মায়ের চোখে লুকানো অশ্রু
আসসালামু আলাইকুম
আজ সারাদিন আমার মনটা বেশ ভারী হয়ে আছে। বাইরে আবহাওয়া যদিও মেঘলা আর হালকা ঠান্ডা তবুও মনটা একেবারে শান্ত হচ্ছে না। শহরের ব্যস্ততা কাজের চাপ সবাই আজকে এক অন্যরকম মনে হচ্ছে।কারণ সকালবেলাতেই আমার মা ফোন করে একটা এমন খবর দিলেন যা শুনে আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মা গ্রামে আছেন আর আমি এখন শহরে। দূরে থেকেও প্রতিদিনই কথা হয় আমাদের। কিন্তু আজকের ফোন কলটা ছিল একটু ভিন্ন। মায়ের কন্ঠে একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট লুকানো ছিল। তিনি অনেকটা শক্ত গলায় বলেছিলেন মুরগির ফার্মে চুরি হয়েছে রে মা। গত রাতে কেউ বেড়া কাইটা কয়টা মুরগি চুরি করে নিয়ে গেছে।
আমি কিছুক্ষণ কিছুই বলতে পারিনি। ফোনের এপার থেকে কেবল মায়ের কথাগুলো শুনছিলাম আর চোখে জল চলে আসছিল। মা অনেক কষ্ট করে এই বয়লার মুরগির ফার্মটা গড়ে তুলেছেন। আমি জানি তিনি একটা মুরগিকে কতটা যত্ন করে বড় করেন। দিনের পর দিন তার পরিশ্রম মনের যত্ন সবকিছুই এই ফার্মটার ভেতর মিশে আছে। কখনো গরমে ঘেমে কখনো বৃষ্টিতে ভিজে মা মুরগিগুলো দেখাশোনা করেছেন। রাতে ঠিকমতো ঘুমান না আবার সকালে খুব ভোরে উঠে খাবার দেন। এই দফার মুরগিগুলো বিক্রির উপযুক্ত হয়ে গেছে। মা খুব আশায় ছিলেন। আগে সপ্তাহ যখন কথা হয়েছিল তখন বলেছিলেন এইবার বিক্রি হলে বাসার সবার জন্য অনেক জিনিস কেনা হবে। আমি মার কণ্ঠে আশা আর আনন্দের মিশ্রণ শুনে খুশি হয়েছিলাম। ভাবছিলাম এবার হয়তো মা একটু হালকা নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন।
কিন্তু না চোরেরা সব শেষ করে দিল। রাতের আঁধারে ফার্মের পেছনের বেড়া কেটে ঢুকে বেশ কয়েকটা মুরগী চুরি করে নিয়ে গেছে। মা বলছিলেন গেট খোলা ছিল না, বুঝলাম না কেমনে ঢুকলো চোর।রাতে কেউ কিছু বোঝে নাই। মায়ের সেই কন্ঠ এখনও কানে বাজছে ভাঙ্গা কষ্টে ভরা। দূরে থেকে এই সব কিছু শুনে নিজেকে আরো বেশি অসহায় মনে হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যাই পাশে বসে তার হাতটা ধরে বলি মা তুমি চিন্তা কইরো না সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতায় এত সহজ নয়। আমি কিছুই করতে পারছি না। পাচ্ছিনা কাছে থেকে এক ফোঁটা সান্তনা দিতে। কেবল ফোনের এপাশ থেকে বলেছিলাম মা আল্লাহ সব দেখছেন তুমি ভেঙে পড়ো না। মা তখনো চুপ করে ছিলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হয়তো এটাও একটা পরীক্ষা। আমি আবার নতুন করে চেষ্টা করব।
এই কথাগুলো শুনে আমি আরো কেঁদে ফেললাম। একজন মা কতটা মজবুত হলে এমন ভাবে কষ্টগুলো গিলে ফেলতে পারেন। আমার নিজের ভেতরেও একরাশ অপরাধবোধ ঘিরে আছে। আমি দূরে কিছুই করতে পারি না। শুধু শুনি আর সান্তনা দেই অথচ আমি জানি এসব কথাই সত্যিকারের কষ্টের উপশম হয় না। মা হয়তো ফোন কেটে ফেলেছেন কিন্তু তার বুকের ভেতর সেই ক্ষতটা থেকে গেছে। আজ সারাদিন বারবার সেই ফোন কথার কথা মনে পড়েছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধুই দোয়া করেছি হে আল্লাহ আমার মায়ের এই কষ্ট যেন তুমি সহজ করে দাও। যারা অন্যের ঘাম ছাড়ানো পরিশ্রম লুট করে তাদের তুমি হেদায়েত দাও। জীবন কখনো খুব নির্মম হয়। কিন্তু কিছু মানুষ যেমন আমার মা তাদের মনবল দিয়ে জীবনকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তোলে।
আমি জানি মা আবার উঠে দাঁড়াবেন। আমি দূরে থেকেও তার পাশে থাকবো প্রতিটা দোয়ায় প্রতিটা চিন্তায়। আল্লাহ যেন তার কষ্ট কমিয়ে দেন আর তাকে নতুন করে পথ দেখান এই প্রার্থনায় আজকের দিনে আমার একমাত্র শান্তি। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একজন মা তার চোখের জল কখনোই দেখা যায় না। আপনার মা বাড়িতে মুরগিগুলো অনেক কষ্ট করে সযত্নে লালন পালন করেন। তার মধ্যে থেকে যদি মুরগির বাচ্চা আসে চুরি হয়ে যায় তার বুকফাটা কান্না দেখতে খুবই খারাপ লাগে। তার ভিতরের কষ্টটা হয়তো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি কিন্তু তাকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমাদের কাছে কিছুই থাকেনা। এইরকম টা অনেক জায়গায় হয়ে থাকে। অনেক কষ্ট করে মানুষ বাড়িতে গৃহপালিত পশুগুলো লালন পালন করে কিছু পয়সা উপার্জনের জন্য। কিন্তু তার মধ্যে থেকে যদি চুরি হয়ে যায় তখন শুনে খুবই খারাপ লাগে।
মনটা সত্যিই খুব খারাপ হয়ে গেল আপনার লেখাটা পড়ে। একজন মায়ের পরিশ্রম, ভালোবাসা আর স্বপ্নকে কেউ এভাবে চুরি করে নিতে পারে ভাবতেই কষ্ট হয়। আপনার মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো, যেন তিনি আবার শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারেন এবং আগামী দিনগুলোয় আরও সাফল্য আসে। আপনার মতো সন্তান পাশে থাকলে মা অবশ্যই আবার ঘুরে দাঁড়াবেন