প্রিয় মানুষের সাথে বৃষ্টি ভেজা একটি সন্ধ্যা
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন। আজকে আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।
বর্ষাকাল পড়ে গেছে। তাই এখন বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় প্রায়ই আকাশ মেঘলা করে আসছে কিংবা ঝড় উঠছে বা বৃষ্টি আসছে। বর্ষাকালে এই বিষয়গুলো খুবই কমন। তাই এখন পড়াতে বেরোনোর সময় সাথে করে রেইনকোট কিংবা ছাতা অবশ্যই নিয়ে যাই। আজকেও ঠিক একই রুটিন অনুযায়ী বিকেল বেলায় ৪ টের সময় ছাতা ও রেইনকোট নিয়ে পড়াতে বেরিয়েছিলাম। ৬ টার মধ্যে পড়ানো হয়ে গিয়েছিল। তারপরে আবার আরো একটা পড়ানো ছিল। তবে তাদের বাড়ি থেকে ফোন করে বলা হয় তারা আজ বাড়িতে নেই, তাই আজকে আমাকে আর যেতে হবে না। যেহেতু সচরাচর ছুটি পাওয়া যায় না তাই মাঝে মাঝে স্টুডেন্টরা নিজেরা অফ দিলে বেশ ভালোই লাগে।
এই বছর আমি tuition টা একটু বেশিই রেখেছি। কারণ সামনেই বিয়ের একটা বিশাল খরচ রয়েছে। মাথার ওপর আর্থিক সহায়তা করার মতো কোনো মানুষ না থাকায়, নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই নিতে হয়। মা মায়ের সাধ্য মতো খরচ করার চেষ্টা করবে জানি। আবার এটাও জানি, আমার বিয়ের খরচ মেটাতে গিয়ে পুরোপুরি হাত ফাঁকা হয়ে যাবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে যা হয় আর কি। সেই জন্য মাকে যাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারি তাই এই বছর আগের বছরগুলোর তুলনায় tuition বেশিই নিয়েছি। যার ফলে এই বছর নিজের জন্য একেবারেই সময় রাখা হয়নি। তাই প্রিয় মানুষটিকে তেমন ভাবে সময় দিতে পারি না।
তাই অনেকদিন বাদে একটা ছুটি পেয়ে সেটাকে কাজে লাগানোর জন্য ঠিক করলাম সন্ধ্যা বেলায় আমরা একটু ঘুরতে বেড়োবো। যথা টাইমে সে এসে হাজির হল। আমরা ঠিক করেছিলাম বাড়ির থেকে বেশ একটু দূরেই একটু ঘুরে আসব। তবে বেরোনোর মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু আশঙ্কা হল। আকাশে মেঘ করে এসেছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি বৃষ্টি আসবে। তাই আমরা দূরে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করলাম। শেষমেশ ঠিক করলাম, বাড়ির কাছাকাছি যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানেই যাব। একসাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থল 'হ্যাংলা' তে।
এরপর এলো খাবার অর্ডার করার পালা। আমার যেহেতু রাতে একটা নিমন্ত্রণ ছিল তাই আমি বেশি কিছু অর্ডার করতে চাইছিলাম না। অনেকদিন ধরেই আমার এই রেস্টুরেন্টের প্যান ফ্রায়েড মোমো খেতে খুব ইচ্ছে করছিল। এখানকার প্যান ফ্রায়েড মোমো টা খেতে চমৎকার হয়। একবার খেলে যে কেউ দ্বিতীয় বার এসে খাবে। এই প্যান ফ্রায়েড মোমো তে ৬ পিস দেয়, ভারতীয় মূল্যে যার নাম ১২০ টাকা। তাই আমরা প্রথমেই এই খাবারটি অর্ডার করেছিলাম।
মোমোর অসাধারণ স্বাদ গ্রহণ করতে করতেই আমরা ভাবছিলাম আর একটা কি অর্ডার দেওয়া যায়। এমন সময় আমার হবু বর ফ্রায়েড রাইস, চিকেন কষার যে কম্বোটি ছিল, সেটা অর্ডার দিতে বলল। কারণ ও এর আগে এখানকার ফ্রাইড রাইস ট্রাই করেনি। এর আগের দিন আমি এই কম্বোটা ট্রাই করেছিলাম। এখানকার প্রত্যেকটা রান্নাই আমার খুব ভালো লাগে। ফ্রাইড রাইস ও চিকেন কষা দুটোই অসাধারণ খেতে হয়। যেহেতু আমি এই ডিশের স্বাদ জানতাম, তাই এটাই অর্ডার করে দিয়েছিলাম। তবে আমি নিজের জন্য কিছু অর্ডার করিনি।ওর থেকেই সামান্য একটু খেয়েছিলাম।
আমাদের খাওয়া শেষ হতে না হতেই আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামল। সে কি তুমুল বৃষ্টি। অগত্যা আমাদের সেখানে বসে থাকতে হলো। টিনের চালের উপর ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল। তারপর লোড শেডিং ও হয়ে গেল। গ্রামের দিকে একটু বৃষ্টি হলেই এরকম লোডশেডিং হয়ে যায়। আর আজ তো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বসে বসে বৃষ্টি উপভোগ করছিলাম। সেই সাথে বেশ কিছু ফটোও তুলেছিলাম। সারাদিন এত গরম ছিল যে বৃষ্টিতে সেই উষ্ণ ভাবটা পুরোপুরি সরে গেল। আমার তো যথারীতি খুব ঠান্ডা লাগছিল। বেশ অনেকক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল বৃষ্টি থামার জন্য।
প্রায় আধা ঘন্টার বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার পর তারপর অবশেষে বৃষ্টিটা একটু কমলো। তখন আমরা বেরিয়ে এলাম। যদিও তখনো হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছিল। সব মিলিয়ে সন্ধ্যাটা খুব সুন্দর ভাবে আমরা কাটিয়েছি।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
একদম ঠিক কথা বলেছো আমাদের মত মধ্যবিত্ত ঘরে, মেয়েদের যেকোনো ইচ্ছে নিজেদের পূরণ করে আসতে হয়। তোমার মত আমিও বিয়ের আগে আমার নিজের সমস্ত শখ স্বাচ্ছন্দ নিজেই পূরণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের মত মেয়েরা যদি মায়ের দুঃখ কষ্ট বোঝে মায়ের পাশে থাকে তাহলে আশা করি কোন মায়েরই এই পৃথিবীতে কোন দুঃখ কষ্টই থাকবে না। যাইহোক ঠিকই বলেছ এখন ঝড় বৃষ্টির সময় প্রত্যেক দিন বিকেল বেলায় ঝড়-বৃষ্টি লেগেই থাকে নিজের প্রিয় মানুষকে নিয়ে চলে গিয়েছিল হ্যাংলা হেশেলে। আমিও বহুদিন হয়ে গেল হ্যাংলাতে খেতে যাওয়া হয় না। কারণ ওটা আমাদের বাড়ি উল্টোদিকে হয় তাই সচরাচর ওখানে একদমই খেতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। দুজনে একসাথে বেশ সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছো ভালোই খাওয়া-দাওয়া করেছ। সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।