কলমি শাক নিয়ে মেয়ের দুষ্টামি
কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকের দিনটা ছিল একেবারে গ্রীনিসুলভ ব্যস্ততায় ভরা। সকাল থেকেই ঘর গৃহস্থালির বানানোর কাজ, রান্নাবান্না কাপড় ধোয়া ছোটখাটো ঝাড় ঝাপটা সবকিছু শেষ করে যখন একটু হাফিয়ে উঠেছি তখন আমার হাজব্যান্ড বাজার থেকে ফিরে এলেন। হাতে দুটো ব্যাগ একটাতে টাটকা মাছ আরেকটা সবুজ সতেজ কলমি শাক। মাছটাকে ভালো করে ধুয়ে ফ্রিজে তুলে রেখে শাক বাছার জন্য এ মিঝেতে বসে পড়লাম। তখনই আমার কোলে উঠে বসলো দুই বছরের রাজকন্যা মিরা।
ওর ছোট্ট মুখখানা, বড় বড় চোখ আর কৌতূহল ভরা চাহনি আমার ক্লান্ত মনকে এক মুহূর্তেই প্রশান্তিতে ভরে দিল। আমি শাক বাসা শুরু করতেই মিরা এসে কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে রইল আমার কাজের দিকে। কিছুক্ষণ পর নিজের হাত বাড়িয়ে বলল আমিও! আমি ওর ছোট্ট হাতে দুটোতে শাক তুলে দিতেই শুরু হয়ে গেল ওর শাক বাছার দুষ্টু মিষ্টি অভিযান।ও যেমন ভাবে শাক ধরছে ঠিক তেমনভাবে উল্টো করে পাতাগুলো ছিড়ে ফেলছে। কখনো শাঁক মুখে দিয়ে পরীক্ষা করছে এটা খাওয়ার মত কিনা আবার কখনো শাক নিয়ে মাথায় রেখে বলছে টুপি। আবার কখনো এক পাতিল থেকে আরেক পাতিলে শাকগুলো দিচ্ছে।একটা সময় দেখি পাশে ছেঁড়া শাকগুলো নিয়ে ও একটা আলাদা দল বানিয়ে ফেলেছে। বলছে এরা সব কলমি শাক বাহিনী।
আমি হাসতে হাসতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম তাহলে আমি তোমাদের নেত্রী।। আমার ছোট্ট নেত্রী তখন আবার শাকের পাতা নিয়ে আমার গালে শুয়ে বলল তুমি খুব সুন্দর। তার এমন আদুরে কথা শুনে আমার চোখ ভরে উঠলো আনন্দে। অথচ তখন চারপাশে শাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ওর জামা কাপড় সবুজ হয়ে গেছে এমনকি ওর মুখেও লেগে আছে পাতার দাগ।কিন্তু এসব কিছুই যেন বিরক্তি নয় বরং স্মৃতির খনি হয়ে উঠছিল। একটু পর দেখি শাক ছাড়াও আমার মেয়ে মেঝে থেকে উঠে চারপাশে ছড়িয়ে রাখা ডাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আবার মেঝের উপর রাখছে। ওর মনোযোগ দেখে আমার মনে হচ্ছিল এই ছোট্ট মেয়েটা যেন সংসারের একটা গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। শেষমেষ শাক বাছা শেষ হলেও বটে, তবে ঘরের অবস্থা যেন একখানা শাকের খামার।
আমি শাকগুলো ধুতে উঠতে দেখি আবার দুষ্ট মেয়েটা আমার শান্তিতে ক্লান্ত হয়ে আমার পায়ের পাশেই বসে পড়েছে। একটু পর চোখে ঘুমের ছায়া মিষ্টি ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল। এইভাবে একটুখানি শাক বাছা কাজের মাঝে আমার মেয়ে দুষ্টামি আদর আর ভালোবাসা মিশে তৈরি হলো এক অসাধারণ বিকালের গল্প। মা মেয়ের এই দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্তগুলোই তো এক একটা জীবনের স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় চিরকাল।এই মুহূর্তগুলোই জীবনের আসল আনন্দ। আজকের এই শাক বাছার গল্প হয়তো অনেক সাধারণ কিন্তু আমার কাছে এটা এক অসাধারণ অনুভূতির নাম।
আপনার রাজকন্যার কথা পড়তে পড়ে গিয়ে আমার নিজের ছেলেদের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। ওরাও এরকমই করতো। আমার ছোট ছেলে পাশের বাড়িটির মেয়ের সাথে খেলতো। একদিন শুনতেছি ওই মেয়েকে বলতেছে যে ,তুমি বাবা আর আমি মা। তুমি বাজার করে নিয়ে আস আর আমি রান্না করি।
বাজার মানে আমাদের উপর এসে হামলা করা। আলু -বেগুন যাকিছু পেট সেগুলি নিয়ে যাওয়া। আমার ছেলে সেগুলো খেলনা বটি দিয়ে কাটার চেষ্টা করে রান্না করতো কারণ ও মা।
বাচ্চারা বড় হয়ে গেলে এই স্মৃতিগুলোই থেকে যায় সুখস্মৃতি হয়ে। ভালো থাকুক আপনার রাজকন্যা ও সেইসাথে ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক এই দোয়া রইলো।