ঐতিহ্যবাহী বারোদোল মেলার ইতিহাস
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আমি প্রায়ই আপনাদের সাথে আমাদের শহরের বিভিন্ন মেলার গল্প শেয়ার করি। তবে আমাদের শহরে প্রতিবছর একটি বড় মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলাটির নাম 'বারোদোল মেলা'। এই মেলাটির নাম কেন এরকম রাখা হয়েছে সেই বিষয়েও আপনাদের জানাবো। এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় কৃষ্ণনগর শহরের রাজ বাড়ির মাঠে।
প্রতিবছর দোল উৎসবের পরে চৈত্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীর প্রাঙ্গণে মহাসমারহে এক বিরাট মেলার সূচনা হয়। এই মেলা চলে প্রায় এক মাস। কোন কোন বছর এক মাসের থেকে কিছুদিন বেশিও থাকে। এটি এখানকার অনেক প্রাচীন ও দীর্ঘ সময় ব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়া একটি মেলা। যে মেলা দেখতে দূর দূরান্তের মানুষ জমায়েত হন।
লোকমুখে প্রচলিত আছে যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই বারোদোল মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। যাতে রাজবাড়ীর অন্তঃপুরের মহিলারা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাজবাড়ি থেকেই বেলা উপভোগ করতে পারেন সেই জন্য এই মেলার প্রবর্তন তিনি করেছিলেন। অনুমান করা হয় ১৭৬৪ সাল থেকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যদিও এই বিষয়ে কোনো লিখিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি |
---|
অনেকে মনে করেন, দোল পূর্ণিমার ১২ দিন পর এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় বলে এই মেলার নাম বারোদোল মেলা। তবে এই সত্যি কথা বলতে গেলে এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভ্রান্ত। এরূপ নামকরণ হওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। আসলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই মেলায় রাজবাড়ির কুলনারায়ণের বিগ্রহ ছাড়াও কৃষ্ণের বারোটি মূর্তির পুজো হতো। এই বারটি কৃষ্ণের বিগ্রহ ১২ টি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে আনা হতো। মেলা সূচনা হওয়ার প্রথম তিনদিন নাটমন্দিরে এই বিগ্রহ গুলি পূজিত হতো। তিনদিন পর আবার সেই মূর্তিগুলিকে যথাস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। এই রীতি এখনো বহাল রাখা হয়েছে। প্রতিবছর মেলার সূচনার দিন থেকে প্রথম তিনদিন এই বারটি কৃষ্ণ বিগ্রহ পূজিত হয়। তাই এই মেলার নামকরণ করা হয়েছে 'বারোদোল' মেলা।
এই বছর মেলা শুরু হবার দ্বিতীয় দিন আমরা চলে গিয়েছিলাম রাজবাড়ীর নাট মন্দিরে বিরাজমান বারটি কৃষ্ণ দেবতার বিদ্রোহ পরিদর্শন করতে। রাজবাড়ীর নাট মন্দিরে ঢোকার রাস্তাতে দুই ধারে প্রচুর সন্ন্যাসী ও ভিখারী বসে থাকেন। এই প্রথম তিনদিন প্রচুর মানুষ ঠাকুর দর্শন করতে এসে এনাদের চাল ,ডাল ও কিছু দক্ষিণা দিয়ে যান। নাট মন্দিরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে সেখানে ১২টি ভিন্ন ধরনের কৃষ্ণের বিগ্রহ বিরাজ করছে। দর্শনার্থীরা ঠাকুরকে আবির দেয়।
এই বিগ্রহ গুলির আবার বেশ মজার বিষয় রয়েছে। এগুলিকে কিন্তু প্রথম তিনদিনের প্রতিদিনই আলাদা আলাদা স্থানে রাখা হয়। সেই সাথে তিন দিনই তাদের ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পরানো হয়। প্রথম দিন প্রত্যেকটি কৃষ্ণদেবতার বিগ্রহ কে রাজ বেশে সাজানো হয়। আগেকার সময়ে সোনার অলংকার দিয়ে সাজানো হতো। তবে বর্তমানে তা আর করা হয় না। দ্বিতীয় দিনে, ১২ টি বিগ্রহ কে সাজানো হয় ফুল বেশে। অর্থাৎ সুগন্ধযুক্ত পুষ্প মাল্য দিয়ে ঠাকুর গুলোকে সাজানো হয়। আর তৃতীয় দিনে সাজানো হয় রাখাল বেশে। তাই প্রথম তিনদিন এই ঠাকুর দর্শনের জন্য খুব ভিড় হয়। তাছাড়া সারা মাস জুড়েই মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে।
নাট মন্দিরে বিরাজমান কৃষ্ণ বিগ্রহ |
---|
মন্দির পরিদর্শন করার পর আমরা মেলাটি ঘুরে দেখছিলাম। মেলাটি এতটা বড় জায়গা জুড়ে হয় যে যে কেউ পথ হারাতে পারে। মনে হয় যেন কোন এক চক্রব্যূহে প্রবেশ করেছি। ঠিক যেন ভুলভুলাইয়া। একবার হাত ছেড়েছেন তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যাই হোক সেসব দোকানপাট এর কথা না হয় অন্য একদিন শেয়ার করব। তবে এইবার মেলায় গিয়ে আমাকে সব থেকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল যেই জিনিসটি সেটি হল এক ধরনের ফাইবারের রিয়ালিস্টিক কিছু জিনিস। চলুন আগে আপনাদের সাথে সেই ছবিটা শেয়ার করি।
ফাইবারের তৈরি জিনিসপত্র |
---|
এবার বলুন তো, এই ছবিটা দেখে কি বোঝার জো আছে যে এগুলো সবই ফাইবারের। আমরা তো একেবারেই হতচকিত হয়ে গেছিলাম। আমরা একদম রিয়েল ভেবেছিলাম। সামনে থেকে হাত না দিয়ে বোঝা খুবই মুশকিল। এত সুন্দর নিখুঁতভাবে এগুলোকে তৈরি করা হয়েছে যে যে কেউ ভ্যাবাচ্যাঁকা খেয়ে যাবে।
ঘুরতে ঘুরতে প্রচন্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তাই আমরা প্রথমেই খেয়েছিলাম swarma roll। এটা আমি আগে কখনো ট্রাই করিনি। তাই ভেবেই দেখেছিলাম এইবার মেলায় গেলে এটা অবশ্যই খাব। এটার এক পিস দাম ছিল ১০০ টাকা। টেস্ট মোটামুটি ভালোই লেগেছে। এরপর যেটা খেয়েছিলাম সেটা না খেলে আমাদের মেলা ঘোরা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেটা হল লস্যি। এমনি গরম কাল তার ওপর এত ভিড়। তাই মেলা ঘুরতে ঘুরতে গলা শুকিয়ে এলে এক গ্লাস লস্যি খাওয়া আবশ্যক। তারপর আরো কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা খেয়েছিলাম মথুরা কেক। মেলার এই মথুরা কেক খেতে আমার বেশ ভালো লাগে। এবং সবশেষে খাওয়া হয়েছিল আইসক্রিম।
মেলায় আমাদের খাওয়া- দাওয়া |
---|
এরপর আমরা মেলা থেকে বেরিয়ে আসছিলাম। বেরোনোর মুখেই দেখা হল এক কিউট সদস্যের সাথে। কে এতটাই কিউট আর শান্ত ছিল যে মেলার অর্ধেক অ্যাটেনশন তিনি একাই নিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নন একটি ল্যাব্রাডর কুক্কুরী। সবাই ওকে আদর করছিল। কতজনের যে আদর খেয়েছিল তা হয়তো গুনে শেষ করা যাবে না।
মেলার attraction |
---|
এইভাবেই আমরা আমাদের মেলাঘোরা সম্পন্ন করেছিলাম। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আজকে তুমি বারো দোল মেলা সম্পর্কে অনেক কিছু শেয়ার করেছে আসলেই আমাদের কৃষ্ণনগরের বারোদোল মেলা ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলাতে আমরা সকলেই আনন্দ করি। তবে এ বছরে শুধুমাত্র ঠাকুর দর্শন করার জন্যই একদিন মেলাতে গিয়েছিলাম এর পরে আর যাওয়া হয়নি। তুমি মেলায় ঘোরার মুহূর্ত শেয়ার করেছ সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মেলায় ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই অন্যরকম তবে আমাদের ক্ষেত্রে মেলায় যাওয়াটা একেবারেই উচিত নয় তবে আপনি মেলায় ঘুরতে গিয়েছেন এবং 12 ঢোল মেলার ইতিহাস আপনি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন যেটা দেখে আসলে বেশ ভালো লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ মেলায় ঘুরতে যাওয়ার মুহূর্ত এবং মেলা সম্পর্কে ইতিহাস আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।