"অস্থিরতায় ঘেরা একটি দিনের গল্প"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
খারাপ সময় গুলো যখন চারিদিক থেকে একসাথে ঘিরে ধরে, তখন সত্যিই দিশেহারা লাগে। আর আমাদের জীবনের এটাই সত্যকে কঠিন বাস্তব, যখন কোনো একটা বিপদ ঘটে, তখন যারা চারিদিক থেকেই খারাপ খবর আসতে শুরু করে।
এই গরমের ভিতরে দিদির বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর ঠিক করেছিলাম, আর বাইরে বেরোবো না। কারণ আমার নিজের শরীরটাও বেশ খারাপ ছিলো। কিন্তু আমাদের ভাবনা অনুযায়ী যদি জীবন চলতো, তাহলে হয়তো জীবনের প্রতি আমাদের আর কোনো অভিযোগ থাকতো না।
গত পরশুদিন রাতে হঠাৎ করে দিদি ফোন করে জানালো ওর শরীর অনেক বেশি খারাপ। আসলে আমি যখন ওর বাড়ি গিয়েছিলাম তখনই ওর শরীরটা অল্প অল্প খারাপ ছিলো। আমি ভেবেছিলাম হয়তো গরমের কারনে শরীরটা খারাপ হয়েছে। আসলে ডিউটির কারণে প্রতিদিন বাইরে বেরোতে হয় ওকে। সেখান থেকে ফিরে বাচ্চাদের সময় দেওয়া, সংসারের কম বেশি কাজ করা, এইসব কিছু মিলিয়ে শরীরটা খারাপ হয়েছে।
তবে পরশুদিন রাত্রে শুনলাম বিষয়টি একেবারেই অন্যরকম এবং ওর শরীর অনেকটাই বেশি খারাপ হয়েছে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে হবে তাই আমাকে যেতে বলেছে। আমার নিজেরও ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করার বিষয় ছিলো, তাই ভাবলাম ও যেহেতু যাবে, তাহলে আমিও গিয়ে একসাথে নিজের টেস্ট করিয়ে নিই।
![]() |
---|
এই কারণে গতকাল খুব সকালের ট্রেন ধরে চলে গিয়েছিলাম দিদির ফ্ল্যাটে। যেহেতু কিছু না খেয়ে ব্লাড দিতে হতো, তাই সকাল বেলা উঠে, ফ্রেশ হয়ে, ঘরের মোটামুটি কাজ গুছিয়ে দিয়ে বেরিয়েছিলাম। সেখানে দিদিকে ফোন করে জানাতেই, দিদি ওদের ফ্ল্যাটের নিচের ফার্মেসিতে ফোন করে দিয়েছিলো। ওইখান থেকে একটু দিদি আমাকে দেখে নিল আমি শুধু ব্লাডটাই দিলাম বাকি ফর্মালিটি ওরাই করে নিয়েছে দিদির কাছ থেকে জেনে।
যাইহোক রক্ত দিতে আমার বরাবরই ভয় লাগে, তবে শশুরমশাইকে চোখের সামনে দেখে খানিকটা ভয় যেন কেটেছে, অন্তত গতকাল রক্ত দিতে গিয়ে সেটাই বুঝলাম। এরপর আর কি উপরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে দিদির সাথে বেরোলাম, ওর টেস্টগুলো করানোর জন্য।
ভেবেছিলাম বিকেলের গাড়িতে ফিরে আসবো, কিন্তু ওর শারীরিক অবস্থা দেখে আর আসতে পারিনি। সত্যি বলতে আমাকে হয়তো যেতেই হতো না, যদি দাদা শারীরিকভাবে আগের মতো সুস্থ থাকতো। আসলেও রাতের বেলায় যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে দাদার পক্ষে একা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না তাই রাতটা থেকে যেতে বললো। আমিও ভাবলাম থেকে যাওয়াই ভালো হবে। আর সেই অনুযায়ী আমি শাশুড়ি মা ও শুভকে ফোন করে বিষয়টা জানালাম।
তখনো পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। এরপর দিদির বাড়িতে মোটামুটি সময় কাটিয়েছি, তার মধ্যে কমিউনিটির কাজ গুলোও সম্পন্ন করেছি। প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পর শুভ ফোন করে, তারপর আমি শুতে যাই। কিন্তু গতকাল ওর ফোন না পেয়ে একটু চিন্তিত হয়ে আমি নিজেই ফোন করলাম, তখন জানতে পারি ও অফিসে আছে।
![]() |
---|
অতো রাতে অফিসে গিয়েছিলাম শুনে অবাক হলাম। তবে যে কারণে অফিসে গেছে সেটা শোনার জন্য একেবারেই তৈরি ছিলাম না। যখন ফোন করছি তখন, ওদের অফিস দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলছে। শট সার্কিট থেকেই মূলত আগুন লেগেছে, কারণ গতকাল সারাদিন কারেন্ট শুধু যাওয়া আসা করেছে।
![]() |
---|
এমনকি লোডশেডিং এর জন্য ওদের অনেকগুলো সিস্টেম ও এসি খারাপ হয়ে গিয়েছিলো দিনের বেলাতে। তবে রাতের বেলা যে এমন ভয়াবহ অবস্থা হবে সেটা আসলেই কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। শুভ আমাকে দুটো ভিডিও পাঠিয়েছিলো, দেখে আমি পুরো অবাক।
যাইহোক ওদিকে দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর রাত প্রায় ১.৩০ নাগাদ ও বাড়িতে ফিরলো। তারপর ওর কাছে সম্পূর্ণ বিষয়টা জেনে ঘুমাতে গেলাম।
![]() |
---|
দিদির আজকেও একটা টেস্ট করার ছিলো। তাই সকাল বেলায় উঠে আমার কমিউনিটির কিছু কাজ করলাম। তারপর ওর সাথে বেরোলাম। ওদের বাড়ির কাছাকাছি একটা ডায়াগোনস্টিক সেন্টারেই এই টেস্টটা করেছে বলে বেশি দূর যেতে হয়নি।
বাড়িতে ফিরে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলাম শাশুড়ি মা দুবার ফোন করেছেন। তাই আগে ওনাকে ফোন করলাম। সমস্ত বিষয়টা জানার পর তিনি আমাকে জানালেন, ভোর রাত থেকে শশুর মশাইয়ের শরীর আবার খারাপ হতে শুরু করেছে। সেই ইউরিন এর সমস্যা, পাশাপাশি কিডনির কারনে পেট ব্যথায় সারারাত ব্যথা ঘুমাতে পারেন নি।
এমনকি যখন কথা বলছিলাম তখনও সেই একই অবস্থা ছিলো। শুভ ওষুধ দিয়ে তারপর অফিসে গিয়েছিলো, সেখানে ওদের কোম্পানির লোকজন সকলেই এসেছিলেন।সেখানে গিয়ে সকলের সাথে কথা বলার জন্য, ওরা সকলেই আজ অফিসে এসেছিলো। ওখানকার অবস্থা দেখে সকলের মনটাই খারাপ ছিলো।
যাইহোক ওষুধ খাওয়ার পরেও ব্যাথা নিরাময় হয়নি, বরং উনি কিছুই খাচ্ছেন না। যেটুকু করে খাওয়ানো হচ্ছে, সবটাই বমি করে ফেলেছেন। খবরটা শুনে বাড়িতে আসার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। এদিকে দিদির শরীরটাও বেশ খারাপ। গতকাল আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয়েছিল যার রিপোর্ট দেখে দিদি বুঝতে পারলো, ওর ওভারিতে সিস্ট ধরা পড়েছে। আর তার সাথে ইউরিন ইনফেকশনটা বেড়েছে অনেকটাই। যদিও গতকাল রাত থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেছে ও।
তার ওপরে শুভর অফিসের এই রকম একটা সংবাদ, সবকিছু মিলিয়ে মনটা যেন একেবারেই অশান্ত হয়ে উঠেছে। দিদিকে ছেড়ে আসতে মন চাইছিল না, আবার শ্বশুর মশাইয়ের অবস্থার কথা শুনে ফিরে না আসাটাও ঠিক দেখায় না। আর শুভর অফিসের বিষয়টা তো রয়েছেই। তাই ট্রেনে করে ফিরতে ফিরতে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।
![]() |
---|
জীবন নিয়ে আমরা কেমন পরিকল্পনা করি আর জীবন আমাদেরকে কি পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে বাধ্য করে। মাঝে মাঝে বড্ড ক্লান্ত মনে হয়, ইচ্ছা করে কোনো নির্জন জায়গায় গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। যেখানে কারোর কথা শুনতে হবে না, কারোর কথার কোনো উত্তর দিতে হবে না, কোনো দায়িত্ব পালন করতে হবে না। তবে বাস্তবে এমনটা করা আসলে সম্ভব হয় না।
যাইহোক এমনভাবেই দিনটা কাটলো আজ। অস্থিরতা, মনখারাপ, ব্যস্ততা, অনিশ্চয়তা সবকিছু মিলিয়ে অদ্ভুত দিনযাপন করলাম। আশাকরি আপনাদের সকলের দিনটা ভালো কেটেছে। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই প্রার্থনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকবেন।