গরমের দিনের অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
আজকে তিনটা যেন চরম ধৈর্যের পরীক্ষা ছিল। সকাল থেকেই গরমে পুরছি গতকাল রাত থেকে এমন ভয়ানক গরম পড়েছে যে বলে বোঝানো যাবে না। ঘরে যেন আগুন জ্বলছে কখনো বিছানায় শুই কখনো ঠান্ডা মেঝেতে গিয়ে শুয়ে আবার কখনো ছুটে যায় বাথরুমে গোসলের আশায়। শরীর তো আর সহ্য করতে পারছে না এত তাপ। ঠিক তখনই সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটের দিকে একবালক এসে জানালো আপু আজকে পানির লাইন থাকবে না, পানি ভরে রাখেন। মনে হল মাথার উপর আবার একটা ঝামেলা এসে পড়ল।
এই অসহ্য গরমের ভিতর আবার পানি থাকবে না,কি দুঃখজনক একটা অবস্থা ভাবা যায়?আমি আর দেরি না করে ছুটে গেলাম আমার হাজবেন্ডের কাছে। বললাম তাড়াতাড়ি গোসল করে নাও আর যেসব পানির কাজ আছে সব শেষ করো। পানি থাকবে না শীঘ্রই। আমি নিজেও গোসল করে নিলাম, মেয়েকেও গোসল করে দিলাম। তারপর যতটুকু সম্ভব বালতিতে বোতলে পানি ভরে রাখলাম। এদিকে আমার রান্নার কাজ প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছিল। গরমে ঘেমে একদম থলথলে কিন্তু কোন উপায় নেই সংসার তো আর থেমে থাকে না। ঠিক দুপুর একটা বাজতেই দেখি পানির লাইন বন্ধ। তেমন একটা সমস্যা হয়নি যেহেতু আগে থেকেই জানতাম পানি থাকবে না।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু তাপমাত্রা সেটাকে তো কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। আমার হাজব্যান্ড আজ ছুটিতে ছিল সেও বাসায় ছিল। তিনজন মিলে গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে কাটালাম। বাহিরে একটু বাতাসের আশায় জানালার কাছে যেতেই মনে হল বাতাসটা যেন আগুন নিয়ে ঢুকছে ঘরে। এতটা উষ্ণ, যেন সারা শরীরে ওভেনে পরিণত হয়েছে। মাথা ধরতে শুরু করল মেজাজ বিগড়ে গেল। এরই মধ্য আল্লাহর অশেষ রহমতে বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে এক মন জুড়ানো ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল যেন বেহেস্ত থেকে এক টুকরো প্রশান্তি এসে আমাদের ঘরে ঢুকেছে। মুহূর্তেই সব গরমের কষ্ট অনেকটা কমে গেল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম মন থেকে। কিন্তু যেই একটু শান্তির নিঃশ্বাস ফেলেই অমনি নতুন এক ঝামেলা হাজির। আমাদের বেলকনিতে ইদানিং দুইটা কবুতর নিয়মিত এসে বিরক্ত করছে।
জানিনা কোথা থেকে এসেছে কিন্তু পুরো বেলকনি টা পায়খানা করে একদম নোংরা করে ফেলেছে। আজ তো এক কবুতর বাসার ভেতরেই ঢুকে পড়ল আমি রাগে ফেটে পড়লাম। আমার হাজব্যান্ড কে বললাম তাড়াতাড়ি ধরে ফেলো এটা পুরো ঘর নোংরা করে দিচ্ছে। আমার হাজব্যান্ড একরকম ধৈর্য ধরে কবুতরটাকে ধরল। মেয়েটা আমার খুশিতে ডকমক করছে কবুতর দেখে তো সে একদম খেলতে নেমে পড়েছে। আমি রাগে গরমে অস্থির,আর ওর চোখে আনন্দে ঝিলিক। আমার হাজব্যান্ড কবুতরটাকে পানি দিচ্ছে আমি রেগে বললাম এই গরমে গরম পানি খাওয়াচ্ছো নাকি আরো বেশি পায়খানা করবে। কিন্তু উনি শান্তভাবে বললেন ও তো প্রানী গরমে কষ্ট পাচ্ছে একটু দয়া করলেই বা ক্ষতি কি। শেষমেশ কবুতরটাকে বেলকুনিতে বেঁধে রাখলাম।
আমার মেয়েটা মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসে, পানি আছে কিনা এমন এক মিশ্র অনুভূতির দিন কখনো রাগ কখনো বিরক্তি কখনো ভালোবাসা আবার কখনো আল্লাহর রহমতের অনুভূতি। অবশেষে বেলকনি থেকে কবুতরটাকে ছেড়ে দিলাম। আজকের এই অস্থির দিনটি যেন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিল। গরমের কষ্ট যেমন আছে তেমনি মানুষের মধ্যে সহানুভূতি ভালোবাসা আর ধৈর্যের মূল্য আছে। আর যত ঝামেলাই হোক না কেন পরিবার একসাথে থাকলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ এমন একটা দিন শুধু শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলা গেল।আর তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.