গরমের অশান্তি বৃষ্টির শান্তি
আসসালামু আলাইকুম।
গরমের তীব্রতা যেন এবারের বর্ষায় সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। জানিনা অন্যের কেমন লাগছে তবে আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন সূর্য নিজে নেমে এসে মাথার উপর চড়ে বসেছে। দিনরাত গরমে আমাদের শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল। তার ওপর রাতভর বিদ্যুৎ ছিল না। ছোট্ট মেয়েটা ঘেমে ঘেমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি করছিল বারবার গায়ে পানি ঢালাও কোন আরাম নেই।
মাথার ভিতরে কেমন যেন ঝিমঝিম করছিল গরমের জন্য। মেয়েকে কোলে নেই বাতাস করি আবার নামিয়ে রাখি একটানা এভাবে পুরো রাত পার করেছি। সারারাত মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব কষ্ট যেন এই ঘরে এসে ঠাঁই দিয়েছে। তবে সকালটা শুরু হলো একেবারেই অন্যরকম ভাবে। ফজরের নামাজ পড় একটু শুয়ে ছিলাম। বিদ্যুৎ আসেনি হঠাৎ জানালার পর্দা ধীরে ধীরে উড়ে উঠলো, আমি ভাবলাম বাতাস উঠেছে। তারপর আচমকাই দেখা গেল দূরে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। আমার মনটা তখনই আশায় ভরে উঠলো। এই বুঝি বৃষ্টি নামবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই শুরু হলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তারপর বজ্রসহ একেবারে প্রবল বর্ষণ আর হালকা ঝড়।
মাশাল্লাহ কি সুন্দর ছিল সেই দৃশ্যটা। আমি তখন রান্নাঘরে চুলার পাশে দাঁড়িয়ে ভাত বসাছিলাম। এক পাশে চালের হাঁড়ি অন্য পাশে ডাল আর সবজি। বৃষ্টির শব্দে রান্নাঘরে টিনের চালে একটা অন্যরকম সুর বেজে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল গরমের দুঃখের রাতটা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। বৃষ্টি শুধু চারপাশ নয় আমার মনটাকেও ভিজিয়ে দিচ্ছিল। মনটা ভীষণ শান্তি পাচ্ছিল তখন। আমার মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ধারা আর হাওয়ার ঠান্ডা পরসে ওর চোখে মুখে ছিল বিস্ময় আর আনন্দের ঝিলিক। আম্মু বৃষ্টি?এই বলে ও হাত মেলে দাঁড়িয়ে গেল। আমি তখন ভাতের হাড়ি থেকে ঢাকনা তুলে রাখছিলাম, তাকিয়ে দেখি ও বৃষ্টিতে একটু ভিজে গেছে।
ওর মুখে এক চিলতে হাসি দেখে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছিল আনন্দে। আমি চট করে একটা তোয়ালে নিয়ে ওকে মুছালাম আর বললাম বৃষ্টিতে ভিজিস না মা ঠান্ডা লেগে যাবে। কিন্তু বাচ্চারা কি আর বোঝে বরং বললো আর একটু আম্মু আর একটু। এদিকে আশেপাশের বাড়িগুলো থেকেও হাসির আওয়াজ আসছিল। সবার উঠোনে ছোট ছোট বাচ্চারা ভিজছে কেউ গান গাইছে কেউ বালতি দিয়ে পানি ধরছে। এই একটা বৃষ্টি যেন একরাশ খুশি নিয়ে এসেছে আমাদের পাড়ায়। অনেকদিন পর সবাইকে অনেক খুশি লাগছিল।
যেন গরমের সাথে আমাদের এক তরফা যুদ্ধ শেষে প্রকৃতি এসে শান্তির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। ফর্সা হয়ে উঠল। সূর্য তার দাপট নিয়ে ফিরে আসলো।কিন্তু সেই কয়েক মুহূর্তের ঝড়-বৃষ্টি যেন হৃদয় এক চিরস্থায়ী শান্তির ছাপ রেখে গেল। গরম অনুভব করলেও তখন আর আগের মত কষ্ট লাগছিল না। কারণ মনটা শান্ত হয়ে গেছে। সেই রাতের অস্থিরতা কষ্ট বিদ্যুৎ হীন রাতের গরম সব ভুলে গিয়েছিলাম আমরা সবাই। দুপুরে ঘুমানোর আগে আমাকে বলল আম্মু আবার বৃষ্টি হবে তো? আমি হেসে বললাম আল্লাহ চাইলে হবেই আম্মু।প্রকৃতির এই অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তাপের মধ্যে এমন একটু খানি শান্তির পর সত্যি আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত।
গরম যেমন আল্লাহ দেন, বৃষ্টিও তিনি দেন। গরম যেমন আমাদের ধৈর্য শেখায় তেমনি শান্তি আমাদের কৃতজ্ঞতা শিখায়। সেই বৃষ্টির সময় টা আমার জীবনের এই গরম মৌসুমে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে। জীবনের প্রতিটি কঠিন সময়ের পর আল্লাহ অবশ্যই সহজ করে দেন। গরম যেমন কষ্ট দেয় তেমনি একটুখানি বৃষ্টি আমাদের মনে এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। আর ছোট্ট সন্তানের খুশি মুখটা সেই প্রশান্তিকে আরো একধাপ বাড়িয়ে তোলে। আলহামদুলিল্লাহ সেই মুহূর্তের জন্য আজও আমি কৃতজ্ঞ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.