"নিরবতা মানেই সেখানে আমার সম্মতি আছে এমন কিছুই নয়"

in Incredible Indiayesterday
pexels-yankrukov-7640490.jpg

আমরা মানুষেরা সামাজিক জীব, আমরা আমাদের চারপাশের মানুষের সাথে কথা বলি আমাদের অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। কিন্তু সব সময় মানুষ মুখ খুলে নিজের মনের অনুভূতি নিজের মনের কথা প্রকাশ করে এমনটা কখনোই হয় না। কিছু কিছু সময় মানুষ চুপ থাকে হয়তো বা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অথবা ভয় পেয়ে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় কারো প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য চুপ থাকে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সে অসহায় হওয়ার কারণে সে নিরব হয়ে যায়। অথচ আমাদের সমাজে আজও একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কেউ যদি কোন বিষয়ের প্রতি প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। তাহলে ধরে নেয়া হয় সেই সিদ্ধান্তের উপর তারা অবশ্যই মতামত রয়েছে। এই ভ্রান্ত ধারণাই আমাদেরকে ভুলের দিকে ঠেলে দেয়। তাই আমার মনে হয় স্পষ্ট ভাবে সবাইকেই বলে দেয়া উচিত নীরবতা মানেই সম্মতি নয়।

নীরবতার নানা কারণ রয়েছে, প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে মানুষ কেন নীরব হয়ে থাকে। মানুষ কেন চুপ থাকে এই চুপ থাকার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। কেউ হয়তো বা ভয় পায় যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। আবার কেউ চিন্তা করে যদি সমাজ এবং সমাজের মানুষ তাকে অপমান করে। আবার কেউ কেউ চিন্তা করে আমার বলার কিছুই নেই যা আমার ভাগ্যে আছে তা হচ্ছে। আমি কিছু বললে এখন তো আর কিছু বদলে যাবে না। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় সে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙ্গে পড়ে, কোন কিছু প্রতিবাদ করার মত শক্তি সাহস কোন কিছুই তার কাছে নেই। যেমন ধরুন একটা কর্মস্থলে যখন একজন নারী সহকর্মীকে নিয়ে বাজে কোন মন্তব্য করা হয়। তখন যদি সে চুপ থাকে তখন কিন্তু অফিসে থাকা অন্যান্য কর্মীরা মনে করে, হয়তোবা এর মধ্যে তার সম্মতি আছে।

আসলে সে চুপ করে আছে তার চাকরি চলে যাবার ভয়ে। তার নামে বদনাম হবে এই জন্য সে চুপ করে আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সামাজিক পারিবারিক বৈষম্য সবকিছু মানুষকে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে, তখন মানুষের চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তখন মানুষ ভয়ে অপমানিত হবে এই কথা চিন্তা করে চুপ করে থাকে। তাই আমার কাছে মনে হয় সমাজের মানুষের যেই মানুষটা চুপ করে থাকে, সেই মানুষটার সম্মতি আছে এই ধরনের ভ্রান্ত চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসা। মাঝেমাঝে চুপ করে থাকা কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা ও বুঝায় এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। কেউ যদি চুপ করে থাকে তাহলে আমাদেরকে বুঝতে হবে সে দ্বিমত হিসেবে রয়েছেন, অথবা তার প্রতিবাদ করার ভাষা তার কাছে নেই বা সে সুযোগ পাচ্ছে না।

pexels-cottonbro-6284260.jpg

কোন কিছু প্রতি সম্মতি বুঝতে চাইলে তার সাথে স্পষ্ট ভাবে কথা বলা উচিত, তার মনের ভাব জানা উচিত তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মতামত জেনে নেয়াটাই শ্রেষ্ঠ বলে আমি মনে করি। প্রতিটা মানুষের জীবনে নিজের ব্যক্তিগত কিছু কষ্ট থাকে, সেই কষ্টগুলো হয়তোবা তারা সমাজে তুলে ধরতে চায় না। যার কারণে কেউ কিছু বললেও সেখানে চুপ থাকে, প্রতিটা সময় চুপ থাকা মানেই হ্যাঁ এটা কখনোই হতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চুপ থাকা মানেই না আমি প্রতিবাদ করতে চাই এমনটাও ধরে নিতে হবে।

আমাদের সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থার, পরিবার এবং সমাজকে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। যেখানে মানুষ নিজের মতামত নির্ভয় প্রকাশ করতে পারবে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে না বলা মানে কোন অপরাধ নয়, এটা আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মানের একটা বিষয়। পাশাপাশি তাদেরকে এমন মনোবল এবং সাহস দিতে হবে যেন তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। প্রতিটা মানুষের নিজস্ব একটা জীবন রয়েছে নিজস্ব একটা পৃথিবী রয়েছে। যদি কেউ চুপ করে থাকে তাহলে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে এটা তার প্রতিবাদের ভাষা।

আপনি যদি আপনার মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারেন বা কেউ যদি মনের অনুভূতি জানতেন না চায়। তাহলে আসলে সেখানে কিছুই বলার থাকে না, তবে সমাজের মধ্যে অবশ্যই আমাদের এই চুপ করে থাকা যে সম্মতি লক্ষণ, এই ভ্রান্ত ধারণা সবার কাছ থেকে দূরে সরাতে হবে এবং চুপ করে থাকাটাকেই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। না বলাটা কে আমরা যখন গ্রহণ করতে পারব, তখনই কিন্তু আমরা প্রকৃত মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবো।

ছবির উৎস

ছবির উৎস