বাল্যকালের স্মৃতিঃ ভেলা বানানোর গল্প।
প্রিয় ইনক্রেডিবল এবং ক্রিয়েটিভ বন্ধু এবং শুভাকাঙ্খী, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। কারণ গতকাল থেকে আবহাওয়া পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরমের প্রতাপ অনেকটা কমে গিয়েছে। গ্রীষ্মকালে যেটুকু গরম না থাকলেই নয়, কেবল সেটুকু গরমই রয়েছে। যাইহোক, আজ আপনাদের সাথে ছোটবেলার একটি মজার স্মৃতি শেয়ার করব। অবশ্য এটা ঠিক মজার কিনা তা আমি জানিনা। তবে ছোটবেলার স্মৃতি তো মজারই হওয়ার কথা।

সময়টা ২০০৪ সাল। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম। সে বছরই আমার নিজ জীবনের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখেছিলাম। সেই বন্যা এত ভয়াবহ ছিল, আজ অবধি সেরূপ বন্যা আমার চোখে পড়েনি। আমাদের বাংলাদেশে অবশ্য প্রতি বছরেই ভয়াবহ বন্যা হয়। কিন্তু আমাদের এলাকার বন্যা একটি ভিন্ন ঘটনা। কারন আমার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। চাঁদপুর বাংলাদেশের অন্যতম একটি নদীবেষ্টিত জেলা। আমাদের জেলার চারপাশে এবং আমাদের জেলার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় নদী মেঘনা আমাদের চাঁদপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তাছাড়া, অন্যতম নদী পদ্মা চাঁদপুরে এসেই মেঘনার সাথে মিলেছে।
ডাকাতিয়াকে তো আমরা নিজস্ব নদী মনেকরি। কারণ, পুরো চাঁদপুর জুড়েই ডাকাতিয়া রাজত্ব করছে। যার কারনে বৃষ্টির পানি খুব সহজেই নেমে যায় আমাদের ওই অঞ্চল থেকে। তাই যখন রাস্তাঘাট ডুবার মত বন্যা হয়েছে, সেটিকে আমি ভয়াবহ বন্যাই বলবো।
আমার এক বন্ধুর বাড়ি ছিল ফসলি জমির ঠিক মাঝখানে। সাধারণত বর্ষাকাল ব্যতীত তাদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় কোন সমস্যা হতো না। বর্ষাকালে তাদের হাঁটু সমান পানি থাকতো। যা তারা কোনোরকম পার হতে পারত। কিন্তু সে বছর তাদের সেই উপায়ও রইল না। কারণ তখন তাদের কোমর পানিতে পারাপার হওয়া লাগতো। কতক্ষণ আরেক গৃহবন্দী থাকা যায়? জরুরী প্রয়োজনীয়তা বাহিরে আসতেই হয়।
যার কারণে আমার বন্ধু বুদ্ধি করে, ভেলা বানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা দল বেঁধে নেমে গেলাম ভেলা বানানোর কাজে। ভেলা বানানো খুব কঠিন কাজ নয়। এর জন্য লাগে বড় সাইজের তিন থেকে চারটি কলাগাছ। সেগুলো দুই ভাবে জোড়া লাগানো হয়। একটি উপায় হচ্ছে, সবগুলো গাছের গুঁড়ি একদিকে থাকবে, মাথা একদিকে থাকবে। এতে করে যেই পাশে গুঁড়ি থাকবে সেই পাশ বেশি চওড়া হবে, অন্য পাস হবে সংকীর্ণ। আবার একটি গাছের গুঁড়ি এবং একটি গাছের মাথা মিলিয়ে এভাবেও অনেক সময় ভেলা বানানো হয়। এতে করে কোন প্রান্তই বেশি চওড়া এবং অন্য প্রান্ত সংকীর্ণ হয়না। ভেলার আকার অনুযায়ী কলা গাছের মাঝখানে দুটি কিংবা তিনটি গাছের শক্ত ডাল অথবা চিকন বাঁশ প্রবেশ করিয়ে ভেলা মজবুত করা হয়। বেশি মজবুতের জন্য রশি দিয়ে বাঁধা হয় অনেক সময়।

সে বছর ঠিক কিভাবে আমরা তা করেছিলাম তা মনেনেই। তবে আমাদের বেশ আনন্দ হয়েছিল। আমরা ছোট ছিলাম। পানি আমাদের বেশ পছন্দ ছিল। আমরা সারাক্ষণই পানিতে ডুবাতাম। তাই যখন ভেলা বানালাম তখন দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভেলাতে থাকতাম। ঘটনাটি আমাদের জন্য মজার ছিল। কিন্তু যারা ফসল হারিয়েছে, পুকুরে চাষ করা মাছ হারিয়েছে তাদের জন্য বেশ কষ্টকর দিন ছিল। যাইহোক, এই ছিল আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আমার ছোটবেলার স্মৃতি।
Twitter Promotion Link: https://x.com/akib_66/status/1922001542955081960
ছোটবেলার স্মৃতিগুলোই জীবনের আসল রত্ন। আপনার ভেলা বানানোর গল্প যেন এক ঝলক শৈশবের দিনগুলোকে চোখের সামনে এনে দিল। এমন স্মৃতিময় পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। আমিও ছোটবেলায় বন্যা হলে এমন ভেলা বানাতাম, বেশিরভাগ সময় কলার গাছ দিয়ে বানাতাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ এমন সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।