সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি সারপ্রাইজ
আসসালামু আলাইকুম,
ঘরোয়া জীবন মানেই শুধু দায়িত্ব আর রুটিন নয়, এর মাঝেও থাকে ছোট ছোট চমক আর ভালোবাসার স্পর্শ। আমি আমার মেয়ে এবং আমার স্বামীর মাঝে যে বন্ধন তা প্রতিদিনের ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তে আরো দৃঢ় হয়। আজ আমি শেয়ার করব এমনই এক মধুর রাতের গল্প যেখানে ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি সারপ্রাইজ, মেয়ের আনন্দ আর আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন ভালোবাসা।চলুন আর দেরি না করে শুরু করি আজকের গল্পটি।
সন্ধ্যার পর আমাদের সাধারন রুটিনই ছিল। আমি রান্না বান্না করছিলাম, আমার হাজব্যান্ড অফিসের কাজ শেষ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।আমার ছোট্ট রাজকন্যা ঘরের মধ্যে খেলা করছিল। আর আমি হালকা খিচুড়ি রান্না করছিলাম সহজ হালকা পুষ্টিকর। কারণ স্বাস্থ্যই যে সবচেয়ে বড় সম্পদ সেটা আমরা দুজনেই বুঝি।এদিকে আমার হাজব্যান্ড একটু বিশ্রাম নিয়েই চলে গেছিলেন বাইরে।
রাত আটটা পেরিয়ে গেলে হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখি আমার হাজবেন্ড হাসিমুখে হাতে কাচ্চি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি তো অবাক ভাবতেই পারিনি আজ এমন চমক থাকবে। তিনি বললেন তোমাদের হাসি দেখার জন্যই নিয়ে এলাম। আমি জানি তুমি কাচ্চি খেতে অনেক ভালোবাসো। আমি হালকা মুচকি হাসলাম।
আমার মেয়ে প্যাকেট টা দেখে এমন খুশি,হাতের তালি দিচ্ছে হাসছে দৌড়াচ্ছে লাফাচ্ছে। তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখে আমাদের মন ভরে গেল। আমি ভাবলাম ঠিক ওই তো শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার নয় মাঝে মাঝে মন ভালো রাখাও কিন্তু স্বাস্থ্য রক্ষারই অংশ।আমার এই ছোট্ট মেয়েটা নিজে নিজেই প্যাকেটটা খুব সুন্দর ভাবে খুলল। এবং প্রথমে সেই খাওয়া শুরু করলো। ভীষণ ভালো লাগলো এই প্রথম আমার মেয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করছে।
যদিও এর আগে আমার হাজব্যান্ড অনেকবার কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে আমার জন্য, যেহেতু আমি এই কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে অনেক ভালবাসি কিন্তু আমার মেয়ে তখন খাইত না। এইবার ওর খাওয়া দেখে আমাদের মন ভরে গেল। যতটুকুই বাচ্চা মুখে দেয় না কেন বাচ্চা খাইলে মা এবং বাবার অনেক ভালো লাগে। আমরা তিনজন অনেক তৃপ্তি ভরে খেয়েছি। খাওয়ার সময় এমন একটা শান্তি অনুভব করছিলাম যেন সব ক্লান্তি ভুলে গেছি।
এই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারি সুস্থ জীবন মানে শুধু পরিমিত আহার নয় এর সঙ্গে দরকার মানসিক প্রশান্তি পারিবারিক বন্ধন আর ভালোবাসার ছোট্ট ছোট্ট চমক। আমার হাজব্যান্ড যখন হঠাৎ করে আমাদের জন্য এমন একটি প্রিয় খাবার নিয়ে আসেন সেটা শুধু আমার খুশি নয় স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। এই খাইতে বসে আমার চোখে পানি চলে আসলো কারন আমরা আর আছি এই বাসায় মাত্র কয়েকটা দিন। এরপর চলে যেতে হবে আমাদের সেই চির পরিচিত শ্বশুরবাড়িতে। যেখানে আমি একদম বন্দী জীবন পার করি।
তবে আল্লাহর উপর ভরসা করি ভবিষ্যতেও আমি আবার আমার হাজবেন্ড এর কাছে আসতে পারবো। আল্লাহ যেন আমার সেই মনের আশা পূরণ করে। মাত্র এই একটা বছরে আমার জীবনে এই বাসার প্রতি কেন যে এত মায়া পড়ে গেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। হয়তোবা এই বাসাতে এসে আমি আমার জীবনের স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি জানি আমার মত হাজারো গৃহিনী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শশুর বাড়িতে এরকম বন্ধী জীবন পার করে আমাদের হাতে আসলে কিছু করার থাকে না এভাবেই মেনে নিতে হয়।আমার হাজবেন্ডের এরকম মাঝে মাঝেই চমক আমাদের মা ও মেয়ের জীবনটাকে আলোকিত করে রাখে।
শ্বশুরবাড়িতে গেলে এই সময় গুলো অনেক বেশি মিস করবো আমি। যাইহোক এভাবে আমাদের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার মুহূর্তটাকে আমরা উপভোগ করছিলাম।এই কাচ্চি বিরিয়ানি শুধু খাবার ছিল না ছিল ভালোবাসার চমক আর সুন্দর এক পারিবারিক মুহূর্ত। ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সুলতান ডাইনের কাচ্চি দেখলে কে না খুশি হয়। আপনি গ্রামে চলে যাবেন তাই আপনার হাসবেন্ড আপনার মন ভালো করার জন্যই হয়তো এই কাচ্চি নিয়ে এসেছে। আসলে এই ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাগুলোই আমাদেরকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে।
ভালো থাকুন এই প্রার্থনা করি।
একদম ঠিক কথা বলেছেন জীবনে এই ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্ত গুলো আমাদের অনেক আনন্দ দেয়। আপনার মত আমিও বিরিয়ানি খেতে ভীষণ ভালোবাসি। আমার হাসবেন্ডও মাঝে মাঝেই কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসে। এছাড়া শ্বশুর মশাই অফিস থেকে ফেরার পথে ও মাঝে মাঝে আমার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসে মাঝে মাঝে একটু অন্যরকম খাবার পেলে আমারও ভীষণ ভালো লাগে। মেয়ে ও স্বামীর সাথে একসাথে বিরিয়ানি খুব মজা করে খেয়েছেন। আপনার সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।