একটা শিশিরভেজা সকালে মাছ ধরার গল্প।
![]() |
---|
নমস্কার বন্ধুরা,
আবার একটা মাছের গল্প নিয়ে চলে আসলাম। তবে আমি দুঃখিত যে গতকাল আমার লেখা উপস্থাপন করতে পারিনি কারণ বৈদ্যুতিক বিভ্রাট ছিল সেই সন্ধ্যা থেকেই। যাইহোক, মাছের সাথে যেন একটা অদৃশ্য সম্পর্ক রয়েছে আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি।
![]() |
---|
অনেকদিন বাদে ভোরের আকাশটা দেখার সুযোগ মিললো। যদিও রাতে বিন্দুমাত্র ঘুম হয়নি তবুও সকালে মাছের কথা মনে পড়তেই ছুটে গিয়েছিলাম পশ্চিম পাশের বিলে। শুধুমাত্র শরীরেই শীতের পোশাক ছিল না কিন্তু দূরে তাকালেই মনে হচ্ছিল যেন শীতের শিশির ও কুয়াশা। কিছুটা দূরেও কিছু ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছিল না।
জুতা পায়ে যাবো কি যাবো না এটা নিয়েই সন্দিহান ছিলাম। তবে মায়ের কথানুযায়ী জুতা পায়ে দিয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু চোখ যেন মাটি থেকে সরাতেই পারিনি। শিশিরভেজা ঘাস এবং এটেল মাটি যে কোনো সময়েই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাইহোক, বাবা ইতিমধ্যে জলে নেমেছিল, মূলত বাবার বিলম্ব দেখেই ঐ সকালে আমার পুকুরে যেতে হয়েছিল।
![]() |
---|
আগে শরতের শিশির দেখেছি আর এখন দেখছি গ্রীষ্মের শিশির। প্রকৃতি সম্পূর্ণ ৩৬০° কোণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে থেকে থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের ওপর আক্রমণ করছে। আমরা প্রকৃতিকে বিরক্ত করতে করতেই এই অবস্থার সৃষ্টি করেছি। এখন আর কিছুই করার নেই।
প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে, হয়তো আমরা না হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটা উপযুক্ত পরিবেশ ও শান্ত প্রকৃতি উপহার পাবে। যাইহোক, মাছকে উপলক্ষ করে অনেক দিন পর সকালে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটার সুযোগ হলো। ইচ্ছে করেই জুতা টা খুলে রেখে খানিকক্ষণ হাঁটলাম।
![]() |
---|
একশত মিটার লম্বা ২টা জাল এভাবে ফেলে রাখা হয়েছিল, দেখুন কিভাবে ট্যাংরা মাছ আঁটকে রয়েছে। এটাই কিন্তু সেই সুস্বাদু ট্যাংরা মাছ যে মাছ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা এক প্রকার অসম্ভব। এই মাছে একদমই আঁশ নেই কিন্তু রয়েছে বিষাক্ত তিনটা কাঁটা।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে টেংরা মাছ ধরার জন্য ফেলে রাখা এই জালে এত পরিমান ট্যাংরা বেঁধেছে যে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নিতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লেগেছিল আমার এবং বাবার। পাশাপাশি দুঃখজনক হলেও সত্য বেশি পরিমাণ মাছ বাঁধলে আবার একটা ঝামেলা ও আছে। ঝামেলাটা হল এই জাল মাত্র একবারই ব্যবহার করা যায় যদি প্রচুর পরিমাণে ট্যাংরা মাছ আটঁকে।
![]() |
---|
এটা আমাদের এক জালের মাছ ছিল। একটা মজার বিষয় হলো যে স্থান থেকে আমরা মাছ ধরেছি এখানে কোন জল ছিল না। বরং জল কমে যাওয়ার পর সূর্যের তাপে মাটিটা পুরোটাই শুকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে এখানে কোমর অব্দি জল জমেছে। হঠাৎ কি যেন মনে করে আমার বাবা বলল যে আজ ট্যাংরা মাছ উঠবে, এটাই হলো সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা।
যাইহোক, আমরা প্রায় ৮ কেজির মতো ট্যাংরা মাছ ধরে নিয়ে জালসহ বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম। ট্যাংরা মাছ যদিও সুস্বাদু তবে এটা শীতের দিকে অনেক বেশি ভালো লাগে এবং এই সময়ে টেংরা মাছের ডিম হয়ে যায় যে কারণে খুব বেশি মজা লাগে না। তবে হ্যাঁ আমরা হয়তো সচরাচর এ মাছটা খেতে পারি তাই আমাদের কাছে মজা নাও লাগতে পারে।
![]() |
---|
"এই উটচান্দা মাছটাও আমার কাছে একদম অপরিচিত ছিল যেটা খাওয়া তো দূরের কথা আমি কখনো দেখিনি। হয়তো তাঁর শারীরিক আকৃতির জন্যই এই মাছের নাম উটচান্দা।"
![]() |
---|
"এখন ইলিশ মাছের সিজন না যে কারণে ইলিশ মাছ একদম পাওয়া যায় না। তবে এখন যে ইলিশ মাছ গুলো বাজারে দেখা যাচ্ছে এগুলো শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার পরে এখন বাজারজাত করা হয়েছে। যে কারণেই এই মাছগুলো যতটাই বড় হোক না কেন সেইটা সিজনাল মাসের মত সুস্বাদু না।"
আপনাদের কাছে কোন মাছ বেশি প্রিয়?
আমার আজকের লেখাতে আমি দেশি মাছ এবং সামুদ্রিক মাছের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর একটি অংশ উপস্থাপন করেছি। যেহেতু, আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন তাই আমাদের খাবার অভ্যাস এবং পছন্দের ক্ষেত্রটাও বৈচিত্র্যময়ই হবে।
আমার লেখাতে উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর আলোকে যদি আমি আমার পছন্দটা উল্লেখ করি; তাহলে এই মুহূর্তে আমি নিঃসন্দেহে বলবো যে ইলিশ মাছ আমার খুব পছন্দের।
কিন্তু সিজন এবং সময়ানুসারে খাওয়ার ক্ষেত্রে আমি এই মুহূর্তে পছন্দ করব ট্যাংরা মাছ। কারণ এটা আমাদের দেশি মাছ এবং একদম জল থেকে তুলে আমরা খাবার উপযোগী করে খেতে পারি। যেখানে নিঃসন্দেহে রাসায়নিক কোনো কিছু ব্যবহার করার সুযোগ নেই।
অথচ দেখুন মাসের পর মাস সংরক্ষণ করে রাখার পরেও এই ইলিশ মাছ দেখতে কতটা তরতাজা মনে হচ্ছে!
আপনাদের এখানে সচেতন হতে হবে, কারণ চকচক করা মানেই ওই মাছটা যে তরতাজা এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এমনটা কিন্তু একদমই না।
যাইহোক, আপনার প্রিয় মাছ সম্পর্কে কিন্তু জানাবেন বন্ধুরা। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
শহরে এখন কুয়াশা দেখা না গেলেও যে গ্রামে দেখতে পাওয়া যাই এটা কিছুদিন আগে আমি আমার শশুর বাড়ির গ্রামে গিয়ে দেখেছিলাম। আবার কয়েকদিন আগে নিউজে দেখলাম পঞ্চগড়ে এখনো কুয়াশা পরে।
আপনি মাছ ধরতে পারেন এটা আগেও দেখেছি। এতো পরিমানে মাছ ধরতে দেখে ভালো লাগলো। তবে উটচান্দা মাছের নাম জীবনে প্রথমবার শুনলাম। বিলুপ্তপ্রায় একটা মাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।