চাকরি জীবনের প্রথম দিন। (First day of working life.)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ।
দিন যত যাবে তত হয়ত বাস্তবতাকে আরও বেশি করে বুঝতে পারব। জীবন পথ না চললে, পথে হোঁচট না খেলে কিছু শেখা যায় না। রুমে বসে থেকে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করে কোন কাজে আসবে না যদি বাস্তব কোন অভিজ্ঞতা না থাকে।
এই আমার কথাই ধরুন, ছোট বেলা থেকে আমার যখনই কেন সমস্যা হতো, কিছু বুঝতে পারতাম না আমার একজন শিক্ষক আছেন, তাকে জানাতাম। সে সব বলে দিত কিভাবে কি করতে হবে৷ আস্তে আস্তে যখন আমি স্কুল ছেড়ে কলেজ জীবন শেষ করলাম, তখন থেকে স্যার আমাকে অনেক সময় অনেক কিছু জানতে চাইলে বলত না৷ বলত "রাসেল জীবনে সব জায়গায় যাও, নিজে ভাবতে থাকো, সমস্যার সমাধান করো জীবনে এগিয়ে যেরে পারবে।"
আসলেই আমি বর্তমানে কথাগুলো বাস্তবে বুঝতে পারতেছি। আপনারা যারা আমার গত দিনের পোষ্টটা পরেছেন, তারা হয়ত জানেন, আমি একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি পেয়েছি। আজকের দিনটা ছিল জয়েনিং এর দিন৷ আমার চাকরির প্রথম দিনটা কিভাবে কাটল, সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম।
আজকে ভোরের দিকেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। সকাল ৭ টার পরে দাঁত ব্রাশ করে গোসল করে নিলাম। কারণ বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অফিস করতে হবে। ফ্রেশ হয়ে আগে সকালের নাস্তা শেষ করে নিলাম। তারপর রেডি হলাম। আমাকে ৯ টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে৷ আমি যেখানে আছি, সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে। এজন্য আমাকে ১ ঘন্টা আগে মানে সকাল ৮ টার সময় বের হতে হবে।
৮:০৫ মিনিটে আমি বাসা থেকে বের হই। তারপর একটা অটো করে মেইন রাস্তায় চলে আসি। এরপর বাসে পর্বত মোড় পর্যন্ত এসে আবার একটা অটোতে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে নামলাম। এরপর গেট দিয়ে ভিতরে চলে গেলাম। এরপর আমার কাছে একটা নাম্বার ছিল, যারা আমাকে কল দিয়ে সকল তথ্য জানাত, তাকে কল দিলাম।
কিছু সময় অপেক্ষা করার পর সে আসল। এরপর আমাকে HR (মানব সম্পদ বিভাগ) সেকশনে নিয়ে গেল। এরপর সেখান থেকে আমাকে নানা ধরনের দিক নির্দেশনা বুঝিয়ে দিল। তারপর, আমাকে আমার নিজ ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হলো, একজনের সাথে। আমি এখানে EEE ডিপার্টমেন্টে জয়েন করছি।
ডিপার্টমেন্টে গিয়ে প্রথমে ডিপার্টমেন্ট প্রধানের সাথে দেখা করলাম। তারপর কিছু সময় স্যারের ওখানে বসে কথা বলে, স্যারদের সাথে পরিচিত হলাম, এরপর আমাকে আমার ল্যাবে পাঠানো হলো। সেখানে এসে আমি একটা কম্পিউটার নিয়ে আমার জয়েনিং লেটারটা লিখে ফেললাম। তারপর সেটা ডিপার্টমেন্ট প্রধানকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে HR বিভাগে জমা দিয়ে আসলাম।
এরপর আবার ল্যাবে এসে আরও কয়েকটা ফরম ফিলাপ করলাম। আসলে ফরমগুলে আমাকে অনলাইনেই পাঠায়ে দিতে বলছিল, কিন্তু আমি না বুঝার কারণে আজকে এসে সকল কিছু জিগাসা করে টাইপ করলাম৷ এগুলো টাইপ করে ইমেইলে পাঠায়ে দিতে হবে। এরপর আবার প্রিন্ট আউট কপি স্বাক্ষর করে জমা দিতে হবে।
এই কাজগুলো করতে করতে ১২:৪০ বেজে গেল, তারপর ফাইলগুলো জমা দিতে গিয়ে দেখি স্যার খুব ব্যস্ত আছে, চবার এদিলে দুপুরে খাওয়ার সময়ও হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি চলে আসলাম, ল্যাবে জিনিসগুলো রেখে, আমিও চলে গেলাম নামাজ আদায় করতে, যোহরের নামাজ শেষ করে বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসলাম। আসলে আজকে প্রথম দিন, এজন্য খাবার রুম থেকে আনি নাই৷
২ টার একটু আগে আবার ল্যাবে চলে আসলাম। ল্যাবে এসে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর, একটু রেস্ট নিয়ে আবারও চলে গেলাম HR সেকশনে। সেখানে গিয়ে বাকি কাগজগুলো জমা দিলাম। তারপর তারা আমার সকল সার্টিফিকেট এবং মার্ক শিটের আসল কপিগুলো দেখল।
এবার একজন স্যারের কাছে আমাকে পাঠানো হলো, সেখানে গিয়ে হাজিরা দেওয়ার জন্য ফিঙ্গার সেট করে আসলাম। এখন থেকে সকালে আসার পর এবং যাওয়ার সময় ফিঙ্গার দিয়ে যেতে হবে, সময় মতো না দিলে বেতন কাটা যাবে। ফিঙ্গার দিয়ে এসে আবার অন্য স্যারের কাছে গেলাম। সেখানে,, বেতন তোলার জন্য কিভাবে ব্যাংক একাউন্টের আবেদন করতে হবে, তা সম্পূর্ণ প্রসেস দেখিয়ে দিলেন।
আমার ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে অনেকগুলো জায়গায় ভুল হয়েছিল, সেগুলো স্যারে বলে ঠিক করে দিল। আসলে অনেক বছর কম্পিউটার নিয়ে সে রকম লেখালেখি করা হয় না। এজনয় আজকে লিখতে গিয়ে কিছু টাইপিং মিস্টেক হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক মোটামুটি অফিসিয়ালি কাজ শেষ করে আমি চলে আসলাম ল্যাবে।
ল্যাব থেকে পূর্ণরায় বাইরে গিয়ে, আমার ফিঙ্গার টা ঠিক মতো কাজ করতেছে নাকি, সেটা চেক করে আসলাম। প্রথমবার দেওয়ার পর নিলো না, তারপর দেওয়ার পর নিলো। এবার নিশ্চিন্তে ল্যাবে এসে বসলাম। আরও কয়েকটা ঝামেলা রয়েছে, ব্যাংক একাউন্ট খোলা।
মোটামুটি সব ঠিক করে ল্যাবে এসে বসে থাকলাম। তখন বিকাল ৩:৩০ টা মতো বাজে। এই সময়টা আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। আসলে অনেক দিন হলে এভাবে কাটানো হয় না, এজন্য ঘুম পাচ্ছিল,, আমি আবার ঘুম কাটানোর জন্য মোবাইল নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম। কিছুটা সময় পর আবার গিয়ে কম্পিউটার অন করে কিছু সময় লেখালেখি করলাম।
এভাবেই বিকাল ৫ টা বেজে গেল। ল্যাব বন্ধ করে, আমি চাবিটা অফিসে জমা দিয়ে চলে আসলাম ফিঙ্গার দিতে। ফিঙ্গার দিয়ে আজকের মতো বিদায় জানিয়ে বাসায় আসার জন্য বেরিয়ে পরলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অনেকটা পথ এসে, তারপর আবার অন্য বাসে বাসায় চলে আসলাম।
চাকরি জীবনের প্রথম দিনটা এভাবেই কেটে গেল৷ আশা করি এই ছোট চাকরি করতে করতে আল্লাহ তায়ালা আমার স্বপ্নের জায়গায় পাঠায়ে দিবেন। আজকের দিনটা আপনাদের সাথে শেয়ার করে স্মৃতির পাতায় রেখে দিলাম। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আবারও দেখা হবে আমার নতুন কোনো পোষ্ট নিয়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.