বিদায়ের প্রস্তুতি
মাত্র কয়েকটা দিন পরেই এই চেনা শহর ছেড়ে আমি চলে যাব আমার গ্রামের বাড়িতে। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই মনটা কেমন যেন ভার হয়ে উঠছে। এই শহরে ধুলো ভিড় ট্রাফিক সবকিছুই আমি কখনো ভালোবাসিনি কিন্তু তবুও এখানে আমার সংসার, আমার ভালোবাসা আমার হাসির গল্প গুলো গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে আমার হাজব্যান্ড কে ছেড়ে যেতে হবে ভেবে। যদিও এবার আমাদের সাথে এক মাসের ছুটিতে যাবে বাড়িতে কিন্তু সেই তো এক মাস শেষ হলে আমাদের রেখে চলে আসবে।
এইটা মনে পরতেই যেন বুকটার ভিতরে ভেঙ্গেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে থাকবো তাকে ছেড়ে, আর আমার মেয়েই বা কিভাবে থাকবে তাকে ছেড়ে। এদিকে সবকিছু মিলিয়ে শরীরটা খুব একটা ভালো না। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে সর্দি কাশি জ্বর এবং বুকে ব্যাথা বেড়ে গেছে। ডক্টর মেম বলেছেন বেশি চিন্তা করবেন না তাহলেই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু চিন্তা করতে না চাইলেও কেন জানি মনের ভিতর সব সময় এগুলোই ওঠে। প্রতিদিন সকালে আমার হাজবেন্ড অফিসে যাওয়া, দুপুরে ফিরে এসে মেয়ের সাথে খেলা করা রাতে একসাথে খাবার খাওয়া এইসব ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেন এখন হৃদয়ে গেঁথে আছে।
ওকে ছাড়া কিভাবে সময় কাটবে এই প্রশ্নটা আমার ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। আর আমার মেয়ে ও তো এখনো ছোট কিন্তু তবুও ওর চোখে মুখে বাবার প্রতি যে ভালোবাসা তা বলে বোঝানো যাবে না। ওর মুখের হাসি দেখলেই বুঝি বাবা বাসায় থাকলেও সবচেয়ে বেশি খুশি থাকে। এখনো জানিনা গ্রামে গিয়ে ও ওর বাবাকে ছাড়া থাকতে পারবে কিনা। মাঝেমধ্যে ভাবি হয়তো রাতে ঘুমানোর আগে বাবাকে খুঁজবে হয়তো কান্না করবে। এসব ভাবলেই মনটা হু হু করে ওঠে। তাই শহর ছাড়ার আগে সবকিছু মোবাইলে ধরে রাখছি। আমাদের ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়ার ছবি বারান্দায় বসে চা খাওয়ার মুহূর্ত মেয়ের বাবার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়ার দৃশ্য সবাই তুলে রাখছি।
আমি জানি যখন খুব মন খারাপ হবে তখন এই ছবিগুলোই আমায় কিছুটা সান্ত্বনা দেবে। স্মৃতির পাতায় যতটা ধরে রাখা যায় ততটাই যেন এখন বাঁচার উপায়। শহরে থাকা অবস্থায় যেমন খুশির দিন ছিল তেমনি কষ্টের মুহূর্ত ও ছিল। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সবই যেন খুব আপন। মানুষ যখন চলে যেতে চায় না তখন আশেপাশে প্রতিটি জিনিসই ভালো লাগতে শুরু করে। আমার বাসার জানালার পাশের গাছটা রান্নাঘরে চুলার শব্দ সবই এখন বুকের ভিতর কেমন যেন বাজে। তবুও যেতে হবে কারণ সময় যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না তেমন পরিস্থিতিও সবসময় আমাদের মনমতো হয় না।আমি খুব ভালো করেই জানি আমার সামনের দিনগুলো খুব কঠিন হবে। কিন্তু সবকিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
শেষে এটুকুই বলতে চাই বিদায় সবসময় কষ্টের কিন্তু ভালোবাসা স্মৃতি থাকলে দূরত্ব এক সময় মেনে নেওয়া যায়। ছেড়ে গেলেও এই শহরের মানুষগুলো হাসি গুলো ভালোবাসাগুলো সবসময় আমার হৃদয়ে গেথে থাকবে। এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেকদিন পরে কথা হচ্ছে, আশা করছি ভালো আছেন,,
আমাদের কল্পনার জগত থেকে বাস্তব জীবনটা বড্ড কঠিন এই ধরুন আপনাকে ছেড়ে যে আমি এখানে এসেছি একটা মাস কিন্তু চলেও গিয়েছে, কিন্তু যখন এসেছি তখন কিন্তু বড্ড কষ্ট পেয়ে বারবার কষ্ট দিয়েছি পিছনের স্মৃতিগুলো মনে করে,,,।
কিন্তু দেখেন ঠিকই কিন্তু দিন সময় দুইটাই চলে যাচ্ছে অনেক দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে কিন্তু মনের যে একটা টান সেটা কিন্তু রয়ে গেছে,, যদিও আমার আপনার বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে আপনার হাসবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্কটা হাজার গুনে গভীর কিন্তু পরিস্থিতি সবকিছু শিখিয়ে দেয় আমাদেরকে।। এখন যতটা কষ্ট লাগছে বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে কিন্তু যখন দূরে থাকবেন তখন কিন্তু এতটা খারাপ লাগবেনা।।
আমি দোয়া করি আপনারা যেন আবার একসাথে হতে পারেন গত একটা বছরের মতো যেন আবারও স্বপ্নের মত একটা বছর ফিরে পান। আর তখন যেন আমরাও থাকতে পারি কি বলেন তাহলে কেমন হবে আমি তো ভীষণ উত্তেজিত,, যদি আবার দেখা হতো কোন একদিন আমাদের তাহলে মন্দ হতো না।।
বিদায়ের যেকোনো মুহূর্তই সত্যিই খুব বেদনাদায়ক। তবে হাজবেন্ডকে ছেড়ে থাকা খুবই কষ্টকর। ছোট সন্তানকে নিয়ে একা একা থাকা। তাকে সব সময় সামলানো এই সবগুলো অনুভূতি শুধুমাত্র মেয়েরাই বোঝে। উনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবেন সেই সব প্রশ্নের সব সময় মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে। আপনার মত আমারও অনেক সময় এরকম হয় আসলে আমার ছেড়ে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনি বেশ কিছু ছবি সংগ্রহ করে রেখেছেন যাতে মন খারাপ হলে সেগুলো দেখবে। আপনার এই মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।