিলাম তোকে যেখানে রেখে এসেছি সেখানে। ইচ্ছে করছিল না জানিস, কিন্তু মনে হল তুই বোধহয় আমার ওপরে রাগ করবি, তাই একবার যাওয়া উচিত। ওখানে গিয়েও তো সবটা নিজের হাতেই করলাম। দেখেছিস কতখানি শক্ত করে দিয়ে গেছিস আমায়? সেখানেও সব আয়োজন নিজের হাতে করে তোকে খেতে দিয়ে এলাম।
প্রার্থনা তো শুধু একটাই তুই যাতে পরজন্মে খুব ভালো থাকিস। এতটা ভালো যতটা আমি হয়তো তোকে রাখতে পারিনি। সন্ধ্যার পর আবার দেখলাম, খুব ভালোভাবে খেয়েছিস। পছন্দ হয়েছে নিশ্চয়ই সব খাবারগুলো?
ভালো লাগলো জানিস দুপুরে তোর বন্ধুদেরকে অনেক মাংস ভাত দিয়েছি, তার সাথে তোর পছন্দের পেডিগ্রিও ছিলো। খুব তৃপ্তি করে খেয়েছে ওরা।
আজ সত্যিই মনে হল মানুষদেরকে ডেকে খাওয়ানোর থেকে বোধহয় তোর বন্ধুদেরকে ডেকে খাওয়ানো অনেক ভালো। অন্তত মানুষের মতো তোরা পিছনের সমালোচনা করিস না। যেটাই ভালোবেসে দিই, খুব তৃপ্তি সহকারে তোরা খেয়ে নিস। এমনটা এখন থেকে মাঝে মধ্যেই করবো জানিস? তোকে তো আর নিজের হাতে খাওয়াতে পারবো না, তোর বন্ধুদেরকে খাওয়াবো।
ভালো থাকিস তুই, আর আমাকে ভালো থাকার শক্তি যোগাস। আমার যখন মন অনেক খারাপ হতো, তখন তোকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম। এখন তো সে উপায় নেই আমি জানি, কিন্তু তুই সারা জীবন আমার কাছে এমনই থাকবি, যেমন ছিলিস। তোর জায়গা আর কেউ, কখনো, কোনো ভাবে নিতে পারবে না। কারণ কেউ আর আমার পিকলু হতে পারবে না।
পিকলুরে চলে যাওয়া আপনাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে এটা আমি কিছুটা অনুভব করতে পারছি। দীর্ঘদিন ধরে আপনার পোস্ট পড়ে তার জন্য আলাদা একটি ভালোবাসা দেখেছি। আজ চার দিন সে আপনার মাঝে নাই তার অনুভূতিটা কেমন হচ্ছে এটা ঠিক আমরা বুঝতে পারি। তার চলে যাওয়ার শেষ আয়োজনটা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পোষ্টের প্রত্যেকটি লাইনে তার প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। অনেক খারাপ লাগলো পিকলুর জন্য সে আজ আপনাদের মাঝে নেই। কি আর বলবো আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কথা আমি খুজে পাচ্ছি না। তবে আমরা তো চিরস্থায়ী যেমন থাকি না তারাও থাকে না তাই সব কিছু মানিয়ে চলতে হবে আমাদের।
যাকে নিজের সন্তানের মতো করে লালন -পালন করা হয় তার চলে যাওয়া যে কতটা কষ্ট দেয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি ,তাই আপনার মনের অবস্থাও বুঝতে পারতেছি খুব ভালো করেই। চলে যাওয়ার পরে এক অবর্ণনীয় শূন্যতা দেখা দেয় চারপাশে। আমি কদিন আগেই এই শূন্যনার সম্মুখীন হয়েছিলাম।
অবশ্য ক্যারামেল আমার জীবনে আসার পরে সেই শূন্যতাবোধ খানিকটা কমেছে। তারপরও বাড়ির সবার মুখেই সিম্বার নাম উচ্চারিত হয় কিছু হলেই। ওকেও অনেক সময় সিম্বা ডেকে ফেলি নিজের অজান্তেই।
ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবো নতুন কোনো পোষ্য নিয়ে আসুন সম্ভব হলে। যদিও জানি পিকলুর জায়গা সে কখনো নিতে পারবে না।
আপনি ওর আত্মার শান্তির জন্য যা করেছেন সেটা প্রশংসনীয়। প্রার্থনা করি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
আপনি একেবারেই ঠিক বলেছেন আমরা অনেক কিছুই লোকে কি বলবে এটা ভেবে করি না তবে আপনি পিকলুর জন্য যা যা করেছেন সেটা দেখে বেশ ভালই লাগছে। তার পছন্দের সমস্ত কিছু আয়োজন করেছেন শেষ পর্যন্ত তাকে গিয়ে খাবার দিয়ে এসেছেন তার প্রতি আপনার ভালোবাসাটা সত্যিই একটা মা এবং একটা সন্তানের মত।
বিশেষ করে তার লিভার এর সমস্যা নিয়ে আপনি কতবার ডাক্তার দেখিয়েছেন তাকে ঔষধ খাওয়ানো জোর করে। সবটাই আপনি তাকে সন্তানের মত ভালোবাসা দিয়েছেন। এখন শুধু দোয়া করবেন যেন সে পরকালে ভালো থাকতে পারবে।