পুরীর উল্টো রথ যাত্রার ইতিহাস
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই খুব ভাল আছেন। এক সপ্তাহ আগে আমি আপনাদের সাথে রথ যাত্রার ইতিহাস ও রথযাত্রা উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলার বিস্তারিত বর্ণনা শেয়ার করেছিলাম। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব উল্টো রথ যাত্রার বিস্তারিত বর্ণনা করবো । আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
প্রথমেই আপনাদের বুঝিয়ে দিই উল্টো রথ বলতে কি বোঝানো হয়। আসলে এই রথযাত্রা উপলক্ষ্যে তিন ভাইবোন অর্থাৎ জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তাদের মাসির বাড়ি (ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী গুন্ডিচার বাড়ি) বেড়াতে যান। এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে বলা হয় সোজা রথযাত্রা। আর সেখানে ৭ দিন থাকার পর তারা আবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসেন। এই ফিরে আসাকে বলা হয় উল্টো রথযাত্রা।
প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে এই উল্টো রথযাত্রা পালিত হয়। সোজা রথ যাত্রার ৭ দিন পর অর্থাৎ ৮ দিনের মাথায় উল্টো রথযাত্রা পালিত হয়। এই উল্টো রথযাত্রা পালিত হয়েছিল ৫ জুলাই। সোজা রথযাত্রার মতোই এই উল্টো রথযাত্রাতেও রথের দড়ি টানা ভীষণই পুণ্যের কাজ।
একদম প্রথম থেকেই প্রত্যেক বছর এই রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। তিন ভাইবোন অর্থাৎ জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি পৃথক পৃথক রথ তৈরি করা হয়। প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সংখ্যক কাঠ, দিয়ে এই রথগুলি তৈরি করা হয়, তার পাশাপাশি এতে ব্যবহৃত পোশাকগুলির রংও নির্দিষ্ট থাকে। চাকার সংখ্যা দেখতে গেলে দেখা যায়, জগন্নাথের রথের চাকার সংখ্যা ১৬টি, বলরামের রথের চাকার সংখ্যা ১৪টি ও সুভদ্রার রথের চাকার সংখ্যা ১২টি চাকা থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জগন্নাথ দেবের রথ তৈরি করতে কাঠ লাগে ৮৩২ টি।বলরাম এর রথ তৈরি করতে কাঠ লাগে ৭৬৩ টি কাঠ, ও সুভদ্রার রথ তৈরি করতে লাগে ৫৯৩টি কাঠ।এই বিশাল রথযাত্রা সম্পন্ন হওয়ার পর পুরীর রথের এই কাজগুলি কি করা হয় আপনারা বলতে পারবেন?
এই বিশাল রথযাত্রা শেষ হওয়ার পর তিনটি রথের সম্পূর্ণ অংশ পৃথক পৃথক করে দেওয়া হয়। সেই রথ গুলি থেকে যে বিশাল সংখ্যক কাঠ পাওয়া যায় তা নিলাম করা হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ওয়েবসাইট ঘাটলে এই বিষয়ে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। রথের বিভিন্ন অংশের মধ্যে কোন অংশটা সবচেয়ে দামি হয় জানেন? রথের চাকা সবচেয়ে দামী হয়। এর নিলাম শুরু হয় ৫০ হাজার টাকা থেকে। এই রথের অংশ চিনতে হলে তাকে আগে থেকে আবেদন করতে হয়। কোন ব্যক্তি রথের অংশ কিনলে, সেই অংশ দিয়ে অসৎ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আসলে পুরীতে জগন্নাথ দেব মানুষজনের মনে এক বিরাট জায়গা করে নিয়েছে। তাদের কাছে এটা একটা বিরাট আবেগ।
এই উল্টো রথযাত্রার দিনে অনেকের বাড়িতে জগন্নাথ দেবের পুজোর আয়োজন করা হয়। ঠিক তেমনি ভাবে আমার এক বান্ধবীর বাড়িতে জগন্নাথ দেবের পুজো উপলক্ষ্যে আমার নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে পৌঁছে দেখি পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। পুরোহিত মশাই পুজোতে বসে গিয়েছেন। ঠাকুরের সামনে বিরাট ভোগের আয়োজন করা হয়েছে। বসে বসে পুজো দেখলাম। তারপর প্রসাদ খাওয়ার পালা। প্রসাদ খেয়ে আবার চলে গিয়েছিলাম মেলা দেখতে।
এই বছর আমাদের এখানকার যে কলেজের মাঠ রয়েছে সেখানে ঠাকুরতলা থেকে রথ আনা হয়েছিল। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত সেখানে এই রথ রাখা হয়েছিল এবং সেই উপলক্ষ্যে মেলা বসেছিল। পরবর্তী পোস্টে সেই মেলার বেশ কিছু আকর্ষণীয় বিষয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।