"নির্ঘুম রাতের গল্প"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
এই মুহূর্তে দুচোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে, কারণ গতকাল থেকে এখনো পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি। না ঘুমানোর পিছনেও যথেষ্ট কারণ আছে, সেই কারণটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এই পোস্টের মাধ্যমে।
সময় ও পরিস্থিতি আমাদের কতখানি শক্ত করে তোলে তা আরও খানিকটা গতকাল রাতে অনুভব করলাম। পুরোনো কোনো একটা পোস্টে আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম, আমার জ্যেঠিশাশুড়ি অর্থাৎ শুভর জ্যেঠিমা হসপিটালে ভর্তি আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট খারাপ।
একটানা ১৯ দিনের লড়াই গতকাল সন্ধ্যা বেলায় শেষ হয়েছে। জীবন মরণের মাঝের এই ১৯টা দিন অনেক শারীরিক যন্ত্রণা পেয়েছেন তিনি, একথা হসপিটালের ডাক্তার থেকে শুরু করে নার্স সকলেই বলেছেন।
গতকাল সন্ধ্যা দিতে যাবো তাই গেটের তালা খুলে সবেমাত্র ঘরে ঢুকেছি, দেখছি শাশুড়ি মা ফোনে কথা বলছে এবং ইশারাতে আমাকে সন্ধ্যা দিতে বারণ করছেন। বারণের কারণটা বুঝতে বাকি রইলো না, তাই খাটের পাশে চেয়ারে বসলাম শাশুড়ি মায়ের ফোন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।
ফোন রাখার পর যে খবরটার কথা মনে মনে আন্দাজ করেছিলাম, সেটাই শুনতে পেলাম। যেহেতু আমাদের একেবারে ঘরের, তাই আমাদের অশৌচ শুরু হয়েছে। এই কারণেই ঠাকুর পূজো বন্ধ থাকবে ১১ দিন পর্যন্ত। এর পিছনের যুক্তিটা কতটা সঠিক সেটা বিতর্কের বিষয়, তাই সেই বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত না জানানোটাই শ্রেয়।
যাইহোক যেহেতু বাড়ির মধ্যে উনি বর্তমানে সব থেকে বড় ছিলেন, তাই একসাথে না থাকলেও দূরত্বের কারণে সম্পর্ক অস্বীকার করা যায় না। এরকম কিছু ভাবনাচিন্তা থেকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, সকলেই তাকে শেষবারের মতো দেখতে যাওয়া হবে।
তবে হসপিটাল থেকে বাড়ি আনতে আনতে এতটাই রাত হবে যে, অতো রাত্রে আবার বাড়িতে ফেরাটা কঠিন। তাই ঠিক হলো শুভ অফিস থেকে এসে বাড়িতেই থাকবে, আমি গাড়ি ভাড়া করে শ্বশুর এবং শাশুড়িকে নিয়ে সেই বাড়িতে যাবো। শাশুড়ি মা যদিও শশুর মশাইকে নিয়ে যেতে চাইছিলেন না।
তবে দেখতে গেলে সাত বছর বয়স থেকে যার সঙ্গে তার মায়ের মত সম্পর্ক, জীবনে শেষবার মানুষটিকে না দেখতে পারার আক্ষেপ তার থেকে যাবে, এই বিষয়টি কোথাও আমি মানতে পারছিলাম না। তাই বলতে পারেন কিছুটা জোর করে ওনাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললাম। কারণ মনে মনে উনিও সেটাই চাইছিলেন। আর যেহেতু এখন শরীরও কিছুটা ভালো আছে, তাই গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হলো।
ওষুধপত্র সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিতে হয়েছিলো, কারণে রাতে ইনসুলিন থেকে শুরু করে খাওয়ার ওষুধ সবটাই ছিলো। তারসাথে রুটিও নেওয়া হলো শশুর মশাইয়ের জন্য।যাইহোক গাড়ি আসলো রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। আমরাও রওনা করলাম সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে পৌঁছাতে আমাদের রাত দশটার বেশি বেজে গেলো, বাড়ির সামনে রাস্তায় তখন মানুষের ভিড় চোখে পড়লো।
গ্রামের দিকের এই বিষয়টি আমার বরাবর ভালো লাগে। একজনের বিপদের সারা গ্রামের মানুষ এমন ভাবে পাশে এসে দাঁড়ায় যেন তারা প্রত্যেকেই ভীষণ আপনজন। রাত দেড়টা পর্যন্ত আমরা সকলেই বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে বসেছিলাম। চারিদিকে শুধু কান্নার শব্দ, সেই পরিস্থিতি লেখার মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার যে আর্তনাদ সন্তানদের কান্নায় সেই মুহূর্তে শোনা যাচ্ছিলো, তা আসলে সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের মনকে খারাপ করে তুলছিলো। আর আমার ক্ষেত্রে এই সিচুয়েশনটা আরো অনেক বেশি কঠিন ছিলো, কারণ মাকে হারানোর দিনগুলো কেমন যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।
![]() |
---|
বহু অপরিচিত মানুষের সাথে কাল কথা হলো, সকলের সাথে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, সেই মানুষটির মৃতদেহ বাড়িতে আনার অপেক্ষায়, যার উদ্দেশ্যেই গতকাল রাতে সবাই একত্রিত হয়েছিলো।অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো কিছুক্ষণ বাদেই।মৃতদেহ বাড়িতে আসার সাথে সাথে আরো একবার কান্নার রোল শুরু হলো।
হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুসারে যে সকল নিয়মগুলো পালন করার থাকে, সেই সমস্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার পর রাত প্রায় তিনটে নাগাদ সকলে মিলে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা করলো। তারপরও বেশ কিছুক্ষণ আমরা প্রত্যেকে বাড়ির উঠোনেই বসে রইলাম। গ্রামের দিকে কিছুক্ষণের মধ্যে ভোরের আলো দেখা শুরু হলো।
সকলেই একটু বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়লো। তবে আমার এতোটুকুও ঘুম এলো না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সকলের সাথে কথায় কথায় সময় কাটল। সকাল প্রায় আটটা নাগাদ শ্মশান থেকে প্রত্যেকে ফিরে এলো। তারপরে আরও কিছু নিয়ম কানুন থাকে সেইগুলো শুরু হল এক এক করে।
এত কিছুর মধ্যে গতকাল আর পোস্ট লিখতে পারিনি। ওই সিচুয়েশনে হাতে ফোন নিয়ে সত্যিই আর কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়নি। সকলেই কমবেশি পাশে বসে কথা বলছিলেন। তাই তাদের সামনে তাদের কথাকে উপেক্ষা করে পোস্ট লেখাতে মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না কিছুতে। সকালে ফোন হাতে নিয়ে দেখি চার্জও শেষ। কার কাছে চার্জার চাইবো সেটা ভাবতেই বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো, এরপর একটা চার্জার খুঁজে পেয়ে ফোনটা চার্জে বসালাম।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। তাই দুপুরবেলায় পাশের বাড়ির একজন প্রায় জোর করে তার বাড়িতে আমাদেরকে খেতে নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রামের দিকে এই জিনিসগুলো আজও চোখে পড়ে। সেখানে অল্প একটু ভাত খেয়ে আবার ফিরলাম বাড়িতে। ততক্ষণে ব্রাহ্মণ এসেছেন। বাকি সমস্ত জিনিসপত্র কেনার জন্য অনেকে বাজারে চলে গেছেন। কারণ আজ থেকে আগামী ১১ দিন পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের অনেক কিছু নিয়মাবলী থাকে. যদিও মেয়েদের কাজ ৪ দিনেই সম্পন্ন হবে।
বাড়িতে আসার জন্য সকাল থেকেই তোরজোড় করছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিলো যে, কথাটা কিছুতেই ববলা যাচ্ছিলো না। তবে শ্বশুরমশাই এর শারীরিক অবস্থা ততটাও ভালো নয়, তাই চাইছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে বাড়ি নিয়ে আসতে। এরপর দুপুরের পরপরই ঠিক করলাম আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবো। সেই মতো একটা গাড়িও ঠিক করা হলো।
ইতিমধ্যেই শুরু হল বৃষ্টি। তাই বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টি কমার অপেক্ষা করার পর, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। বাড়িতে ফিরে স্নান করে, জামা কাপড় সমস্ত কিছু ধুয়ে তারপর ঘরে ঢুকতে পারলাম। স্নান করার পর যেমন পেয়েছিল খিদে, তেমনি পাচ্ছিল ঘুম। শাশুড়ি মা দুটো সিদ্ধ ভাত বসালেন। আর আমিও কমিউনিটির কিছু কাজ করলাম। ফোনের চার্জ প্রায় শেষের দিকে, তাই চার্জে বসিয়ে পোস্ট লেখা শুরু করলাম।
এইভাবে একটা নির্ঘুম রাত কেটেছে গতকাল। খুব সত্যি কথা বলতে যিনি মারা গেছেন তার সাথে হয়তো আমার সম্পর্কের গভীরতা ততখানি ছিল না। কিন্তু তৎসত্ত্বেও নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে আমাকেও বেশ কিছু নিয়ম পালন করতে হবে আগামী ১১ দিন পর্যন্ত।
তবে শ্বশুরমশাই বেশ ভেঙ্গে পড়েছেন, যেহেতু তার সাথে মানুষটির ছোটবেলা থেকে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। হয়তো সেই জিনিসগুলোই ওনার মনে পড়ছে বারংবার। যাইহোক সবকিছুর পরেও যে কোনো মানুষের মৃত্যুই কষ্টকর। আর যাদের আপনজন হারিয়েছে তারা বোধহয় সেটা আরও গভীরভাবে অনুভব করেন।
তবে উনি যে পরিমাণে কষ্ট পাচ্ছিলেন তা থেকে উনি মুক্তি পেয়েছেন এটা ভেবে অন্তত ভালো লাগছে। একজন মানুষ ৮৩ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে আছেন, এর থেকে বেশি বয়স পর্যন্ত অসুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সত্যিই প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে সুস্থ অবস্থায় যদি কেউ ১০০ বছর বাঁচে তাতেও হয়তো আপত্তি থাকে না কারোর। তবে সুস্থতা সর্বাগ্ৰে প্রয়োজন।
যাইহোক এই ছিলো আমার গতকাল রাতের গল্প, যে রাতটা আমাকে আরো একবার বুঝিয়ে দিল সময় এবং পরিস্থিতি অনেক খানি পরিণত করেছে আমাকে। একটা সময় এই পরিস্থিতি গুলোর কথা ভেবে ভয়ে শিউরে উঠতাম। অথচ কি সুন্দর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছি, না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি একটা গোটা রাত। এটাই বোধহয় জীবনের সারমর্ম।
@tipu curate
;) Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
Upvoted 👌 (Mana: 1/7) Get profit votes with @tipU :)
SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted from the steemcurator07 account.
Thank you for your support @ninapenda. 🙏