"বৃষ্টি ভেজা সকালের স্নিগ্ধ গল্প "

in Incredible India3 days ago

একটি বৃষ্টি মাখা সকালের হৃদয়ঘন একটি দিন কাটানোর গল্প নিয়ে এসেছি যেখানে প্রকৃতির রূপ পরিবারে ভালোবাসা আর শিশুর নিষ্পাপ দুষ্টুমি মিলে গড়ে উঠেছে এক অপূর্ব সৃষ্টি ময় দিন। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টি শব্দে ঘুমটা যেন আরো মিষ্টি হয়ে উঠেছিল। তবে ভোরের আলো ছড়ানোর আগেই আমার চোখ খুলে যায়। জানালার পাশে বসে আমি দেখতে পেলাম সারা আকাশ মেঘে ঢাকা আর সেই মেঘ ভরে নামছে একটানা মুষলধারে বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়াই কাপতে থাকা গাছগুলো যেন প্রকৃতির গান গাইছিল।

IMG_20250729_213701.jpg

একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ঘিরে ধরেছিল মনটাকে। আমি আল্লাহর নাম নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। নরম আলোয় ভেজা চারপাশ যেন মনটাকে আরো কমল করে দিল। হঠাৎ চোখ পড়ল উঠোনের ভিতরের পেঁপের গাছটার দিকে। হায় আল্লাহ! আমার প্রিয় পেঁপের গাছটা পড়ে আছে। প্রচন্ড বৃষ্টির তোরে গাছটা ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। গাছটাটে অনেকগুলো কাঁচা পেঁপে ধরেছিল। এখনো পাকতে শুরু করেনি। তবে অনেক বড় বড় হয়েছে পেঁপে গুলো। অনেক যত্ন করে বড় করেছিলাম আমি। সেই গাছটা এভাবে পড়ে থাকতে দেখে মনটা একেবারে ভেঙ্গে গেল।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছুটে গেলাম উঠোনে। পেছনে পেছনে আমার শাশুড়ি গেলেন। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। আমরা সেই গাছটাকে আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম। গাছের গোড়াটা পুরো ওপড়ে যায়নি তাই শ্বশুর বললেন একটু ঠেস দিলে হয়তো বাঁচানো যাবে। আমি আর আমার শাশুড়ি মাটি পরিষ্কার করতে লাগলাম শ্বশুর বাশ নিয়ে গাছটাকে ঠেস দিলেন। এই সময় আমার দুই বছরের মেয়ে উঠোনে বের হয়ে এলো। হাতে একটা ছোট্ট ছাতা যা তার মাথার উপর থাকে না।মিরা হেসে হেসে বলছে আম্মু বৃষ্টি।

IMG_20250729_213629.jpg

বলতে বলতে বৃষ্টির পানির মধ্যে নেমে পড়ল। একটানা পানি জমে থাকা জায়গায় ঝপাঝপ করে লাফাতে লাগলো। পায়ের সফ সপ শব্দে তার হাসি মিলেমিশে এক অপূর্ব সুর তৈরি করেছিল। বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করা খুব একটা সহজ ছিল না। মাটি নরম হয়ে গিয়েছিল আর চারপাশ কদমাক্ত। তবে তিনজন মিলে যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম একটা বড় বামশ দিয়ে পেঁপে গাছটা আবার দাঁড় করিয়ে দিলাম। তার অনেকগুলো ডাল ভেঙে গেছে কিছু পেঁপেও পড়ে মাটিতে গড়িয়েছিল। সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আলাদা করে রাখলাম। মনে হচ্ছিল যেন একটা প্রাণকে নতুন করে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

IMG_20250729_213614.jpg

এই সময় আমার মেয়ে একটা পেঁপে নিয়ে খেলতে শুরু করল। কখনো সেটা মাথার উপর তুলে কখনো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। পেছন থেকে আমি বললাম না মা এটা দিয়ে খেলা করে না পড়ে গেলে ভেঙ্গে যাবে। সে আমার কথার তোয়াক্কা না করে হাসতে হাসতে বললো পেঁপে বল পেঁপে বল। আমার শাশুড়ি বললেন ওরে দে না খেলুক একটু খুশি তো থাকবে। আমি মুচকি এসে অনুমতি দিলাম। বাচ্চাদের খুশি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা একজন মা হবার পরেই ভালোভাবে বুঝেছি।

বৃষ্টির মধ্যেও সকালের এই কাজের পর সবাই মিলে ভিজে কাপড় পাল্টে ঘরে ঢুকে পড়লাম। চুলার পাশে বসে গরম গরম চা বানাতে লাগলাম। আমার শাশুড়ি চাল নিয়ে ভেজানো খিচুড়ি রান্না করতে লাগলেন। বাইরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি চলছে আর আমরা ঘরের ভিতর গরম খিচুড়ি সুবাসে মোহিত হয়ে যাচ্ছি। আমার মেয়ে তখনও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছাতাটা হাতে ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরার চেষ্টা করে। আমি তার মাথায় একটা তোয়ালে দিয়ে বললাম ঠান্ডা লেগে যাবে আম্মু ভিতরে চলো।

সে একটু গম্ভীর করে বলল বৃষ্টি বন্ধ হলে আমি খেলতে যাব ঠিক আছে আম্মু। আমি হেসে মাথা নেড়ে বললাম ঠিক আছে আম্মু। খিচুড়ি আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালে নাস্তা সেরে সবাই মিলে একটু বিশ্রাম নিতে বসলাম। বৃষ্টির ছন্দময় শব্দ যেন মনটাকে ঘুম পাড়ানোর সুরের মতো শোনাচ্ছিল ছিল। হঠাৎ দেখি আমার মেয়ে আমার কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই ছোট্ট জীবনের এমন একটি মুহূর্ততো আমাদের জীবনের বড় সুখ। এদিকে বিকেল বেলা একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের গাছে কাঁঠাল এখন শেষের দিকেই যে কয়টা কাঁঠাল গাছে অবশিষ্ট ছিল সব এক রাতের ভিতরেই ফেটে আছে।

IMG_20250729_213524.jpg

তাই এই ফাটা কাঁঠাল গুলো পারার জন্য আমার ভাগিনাকে গাছে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সে বেশ কয়েকটা কাঁঠাল সুন্দরভাবেই পেরেছে কিন্তু শেষে ঘটলো একটা দুর্ঘটনা। কাঁঠালের বোঁটা ছিড়ে আমার শাশুড়ির একদম হাতের উপরে পরল। আসলে আমাদের জীবনে কখন কি দুর্ঘটনা হবে কেউ আগে থেকে জানেনা। এরপর বেশ কিছুক্ষণ আমার শাশুড়ির হাতের উপর পানি ঢাললাম এবং বরফ দিয়ে দিলাম। তবু আসলে হাতের জ্বালা কম ছিল না তাই তাকে তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। এদিকে বাইরে আবারও ঠান্ডা বাতাস বইছে।

আমরা উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখলাম পেঁপে গাছটা একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নেই তবে একরকম ভাবে টিকে আছে। কিছুদিন যত্ন নিলে আবার আগের মত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এদিকে আমার শাশুড়ি বললেন আল্লাহর ওপর ভরসা রেখো বৃষ্টি যেমন গাছ ফেলে দেয় তেমনি বৃষ্টি আবার প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। সত্যিই প্রকৃতি আমাদের শিখায় কিভাবে হারানোর মাঝেও আশার আলো খুঁজে নিতে হয়।সেই দিনের বৃষ্টি ভেজা সকাল আমার জন্য শুধু একটুখানি দুঃখ আর পরিশ্রমের দিন ছিল না বরং ছিল ভালোবাসা পারিবারিক বন্ধন আর আনন্দের স্মৃতিতে ভরা এক অপূর্ব দিন। পেঁপে গাছটা পড়ে গেলেও পরিবার একসঙ্গে চেষ্টা করে সেটাকে আবার দাঁড় করানো জীবনে প্রতিটি কঠিন সময়েও একে অপরকে ধরে রাখি। কাঁঠাল পাড়তে গিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটলো সেটাও ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আর ছোট্ট মেয়ের বৃষ্টিতে দুষ্টামি সেটাই তো জীবনের রং এমনই একদিনের গল্পে কাঁথা রইল আমার ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...