আইনসম্মত বিবাহ (Registry Marriage)সম্পন্ন হইল
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজ আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আমার আজকের পোস্টটি আমার কাছে খুবই স্পেশাল। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার রেজিস্ট্রি ম্যারেজের কিছু গল্প শেয়ার করতে চলেছি।
গত একটি পোস্টে আপনাদের আমি জানিয়েছিলাম যে আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজের জন্য অ্যাপ্লাই করেছি। সেই সাথে সেই দিনটিতে কি কি ঘটেছিল তা আপনাদের বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম। অ্যাপ্লাই করার এক মাস পর অফিস থেকে ফাইনাল সিগনেচার এর জন্য তারিখ দেওয়া হয়। সেই দিন ছেলে , মেয়েএবং উভয় পক্ষ থেকে তিনজন সাক্ষীকে উপস্থিত থাকতে হয়। রেজিস্টার অফিসারের উপস্থিতিতে তারা স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে আইনসম্মত বিবাহ সম্পন্ন করে।
আমরাও প্রায় একমাস আগে রেজিস্ট্রি ম্যারেজের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। একমাস পরে অর্থাৎ গত ২রা মার্চ আমাদের তারিখ দেওয়া হয়। তবে সেই দিন আমার দাদার কিছু দরকারি কাজ থাকার ফলে বীরভূম যেতে হয়েছিল। আর আমার দিক থেকে যেহেতু দাদাই সই করতো তাই আমাদের সেই দিনটা ক্যানসেল করে অন্য একটা তারিখ এর জন্য রিকুয়েস্ট করতে হয়। পরবর্তীতে ওরা আমাদের ৭ই মার্চ সময় দেয়। সেইমতো আমরা প্রস্তুত হতে থাকি।
তবে যেহেতু আমাদের অনেকদিনের বন্ধুত্ব তাই বিয়ে করতে চলেছি বলে আলাদা রকমের কোনো এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল না। সবই যেন As usual লাগছিল। যাইহোক, সেই দিন শাড়ি পরবো বলেই ঠিক করি। আর সেই মতো অনেক আগে থেকেই একটা নর্মাল শাড়ি ঘরে কিনে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে এনগেজমেন্ট উপলক্ষে ওদের বাড়ি থেকে একটা পাঞ্জাবী ওর পিসিমণি উপহার দিয়েছিল। শাড়ির সাথে খানিকটা ম্যাচ করাই ফিল করা হয় ওটাই ও পরবে। আর আগের দিন মানে এনগেজমেন্টের দিন যেহেতু অনেক নতুন নতুন মুখ আমাকে দেখার জন্য এসেছিল তাই সেই দিন লজ্জা - ভয় ইত্যাদি নানা কারণে শাড়ি পরে আমার আর শুভায়নের ডুয়েট ফটো সেরকম তোলার অবসর পাইনি । তাই ভেবেছিলাম রেজিস্ট্রি ম্যারেজের দিন একটা বান্ধবীর কাছ থেকে একটু সাজবো। আর দুজনের কিছু ডুয়েট ফটো তুলবো, যেটা পরবর্তীকালে অ্যালবামে অ্যাড করা যাবে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আমার এক বান্ধবীকে সেই দিন সাজানোর জন্য বলে রাখি। ও যেহেতু সদ্য কাজ শিখেছে তাই ওর রেঞ্জ অনেকটাই কম। আর আমিও খুব বেশি টাকা দিয়ে আবারো সাজতে চাইনি কারণ সদ্য এঙ্গেজমেন্টে একজনের কাছে সেজেছিলাম। যথারীতি ৭ তারিখ সকাল সাতটার সময় ও আমাদের বাড়ি চলে আসে। তারপর মেকাপের বিভিন্ন সরঞ্জাম সাজিয়ে নিয়ে বসে পড়ে আমাকে সাজাতে। মেকআপ করা, চুল বাধা, শাড়ি পরানো সমস্ত কিছু একা হাতে করতে করতে নটা বেজে যায়। এই দুই ঘন্টায় মেকআপ করতে করতে অনেক গল্প হয়। তারপর ও ওর সমস্ত জিনিসপত্র গুটিয়ে আমাকে বিদায় জানায়।
তারপর দাদাকে নিয়ে চলে যাই আমাদের বাড়ির কাছাকাছি একটি নার্সারিতে ফটো তুলতে। গাছপালার মধ্যে ফটো তুলতে আমার বেশ ভালো লাগে। তার আগে তিন মানে ছয় তারিখে দাদার বিয়ের ফটোগ্রাফির কাজ ছিল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওর ভোর হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আমার এই সব জ্বালাতন সহ্য করা সহজ ব্যাপার নয় বুঝি তবে এত কষ্ট করে সাজলাম ফটো না তুললে হয়। তাই বেশ কিছু ফটো তুলে নিলাম। সেই সাথে কিছু ভিডিও ক্লিপস্ ও নিয়ে নেওয়া হল।
এর কিছুক্ষণ পর শুভায়ণ এলে আমাদের বেশ কিছু ডুয়েট ফটো তোলা হয়। এই ফটো তোলাও বেশ ঝক্কির কাজ। দুজনকে ভালোভাবে পোজ দিয়ে ফটো তোলা তে ফটোগ্রাফার দাদার কালঘাম ছুটে যায়। তাও কোনক্রমে দাদা আমাদের বেশ কিছু ভালো ভালো ফটো তুলে দিয়েছিল।
আমাদের রেজিস্ট্রির টাইম দেওয়া ছিল সকাল নয়টা। যদিও সকালবেলায় ফোন করে টাইম টা আরো পিছনো হয়। আমাদের দুপুর বারোটার সময় যেতে বলা হয়। এইসব ফটো তোলা তারপর কিছু খাওয়া দাওয়া করতে করতেই আমাদের বারোটা বেজে যায়। আমাদের বাড়ি থেকে রেজিস্ট্রি অফিস বাইকে করে প্রায়২০- ৩০ মিনিটের রাস্তা। আমি , দাদা, বৌদি , ভাইপো আর শুভায়ন ---- মোট পাঁচজন দুটো বাইক করে রওনা হই। অন্যদিকে আমার ঐ বাড়ির বাবা -মা রা টোটো গাড়ি করে রওনা হয় রেজিস্ট্রি অফিসের উদ্দেশ্যে।
আমরা মোটামুটি সাড়ে বারোটা নাগাদ রেজিস্ট্রি অফিসে পৌঁছে যাই। সেখানে গিয়ে তো চক্ষু চরক গাছ। দেখি রেজিস্ট্রি অফিসে তালা ঝোলানো। তৎক্ষণাৎ যিনি আমাদের ফোন করে দুপুর ১২ টায় আসতে বলেছিলেন তাকে কল করা হলো। তিনি তখনও বলে গেলেন, " আজ তো বন্ধ হওয়ার কথা নয়, স্যারের তো ওই অফিসেই থাকার কথা।" যাই হোক, নিজেদের মধ্যেই একটা বিশৃঙ্খল পরিচিতি তৈরি হলো এইরকম একটা সিচুয়েশন দেখে। তারপর সরাসরি রেজিস্টার অফিসার কে ফোন করা হয়। উনি জানান যে, " শুক্রবার করে তো আমি ওই অফিসে থাকি না। আমি থাকি হাঁসখালি অফিসে।" আমরা যেই অফিসের সামনে ছিলাম সেখান থেকে হাঁসখালি অফিস প্রায় ১০ কিলোমিটারের রাস্তা। সুতরাং এইরকম একটা সিচুয়েশনে পড়ে আমাদের মুড পুরোপুরি অফ হয়ে গিয়েছিল।
যাই হোক, আমরা কি করলাম আমরা হাঁসখালি অফিসেই যাব। সেইমতো কিছু সময়ের মধ্যে সেই অফিসে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানেই আমাদের আগে সকলের রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছিল তাই আমাদের দাঁড়াতে হয়নি। যাওয়া মাত্রই আমাদের কাগজপত্র বের করে উনি সই করার জন্য এগিয়ে দেন। তারপর সমস্ত প্রসেস কমপ্লিট করি। অবশেষে উনি আমাদের লিগাল হাজব্যান্ড ওয়াইফ হিসেবে ঘোষণা করেন।
তারপর আমরা সকলে মিষ্টিমুখ করি। সেই সাথে মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য বেশ কিছু ফটো তুলে রাখি। এরপর আমরা আবার কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কৃষ্ণনগরে ফিরে আমাদের এখানকার একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট, 'রান্নাবাটিতে' দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ সারি। তারপর বাড়ি ফিরে যাই।
এই ভাবেই অনেক উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে আমরা অবশেষে আইনসম্মত বিয়ে সম্পন্ন করি। সকলে আমাদের আশীর্বাদ করবেন আমরা যেন আগামী দিনগুলোতে সকলকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকতে পারি। আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।
We support quality posts and good comments Published in any community and any tag.
Curated by : edgargonzalez
Thank you so much for voting my post.
এতদিন আপনাদের এংগেজমেন্ট দেখেছিলাম আজকে আপনারা আইনসম্মত অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন বিয়ে করে নিয়েছেন আসলে আপনাদের বিয়ে তো হবেই তাহলে রেজিস্ট্রেশন বিয়ে করার মানেটা আমি ঠিক বুঝলাম না যাইহোক বিয়ের মধ্যে আপনার সাথে অনেক বেশি আনন্দ করেছেন যেটা আপনার ফটোগ্রাফি এবং আপনার লেখা দেখে বুঝতে পারলাম ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।