মিরার আইসক্রিমের বায়না
আসসালামু আলাইকুম
প্রায় সন্ধ্যার দিকে সূর্য তখন ধীরে ধীরে পশ্চিমের আকাশে গা ঢাকছে। আমার ছোট রাজকন্যা তখন tiktok এ মগ্ন। হঠাৎ দেখি তার মুখখানা ভার করে ফেলেছে। কিছু একটা চাওয়ার মতলব তা ওর চোখেই স্পষ্ট। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ছোট্ট করে বলে ফেলল আম্মু আইসক্রিম খাইবো। বুঝলাম ভিডিওতে নিশ্চয়ই আইসক্রিম খাওয়ার কোন দৃশ্য দেখেছে আর তাতেই মনটা উসখুস করছে। এখন তো সন্ধ্যা এই সময় ঠান্ডা কিছু খাওয়া ঠিক না।
তাই তাকে বুঝাতে বসলাম আম্মু এখন সন্ধ্যা এই সময় আইসক্রিম খাওয়া ঠিক না। তুমি একটু অপেক্ষা কর সন্ধ্যার নামাজ হয়ে গেলে তোমার বাবাকে আইসক্রিম নিয়ে আসতে বলবো। আমার কথা শুনে সে একদম চুপচাপ হয়ে গেল তবে জেদ করলো না। হয়তো বুঝেছে আম্মু কথা দিলে কথা রক্ষা করবে। ওর সরল বিশ্বাস আর নির্ভরতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এরপর আমি আমার হাজব্যান্ড কে বললাম মেয়ে বায়না ধরেছে আইসক্রিম খাবে তোমাকেই এনে দিতে হবে।আর হ্যাঁ যেহেতু যাচ্ছ বাজার থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আসিও।
বাজারের লিস্টে ছিল আলু বেগুন মরিচ মেয়ের জন্য কলা আইসক্রিম পিয়াজ আরো অনেক কিছু।আমার হাসবেন্ড একটু হেসে বললেন ঠিক আছে সব নিয়ে আসবো একটু সময় লাগবে তুমি মেয়েকে বোঝাও। সন্ধ্যা ঘোরিয়া রাত নামতে শুরু করলো। মেয়েটি আমার পাশে এসে বসে আবারো প্রশ্ন করলো আম্মু আইসক্রিম আনবে তো বাবা? আমি আদর করে জবাব দিলাম হ্যাঁ আম্মু তোমার বাবা আসার সময় আইসক্রিম নিয়ে আসবে তুমি একটু ধৈর্য ধরে খেলা করো। এর মাঝে আমি রান্না ঘরে গিয়ে চুলায় দুধ বসালাম। ভাবলাম মেয়ের জন্য একটু সেমাই রান্না করি।
কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে জানালার বাইরে তাকাই রাস্তার বাতিগুলো জ্বলছে আর গলির মুখে মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। আমার মেয়ে কলিং বেলের শব্দ শুনে একটা জোরে দৌড় দিল দরজার কাছে। দরজা খুলেই দেখি আমার হাসবেন্ড দাঁড়িয়ে এক হাতে বাজারের ব্যাগ আরেক হাতে মেয়ের জন্য প্রিয় চকলেট আইসক্রিম, সেই সাথে কলা। আমার মেয়েটা আইসক্রিমটা নিয়ে খুশিতে লাফাতে শুরু করলো। যেন সে এক মহার্ঘ কিছু পেয়েছে। বাজারের ব্যাগগুলো নিয়ে রান্না ঘরে এলাম।
বাজারে লিস্টে যা যা দিয়েছিলাম সবই নিয়ে এসেছে। আমার জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে এসেছে। এই ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তগুলোই জীবনের আসল সুখ। তেমন বড় কিছু না একটা আইসক্রিম কিছু বাজার আর ভালোবাসা। তবুও এসবই হৃদয় ভরে যায়। রাতটা নরম হাওয়ায় মিশে যায়। মেয়েটা আইসক্রিম খেয়ে এসে আমার কোল ঘেঁসে বসে বলে আম্মু আইসক্রিম খেতে ভালো লাগছে। আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে বলি তাই তো বুঝতে পারছি আম্মু। তোমার হাসি আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
জীবনের অনেক বড় চাওয়া থাকতে পারে কিন্তু সন্তানের মুখের একখানা হাসি, হাসবেন্ডের সঙ্গে বাজারের ছোট্ট ছোট্ট আলাপ, আর পরিবারে ভালোবাসার বন্ধন এই সবকিছুই একত্রে মিলে তৈরি করে সুখী জীবনের আসল মানে। এই সাধারণ ঘটনা আমার মনে এক অনলিন স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে।আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাচ্চার মুখের দিকে তাকালে একটি মা সবকিছু বুঝতে পারে সেটা আজ আপনার পোস্ট পড়ে আবার বুঝতে পারলাম আপনার মেয়ে ভিডিও দেখছিলাম ফোনে সেখানে আইসক্রিমের ভিডিও দেখে মন খারাপ করে বসে ছিল যেটা আপনি বুঝতে পেরে তার কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন আসলে ছোট মানুষের মন তো তাই যা দেখে সেটাই বায়না করে ফেলে।