শেষ বিকেলের হাওয়া, আমার ছোট্ট জগত

in Incredible Indialast month

আসসালামু আলাইকুম
একটা বছর। মাত্র এক বছর তবু এই বাসাটা যেন আমার হৃদয়ের এক টুকরো হয়ে গেছে। প্রথম যখন এখানে উঠেছিলাম জানতাম না এই চার দেওয়ালের ভিতরে আমি এমন ভালোবাসা এমন শান্তি খুঁজে পাবো। ঢাকার এই ছোট্ট বাসাটা আমার জীবনের এক অনন্য অধ্যায়, যেখানে আমি নিজের মতো করে বাঁচতে পেরেছি। শশুর বাড়ির জীবনের যে জীবন বন্ধতা আর শাশুড়ি নিয়ম কাননে বাঁধা পড়ে যে দমবন্ধ অনুভব, সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছে বাসায় এসে।

এখানে কেউ আমাকে শাসন করেনি কেউ বাধা দেয়নি। পর্দা কোন রঙের হবে বিছানা চাদর কোন ডিজাইনার হবে আলমারি জিনিস গুলো কিভাবে সাজানো হবে সব সিদ্ধান্ত আমার। আমি নিজের মতো রান্না করেছি নিজের মতো সাজিয়েছি নিজের মতো করে এক একটা দিন কাটিয়েছি। আমার ছোট্ট পরিবার আমি আমার হাজব্যান্ড আর আমাদের দুই বছরের মেয়ে। এই বাসায় একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে। আজ বিকেলে যখন বেলকনিতে দাঁড়িয়েছিলাম দমকা হাওয়ায় পর্দাটা একেবারে উড়ে উঠছিল। সে হাওয়ায় এক ধরনের শূন্যতা ছিল, একটা হালকা বিষন্নতা। কেন যেন মনে হচ্ছিল, এ দৃশ্য হয়তো এভাবে আর কখনো দেখতে পাবো না। বেলকনির গ্রিল ছুয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, মনটা ভার হয়ে উঠছিল ধীরে ধীরে।


একদিকে বিদায়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। বারবার চোখের জল আসছে। ছোট ছোট জিনিসগুলো যেগুলো এতদিন আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিল আজ হঠাৎ করে কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে। আমার মেয়েটা কিছুই বোঝে না। ওর কাছে এটা খেলা আমার ব্যাগের উপর শুয়ে পরছে কাপড় গুলো বের করে আবার এলোমেলো করছে। আমি একদিকে গুছাতে গুছাতে আরেকদিকে ওর দুষ্টামির জন্য হাসতে হাসতে কাঁদছি। আমার মন মানতে চায় না তবুও বাস্তবতাকে তো অস্বীকার করা যায় না। সময় ফুরিয়ে আসছে। এই বাসা ছেড়ে আমাকে যেতে হবে সেই পরিচিত কার্টুন্য ভরা পরিবেশে। যেখানে আমি শুধু বউ, পুত্রবধূ দায়িত্বের মানুষ। নিজের মতো করে বাঁচার নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ খুব কমই থাকে সেখানে। এই বাসা এই একটা বছর আমাকে শিখিয়েছে স্বাধীনতা কাকে বলে।

ভালোবাসা কিভাবে নিজের মতো করেই তৈরি করা যায়। আমি জানি জীবন থেমে থাকে না তবে কিছু অনুভূতি সারা জীবন সাথেই থাকে। এই বাসায় এই পর্দা উড়ে যাওয়া বিকেল আমার মেয়ের ব্যাগ নিয়ে দুষ্টামি সবকিছু মিলিয়ে আমার জীবনে খুব মায়াময় অধ্যায় হয়ে থাকবে। আজকাল মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এক অদ্ভুত টান অনুভব করে এই বাসার প্রতি। ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি আমার ছোট্ট মেয়েটা পাশেই নিঃশব্দে ঘুমাচ্ছে। ঘরের আলো নিভানো জানালা দিয়ে বাইরে চাঁদের আলো আসছে। তখন মনে হয় এই শান্ত মুহূর্তগুলোকে যদি ধরে রাখা যেত! এখানেই তো আমাদের সুখের ছোট্ট জগত গড়ে উঠছিল। আমার হাজব্যান্ড যখন অফিস থেকে ফিরে, হাসিমুখে দরজা যখন খুলে দেই, সেই মুহূর্তগুলো আজ স্বপ্নের মতো মনে হয়। প্রতিদিনের এই সাধারণ ঘটনা এই ছোট্ট ছোট্ট সবগুলোই তো আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল এই এক বছরে।জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে তবে একটা বিষয় ভাল করেই বুঝেছি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় গুলো আমরা তখনই অনুভব করি এখন সময় ফুরিয়ে আসতে থাকে।এই বাসা আমাকে শুধু দেয়নি আমাকে গড়ে তুলেছে নতুন ভাবে।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...