"বিষন্নতা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
একটা সময় ছিলো, যখন বেশ কয়েকদিন বাড়ির বাইরে না বেরোলে খুব অস্বস্তি লাগতো, ভীষণ মন খারাপ হতো, নিজেকে বন্দী মনে হতো। তখন মাঝেমধ্যে বেরিয়ে পড়তাম। কখনো গ্রামের বাড়িতে, কখনো মামাবাড়িতে, আর কখনো দিদি বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এক দুই দিন সেখানে কাটিয়ে এলেই মনটা আবার ভালো হয়ে যেতো।
তবে আজকাল তেমনটাও হচ্ছে না। হিসেব করলে এখন যেন বাড়ির বাইরে বেরোতে কষ্ট হয় অনেক বেশি। ইচ্ছে গুলো কেমন যেন দিন দিন বদলে যেতে শুরু করেছে। গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে মনটা ভালো হওয়ার পরিবর্তে, যেন আরো বেশি ভারাক্রান্ত হয়ে থাকছে। যেন কোনো পিছুটান আজও রয়েছে, যেই টানের তীব্রতা এর আগে এতো গভীরভাবে অনুভব করিনি কখনো।
একটা সময় ছিলো যখন মন খারাপের সময় গুলোকে অতিবাহিত করতে ছাদে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতাম। ছাদে লাগানো গাছগুলোতে জল দিতাম, সেখানে বসে কিছুক্ষণ গান শুনতাম, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, আর পিকলুর আনন্দ দেখতাম। কারণ আমি ছাদে বসে থাকলেই সে সমস্ত ছাদ ঘুরে বেড়াতো। গাছ লাগানো টবের কাছে গিয়ে পাতাগুলো এমনভাবে শুকনযে, যেন সেগুলো ওর ভীষণ প্রিয়।
![]() |
---|
তবে অনেকদিন হয়েছে আর বিকেলে ছাদে সময় কাটানো হয় না, ইচ্ছাও করে না। হয়তো পিকলু নেই বলেই এই ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে গেছে। সত্যি মায়া এমন একটা জিনিস যা আমাদেরকে কখন, কিভাবে বদলে ফেলে আমরা বুঝতেও পারি না। ওই ছোট্ট একটা অবলা প্রাণীর জন্যেও নিজের ভিতরের ভালো থাকাটার যে এমন আমুল পরিবর্তন হবে, এটা কখনোই ভাবিনি।
আমাদের বাড়িতে পিকলুর আসাটাকে আমি কখনোই খুশি মনে মেনে নিই নি। বরং শুরু থেকে ওর সঙ্গে একটা দূরত্ব রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওদের মায়া এবং ভালোবাসা এমনই যে, বাড়ির সকলের থেকে ওর সাথে আমারই সম্পর্কের গভীরতা বেশি হলো। কিন্তু কখন কিভাবে তা বুঝতেও পারিনি। যার বাড়ি আসাতে আমার সম্মতি ছিলো না, একদিন তার চলে যাওয়াই যে আমার জীবনের সবটা ফাঁকা করে দেবে, এটা সত্যিই অকল্পনীয় ছিলো।
![]() |
---|
কিভাবে যেন নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেলছি বুঝে উঠতে পারি না। সারাদিন সংসারের কাজ করার পরে, নিজের ঘরের ছোট্ট খাটেই কাটে আমার সারাক্ষন। যার এক পাশে ছড়িয়ে থাকা ডায়েরি, মোবাইল, বালিশ আর জলের বোতল আর একটা হেডফোন, এর মধ্যেই যেন আমার জীবন সীমাবদ্ধ।
এই সীমানার বাইরে বেরোতে এখন আর ইচ্ছা করে না, মনে হয় এখানেই সমস্তটা আটকে রয়েছে। সত্যিই কি মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কতদিন যে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারি না, জানিনা। কখনো আমার ঘুম এতো হালকা ছিল না। তবে আজকাল হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, কি সব যেন আজেবাজে স্বপ্ন দেখি তা পরে নিজে মনেও করতে পারি না। বেশ কতদিন ধরে এই জিনিসটা চলছে তবে এর সমাধান হওয়াটা খুব জরুরী, না হলে হয়তো আমি অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বো।
এবার বাড়িতে গিয়ে আমার বান্ধবী রাখীর সাথে এই বিষয়ে কথা বললাম। ও আমাকে মেডিটেশন করার সাজেশন দিয়েছে। তবে মেডিটেশন করতে গেলে আমার মাথায় যেন আরো হাজারো চিন্তা ভাবনা ভিড় করে। তবে ও বলেছে এমনটা শুরু হতে হবে, ধীরে ধীরে নাকি এটাও আমার অভ্যাস হয়ে যাবে।
![]() |
---|
রোজ নিজেকে মোটিভেট করার চেষ্টা করি আজ থেকে শুরু করবো। কিন্তু সেই আজ আর আসছে না। যখনই ভাবছি তখনই মনে হচ্ছে আজ থাক আগামীকাল থেকে করবো। কিন্তু এই ভাবেই একটা একটা করে দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে, আমি সেটা বুঝতে পারছি।
জানিনা জীবনের কোন পর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছি, এখান থেকে জীবন কোনদিকে বাঁক নেবে। তবে আজকাল আর জোর করে কিছু করতে ভালো লাগেনা। যেন সবটাই সময়ের উপরে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে আছি। সময় যেদিকে নিয়ে যাবে, আমিও চলবো সময়ের হাত ধরে। কি একটা অদ্ভুত জীবন যাপন। মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবি, এইভাবে বেঁচে থাকাকে কি আদেও বাঁচা বলে?
ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।