"যোগীঘাট ও‌ মংপুতে রবীন্দ্র ভবন ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা"

in Incredible India7 days ago (edited)
IMG_20250703_235842.jpg

Hello,

Everyone,

মাঝখানে বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে দার্জিলিংয়ের ঘোরার পোস্টগুলো শেয়ার করেছি। ‌তবে শেষ যেখানে করেছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করছি। লাস্ট পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম তাকদা অর্কিড হাউস ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা। আশা করছি সেই সুন্দর সুন্দর ফুল গুলোর ছবি আপনাদের কিছুটা হলেও মনে পড়ছে।

আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে যোগীঘাট ও মংপু রবীন্দ্র ভবন ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা।

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1PJU7H6HMi15VNfbNF6efjvjFnGTdD1AYLMrre2rZi6fF6Mf5LJpBnoK2rApZimUajkGQ4YocwLopdQhC.png

"যোগীঘাট"

IMG_20250610_120149.jpg
IMG_20250610_123433.jpg

যোগীঘাট সম্পর্কে গুগুলে দেখলাম এটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। কার্শি‌য়াং পাহাড় ও মংপুর পাহাড়কে যুক্ত করেছে এই যোগীঘাট। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে রিয়াং নদী, যেটি এখানকার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে। যদিও নদীতে তেমন স্রোত নেই, পাথরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে, যেমনটা পাহাড়ি নদী হয়, খানিকটা তেমনই। তবে এখানকার আকর্ষণ ছিল এখানকার ব্রীজটা। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন পর্যটকদের ভিড় ছিল মোটামুটি‌ ভালোই। তবে আশেপাশে বসত বাড়ি খুব বেশি নেই।

IMG_20250610_120757.jpg
IMG_20250610_121207.jpg

তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার এটি অন্যতম জায়গা, তাই আশেপাশে বেশ কয়েকটা হোমস্টে চোখে পড়ল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছও রয়েছে। বলতে পারেন ছোটখাটো একটা নার্সারির মতো, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল যত্ন সহকারে লাগানো আছে। ঠিক তার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে‌ এই রিয়াং নদী।

IMG_20250703_211902.jpg
IMG_20250610_123433.jpg

এতো কাছাকাছি গিয়ে যদি নদীর কাছাকাছি না যাওয়া হতো, তাহলে হয়তো সবটা ভালো করে উপভোগ করা সম্ভব হতো না। তাই রোদ্দুরের তেজকে উপেক্ষা করেই আমরা সকলে পৌঁছে গিয়েছিলাম রিয়াং নদীর কাছে। অন্তত নদীর জলটা ছুঁয়ে দেখার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো। এক‌এক করে সকলেই পৌঁছে গেলাম সেখানে, চলতে থাকলে ছবি তোলার পর্ব। তার সাথে ফুটে থাকা বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করাও।

IMG_20250610_123147.jpg
IMG_20250610_123024.jpg

বেশ‌ কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই ব্রীজটাতে। গাড়ির চলাচল, মানুষের হেঁটে যাওয়া, সমস্ত কিছু উপেক্ষা করেই ব্রিজের ওপরেও কিছুক্ষণ সময় কাটালাম, ছবি তুললাম বেশ কত গুলো। তারপর সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, সেখানেই কোনো একটা হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে নেওয়া হবে।

পাশেরই একটা হোটেলে পৌঁছে গেলাম। শুরু থেকে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো, ঘোরার সময় আমরা কোনো একটা জায়গা থেকে লাঞ্চ করে নেবো। তবে রাতের খাওয়াটা হবে হোমস্টে বা হোটেলে পৌঁছেই। পাহাড়ি এলাকার খাওয়া-দাওয়া হয়তো আমাদের মত নয়, তবে সৌভাগ্যবশত আমরা যেখানে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করেছিলাম, মোটামুটি খেতে পেরেছিলাম।

IMG_20250610_124359.jpg
IMG_20250610_125624.jpg

এখানেও আমরা ভেজ‌ থালি অর্ডার করেছিলাম। যার মধ্যে ডাল, আলু ভাজা, একটি সবজি, পাপড়‌ ভাজা,‌ শশা ও বাঁধাকপির স্যালাড দিয়েছিলো। আসলে বাঁধাকপি গুলোকে ভিনিগারের মধ্যে ডুবিয়ে, তার সাথে একটু লঙ্কার গুঁড়ো, লেবুর রস ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে সার্ভ করেছিলো। খাওয়া-দাওয়া মোটামুটি মন্দ ছিল না।‌ যাইহোক সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর আমরা আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম।

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1PJU7H6HMi15VNfbNF6efjvjFnGTdD1AYLMrre2rZi6fF6Mf5LJpBnoK2rApZimUajkGQ4YocwLopdQhC.png

"মংপু রবীন্দ্র ভবন"

IMG_20250610_135045.jpg
IMG_20250610_141336.jpg

আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন ছিলো মংপু রবীন্দ্র ভবন। বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ এক আবেগের নাম, সেটা সম্পর্কে হয়তো আলাদা করে আর আপনাদের সাথে কোনো তথ্য শেয়ার করার প্রয়োজন নেই। আর রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যারা কমবেশি পড়েছেন, তারা প্রত্যেকেই জানেন মংপুতেও তিনি তার জীবনের বেশ কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। মূলত ওনার শেষ জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে এখানে এবং এখানে যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন এখান থেকেই তাকে নিয়ে আসা হয়েছিলো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে, যেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

IMG_20250610_135332.jpg
IMG_20250610_135115.jpg

যাইহোক মংপুর মূল আকর্ষণ ছিল ট্রি হাউস। যেটা দেখতে এতটাই সুন্দর ছিলো যে, ট্রি হাউসটি দেখে আমাদের প্রত্যেকের মনে হয়েছিলো অন্তত একটা রাত যদি এখানে কাটানো যেতো, তাহলে বোধহয় জীবনে আরও ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সম্ভব হতো। দুটো গাছের মাঝখানে খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করা আছে এই ট্রি হাউসটি। যেখানে ওঠার জন্য সিড়ির আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে। আশাকরি ছবি দেখলে আপনারা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

IMG_20250610_135524.jpg
IMG_20250610_135501.jpg

এখানে মিউজিয়ামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তার লিখিত বিভিন্ন বই, আসবাবপত্র সাজানো রয়েছে। মিউজিয়ামে প্রবেশ মূল্য ছিল কুড়ি টাকা। আমরা প্রত্যেকেই টিকিট কেটে পৌঁছে গিয়েছিলাম মিউজিয়ামের সামনে। সেখানে জুতো খুলে প্রবেশ করার নিয়ম রয়েছে। তার পাশাপাশি সেখানেই ক্যামেরা ও মোবাইল নিয়ে প্রবেশের অনুমতি ছিলো না। তবে নিজের চোখে দেখে আসতে পেরেছি এটাই আনন্দের।

IMG_20250610_135442.jpg
IMG_20250703_235520.jpg
IMG_20250703_235503.jpg
IMG_20250703_235445.jpg
IMG_20250703_235424.jpg
IMG_20250610_135343.jpg

যাইহোক মিউজিয়াম থেকে বাইরে বেরিয়ে সম্পূর্ণ এলাকাটা সুন্দর করে‌ ঘুরে দেখলাম, ছবি তুললাম। এখানেও এতো সুন্দর কিছু ফুল ছিলো যে‌গুলোর মধ্যে থেকে কিছু ফুলের ছবিও আমি তুলেছি।

পাহাড়ি এলাকার মূল আকর্ষণ এই ফুল। কত ধরনের যে ফুল দেখেছি, তার বোধহয় হিসেব নেই।‌ সব কটাল ছবি তোলাও সম্ভব হয়নি।তবে ওই যে বললাম চোখে দেখে আসতে পেরেছি এটাই সবথেকে আনন্দের বিষয়। তবে আমি চেষ্টা করেছি কিছু কিছু ছবি আপনাদের জন্য তুলে আনার।‌ ইচ্ছা আছে একটা পোস্টে সব ফুলের ছবিগুলো শেয়ার করবো।

যাইহোক এখানে সকলে মিলে খুব সুন্দর একটা সময় অতিবাহিত করেছিলাম এবং সময়ও প্রায় শেষ হয়ে আসছিলো। আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশনে পৌঁছাতে হতো, তাই আবার সকলে গাড়িতে উঠে পড়লাম। অভিরাজ হোমস্টেতে যাওয়ার পথে আর কিছু সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। ওখানে পৌঁছে কিভাবে সময় কাটালাম, সেটা না হয় পরবর্তী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

চলুন তাহলে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনা রইলো। আর পোস্টগুলো পড়ে আপনাদের কেমন লাগছে, অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।

Sort:  
Loading...