Hello,
Everyone,
যদিও ইতিমধ্যে দুইদিন অতিবাহিত হয়েছে, তবে আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো রথ যাত্রার দিনের কিছু সুন্দর মুহূর্তের কথা। প্রতিবারই আমার বাপের বাড়ির এলাকাতে অনেক সুন্দর ভাবে রথ বের হয়। তবে কোনোবার সেই রথছ যোগদান করার সুযোগ হয়নি। বলতে পারেন আগে তেমন একটা ইচ্ছেই করতো না, অত ভিড়ের মধ্যে রথের দড়ি টানতে।
কিন্তু এবার কেন জানিনা ভিতর থেকে ভীষণ ইচ্ছে করছিল একবার জগন্নাথ দেবের রথের দড়ি টানতে। কি জানি শুধু মনে হচ্ছিলো এরপর আর কখনো সুযোগ হবে কিনা কে জানে। আজকাল এতো বেশি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যে, একটা বছরের মধ্যে আমাদের জীবন কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা কেউই বলতে পারি না।
যাইহোক সারাদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং সেই কারণে ভেবেই নিয়েছিলাম এবারও বোধহয় আমার ইচ্ছাটা অপূর্ণই থেকে যাবে। বিকেলের দিকে আমার বান্ধবী ফোন করে বলল ওই দিকে নাকি রোদ্দুর উঠেছে। তবে তখনও আমাদের এখানে আকাশে অনেক মেঘ ছিলো। ঘন্টাখানেকের জন্য বাড়ি থেকে বেরোবো, কিন্তু মেঘের ঘনঘটা দেখে সেটুকুও সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। তবে যাইহোক শেষ পর্যন্ত দোটানা কাটিয়ে উঠে, রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম মসলন্দপুর এর উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে যাওয়ার কোনো প্ল্যান ছিল না। শুধু স্টেশনে নেমে সেখানে রথের দড়ি টেনে, আবার পরের ট্রেন ধরে ফিরে আসবো এমনটাই ঠিক হয়েছিলো। দত্তপুকুর স্টেশনে পৌঁছাতে আকাশে মেঘের অবস্থা দেখে ভাবছিলাম আদেও যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু যখন বেরিয়ে পড়েছি তাই ফিরে আসা উচিত হবে না ভেবেই ট্রেন ধরে নিলাম।
একটা স্টেশন পার হতেই প্রকৃতির পরিবর্তন অবাক করলে আমাকে। একদম ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশেষে যখন মছলন্দপুর স্টেশনে নামলাম, তখন আকাশে মেঘের বদলে রোদ্দুরের ঝলকানি চোখে পড়লো। আমি সেখানে পৌঁছাতেই আমার বান্ধবীরা ফোন করে জানালো আমাকে কোথায় যেতে হবে। গিয়ে দেখি তিনজন অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
বৃষ্টির কারণে রথ বেরোতে একটু দেরি হয়েছিলো। এই কারণে আমরা রাস্তাতে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম রথের মাইকের আওয়াজ পাচ্ছি। আসলে এত বড় রথ হয় এই সম্পর্কে আমার সত্যিই ধারণা ছিল না। রাস্তার দুপাশে মানুষের ঢল দেখে অবাক লাগছিলো। এতো সুন্দর মুহূর্ত এর আগে এতো ভালোভাবে উপভোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করিনি ভেবে আফসোস হলো।
আমরা অপেক্ষারত অবস্থাতে দাঁড়িয়ে থাকাকালীনই দেখি ছোট্ট একজন সদস্য রথ দেখতে এসেছে, যার ছবি না তুলে আর পারলাম না। তবে প্রচন্ড মাইকের আওয়াজে বেচারা খুবই ভয় পাচ্ছিলো। ওকে দেখে কার কথা মনেপড়ছিলো, আশাকরি না লিখলেও সেকথা অনেকেই বুঝতে পারবেন।
যাইহোক এরপর এক এক করে বিভিন্ন পারফরমেন্স দেখার সুযোগ হলো। জগন্নাথ দেবের নামে প্রত্যেকেই সুন্দর করে সেজে নিত্য পরিবেশন করতে করতে রথের আগে এগিয়ে চলছিলো।
শুধু একদল যে নৃত্য করছে এমন নয়, ভাগে ভাগে দুই তিন দল নিজেদের পারফরমেন্স দিয়ে চলছিলো। কেউ ঢাকঢোল বাজাচ্ছে, কেউ বা গানের তালে তালে নাচ করছে, সবাই নিজেদের মতো করে মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করছিলো দেখে ভীষণ ভালো লাগছিলো।
আর তার সাথে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এই সবকিছু কাটিয়ে একেবারে শেষের দিকে রথের দেখা পেলাম। যেখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তিনজনেই পূজিত হতে হতে এগিয়ে আসছিলেন। দূর থেকে রথটা দেখে এক অদ্ভুত তৃপ্তি কাজ করলো মনের ভিতরে। মনে হল যেন আমার এক ঘন্টার এই সফরটুকু সার্থক হয়েছে।
প্রচন্ড ভিড় ছিলো মানুষের। তৎসত্ত্বেও চেষ্টা করলাম কোনো রকম ভাবে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে রথের দড়িতে গিয়ে হাত দেওয়ার। সত্যি কথা বলতে রথের দড়িতে হাত দিয়ে যে তৃপ্তি অনুভব করলাম তা ভাষায় লিখে আপনাদেরকে বোঝাতে পারবো না।
এই ভিড়ের সাথে খুব বেশি দূর এখনো সম্ভব ছিল না কারণ, আমার হাতে সময় ছিল একেবারেই কম। তাই রথের সাথে কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর আমি আবার ফিরে এলাম স্টেশনের দিকে, আর বান্ধবীরা ফিরে গেলো রথের সাথেই।
স্টেশনে এসে ট্রেন ধরে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম এবং বাড়িতে ফিরে সম্পন্ন করলাম বুমিং এর কাজ। সারাটা দিন ব্যস্ততার মধ্যে সেদিন কাটিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু বিকেলের দিকে এই কিছুটা সময় যেন আমাকে তৃপ্তি দিয়েছিলো। এভাবেই আমার এবারের রথের দিনের শেষ ভাগ কাটিয়েছিলাম। জানিনা আগামী বছর এই সুযোগ হবে কিনা।
যাইহোক আপনাদের রথযাত্রার দিন নিশ্চয়ই ভালো কেটেছে এবং আপনরাও দিনটি উপভোগ করেছেন। আগামী দিনগুলো ভালো কাটুক আপনদের, এই প্রার্থনা করে আজকের লেখা শেষ করছি। জয় জগন্নাথ।
Your post has been supported by the TEAM FORESIGHT. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
Thank you for your support @sduttaskitchen ma'am. 🙏