Better Life with Steem||The Diary Game|| 01 May 2025||

in Incredible Indialast month

আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই খুব ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার সারাদিনের ব্যস্ততায় ভরা কিছু মুহূর্ত ভাগ করে নিতে চাই।

গৃহিণী জীবন যেমন পরিশ্রমে ভরপুর তেমনি ভালবাসার তৃপ্তিতেও পুণ্য । বিশেষ করে যখন সংসার সামলাতে হয় একা হাতে, আর পাশে থাকে দুই বছরের একটি ছোট্ট শিশু, তখন প্রতিটা মুহূর্ত হয়ে ওঠে এক একটা যুদ্ধ জয়ের গল্প। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দেখি আমার হাজব্যান্ড বাজার থেকে ফিরে এসেছে। হাতে ছিল দুটি ব্যাগ একটিতে ছিল বড় সাইজের তেলাপিয়া মাছ আর অন্য দুটি ছিল চিংড়ি মাছ। এর পাশাপাশি নিয়ে এসেছে লাল শাক। আমার ভেতরটাও আনন্দে ভরে উঠলো, কারন আমি আর মিরা,আমার ছোট্ট মেয়েটা চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ করি।তেলাপিয়া মাছ যেহেতু বড় ছিল আমার হাজবেন্ড কেটে এনে দিয়েছে বাজার থেকেই।

কিছুটা হলেও আমার যেন কষ্ট কম হয় এটা ভেবে।কিন্তু চিংড়ি মাছগুলো ছিল কাচা,কাটাকাটি করতে হবে। তাই প্রথমে আমি চিংড়ি মাছগুলো কাটা শুরু করলাম। তখনই শুরু হলো মিরার একের পর এক দুষ্টুমি। কখনো চিংড়ি মাছের বাটিতে হাত দেয়, কখনো আমার আঁচল ধরে টানে, আবার কখনো পাশে রাখা লালশাকের ঝুরিতে হাত বাড়িয়ে দেয়। আবার আমার ঘাড়ের উপর উঠে বসে। আমি মাছ কাটছি আর সাথে সাথে মেয়েকে সামলাচ্ছি, ছুরি ধরি এক হাত দিয়ে আর এক হাত দিয়ে মিরাকে সরিয়ে রাখি। এক সময় তো ও মাছ কাটা ছুরি নিয়েই খেলতে চাইল। আমি বললাম ওরে বাবারে না আম্মু এটা নেওয়া যাবে না। কিন্তু তখনই শুরু হলো চিৎকার কান্নাকাটি।

আর কিছুতেই আমাকে মাছ কাটতে দেবে না। চিংড়ি মাছ কাটার সময় কতবার যে হাত পিছলে গেছে নিজেই জানিনা। মিরার সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি মোটামুটি ঘেমে একাকার। এমন সময় মনে হলো আহা, যদি একটু সাহায্যকারী কেউ থাকতো তাহলে হয়তো এই কষ্টটা একটু ভাগ হয়ে যেত। এক সময় মিরার কান্নাকাটি বেড়েই চলছিল তাই বাধ্য হয়ে কোনো রকম মাছ কাটাকাটি শেষ করে ফেললাম। সেই সাথে তেলাপিয়া মাছগুলো কোন রকমে ধুয়ে শুধু ফ্রিজে ঢুকে রাখলাম যে,যখন সময় পাবো তখন আবার সব বের করে ভালোভাবে ধুয়ে রাখব। বেশ কিছুক্ষণ মিরাকে শান্ত করার পর আবার কাজ করতে শুরু করলাম।

এবার আমি লাল শাকগুলো কাটতে শুরু করলাম। শাকগুলো কাটার সময় মিরা নিজে নিজেই টেবিলের উপর উঠে জগ থেকে এক মগ পানি ঢেলে নিয়েছে। এরপর পানি নিয়ে খেলা শুরু করেছে। পানি দিয়ে পুরো রুম ভিজিয়ে ফেলল। একদিকে সাতকাটি অন্যদিকে পানি মুছি সব কিছু একসাথে করতে করতে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তবুও ভেতরে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করছিল। নিজের হাতে রান্নার উপকরণ তৈরি করা মেয়ে দুষ্টুমি দেখা আর ঘরের পরিবেশকে প্রাণবন্ত রাখা এসব কিছুতেই তো সংসারে আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। রান্নাঘরে ঢুকে আমি চিংড়ি মাছ, আলু, বেগুন দিয়ে একটা তরকারি রান্না করলাম যেটাকে আমরা বলি চচ্চরি। সাথে করলাম লাল শাক ভাজি।

রান্না করতে করতে যখন ঘ্রান ছড়ালো, তখন যেন পরিশ্রমে সব ক্লান্তি মিলিয়ে গেল। দুপুরে হাসবেন্ড আর আমি একসাথে খেলাম। মিরা একটু খেয়ে আবার খেলা শুরু করল তার চিরচেনা ছন্দে। এইভাবে ছোট ছোট দুষ্টুমিতে, একটু কষ্টে আর অনেক ভালোবাসাই কেটে গেল আমার একটা দিন। একজন গৃহিণী জীবনে প্রতিদিনের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে,কিন্তু আমরা তা হাসিমুখে মেনে নেই। কারণ এই ছোট্ট ছোট্ট পরিশ্রমই তো বড় সুখের ভিত্তি করে তোলে।

পরিশেষে শুধু এটাই বলব আলহামদুলিল্লাহ, সব কিছুর জন্য। পরিবারকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখা, প্রতিটি দায়িত্ব পালন করা, ছোট একটি শিশুর দেখাশোনা করা, সবই এক একটা দায়িত্ব। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করার মাঝেই যে জীবনের আসল স্বাদ, তা আমি আজকের দিনেও নতুন করে উপলব্ধি করলাম। যাইহোক সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...
 last month 

আপনার একটি দিনের কার্যক্রম আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যি গৃহিণী জীবন অনেক কষ্টের সংসার সামলানো বাচ্চা সামলানো সব মিলে তাদের সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়।

তবে এই ব্যস্ততার মধ্য থেকেও আপনি সব সময় আনন্দের সাথে চলে থাকেন কারণ আপনার পোস্ট পড়ে সেটা বোঝা যায় যাই হোক আজকে আপনার হাসবেন্ড বাজার থেকে মাছ নিয়ে এসেছে তেলাপিয়া মাছ গুলো বাজার থেকে পরিষ্কার করে নিয়ে এসেছে এবং চিংড়ি মাছ গুলো আপনাকে পরিষ্কার করতে হয়েছে।

চিংড়ি মাছ খেতে আমারও অনেক পছন্দ আপনারও খেতে পছন্দ এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।