রথযাত্রার শেষ পর্ব

in Incredible India6 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন। গতকাল আপনাদের সাথে রথ যাত্রার ইতিহাস নিয়ে খানিকটা গল্প করেছিলাম। আজকে চলে এসেছি আমাদের রথযাত্রা দেখার দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব নিয়ে। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

1000269605.jpg

রথযাত্রার দিন আমার একরত্তি ভাইপো সারাদিন রথ দেখতে যাওয়ার জন্য ভীষণই উত্তেজিত ছিল। কখন রথ দেখতে যাওয়া হবে এই নিয়ে সারাদিন প্রশ্ন করেছে। তাই সন্ধ্যার পরপরই আমরা মানে-- আমি, দাদা, বৌদি, আমার হবু বর আর ভাইপো বেড়িয়ে পড়েছিলাম রথ দেখার উদ্দেশ্যে। আমাদের এখানে অনেক জায়গায় রথ উপলক্ষ্যে মেলা বসে। আমরা প্রথমেই চলে গিয়েছিলাম হাইস্ট্রিটে। এটা শহরের প্রাণকেন্দ্র। এখানে বেশ বড়ো একটা রথ রাখা হয়। সেই রথে তিন ভাইবোন জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রা বিরাজ করে। ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। আর লোকজনের ভিড় উপচে পড়ে।

1000269576.jpg

এইবছর জানেন তেমন ভিড় দেখলাম না, যেমনটা প্রত্যেক বছর দেখি। সচরাচর যেটা দেখে বড়ো হয়েছি, তার বাইরে কিছু দেখলে মনটা বড্ড খারাপ করে। অন্যবার দেখেছি রাস্তা দুই ধার জুড়ে প্রচুর মাটির পুতুলের দোকান বসত। সেই দোকান ঘিরে প্রচুর মানুষের ভিড় জমত। তারা কত আশা নিয়ে দোকানগুলো বসায়। পুতুল বিক্রি হলে তাদেরও যে কত আনন্দ হয় তা হয়তো আমরা ক্রেতারা অনুভব করতে পারবো না। আমার দাদাও আগে ফুল টাইম এই মাটির পুতুলের ব্যবসা করতো। রথের সময় আমরা সপরিবারে এই হাইস্ট্রিটের রাস্তার ধারে পুতুলের দোকান দিতাম। বেশ ভালো বিক্রি হতো জানেন। আর এক একটা পুতুল বিক্রি হওয়ার সাথে সাথে মনের মধ্যে সে যে কি আনন্দ হতো তা বলে বোঝানোর নয়। তবে এইবার দোকানও অনেক কম ছিল সেই সাথে লোকজন সেই ভাবে পুতুল কিনছিল না। দোকানগুলো প্রায় ফাঁকাই ছিল। দেখে খুব খারাপ লাগছিল। যেহেতু সন্ধ্যের আগে আগেই খুব বৃষ্টি হয়েছিল তাই হয়তো এই বছর ভিড় একটু কম ছিল।

1000269216.jpg

এইসব দেখতে দেখতেই আমার ভাইপো কিছু একটা খেতে চাইছিল। তবে খুব ভালো বাচ্চা। তেমন কোনো বায়না করে না। ও পাঁপড় খেতে চেয়েছিল। তাই আমরা চলে গিয়েছিলাম একটা পাঁপড় ভাজা কিনতে। আমরা বাকিরা আর কেউ পাঁপড় ভাজা খাইনি। এরপরে আরো এগোতে এগোতে আমরা হরেক রকমের খাবার জিনিসের দোকান দেখছিলাম। এই খাবার জন্য কি দোকানগুলোতেও একই হাল। ভিড়ের পরিমাণ অনেক কম ছিল।

1000269207.jpg
ওই বড় রথের কাছে অনেকে তাদের বাড়ির ছোট ছোট রথ গুলো এনে হাজির করেছিল। বাড়ির বাচ্চারা খুব আনন্দসহকারে এই রথ গুলো তৈরি করে। তারপর সেই রথে তিন ভাই বোনকে বসিয়ে পুজো করে এবং সারা পাড়া ঘোরায়। বড়রা খুশি হয়ে ঠাকুরের কাছে কিছু টাকা দেয়। সেগুলো কি ছোটরা আরো অনেক বেশি আনন্দ অনুভব করে। আমার স্টুডেন্টরাও এইরকম ভাবে ছোট ছোট রথ তৈরি করেছে। ভেবেছিলাম আমার ভাইপোকেও এরকম একটা রথ বানিয়ে দেবো। তবে সময় করে উঠতে পারিনি। তাই একটু খারাপও লাগছিল। কিন্তু পরীক্ষার চাপে আর পেরে উঠিনি। চেষ্টা করব আগামী বছর যেন একটা রথ ওকে বানিয়ে দিতে পারি।

1000269189.jpg

যাই হোক, হাই স্ট্রিটের রথ দেখা শেষ করে আমরা সকলে চলে গিয়েছিলাম আমাদের এখানকার রথ তলায়। মানে কৃষ্ণনগরে রথ তলা বলে একটা জায়গা আছে। এখানে এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এক বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়। তবে এই বছর আমি প্রথমবার সেখানে গেলেও প্রচন্ড হতাশ হলাম। কারণ প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে পুরো মাঠে জল জমে গিয়েছিল এবং প্রচন্ড কাদা হয়েছিল। যার ফলে মেলায় দোকান বসলেও লোকজনের ভিড় তেমন ছিল না। রাস্তায় খালি ভিড় থাকলেও মেলা প্রাঙ্গণে কাদা এড়াতে খুব কম মানুষই মাঠের মধ্যে যাচ্ছিল। আমরাও কোনক্রমে একটু দর্শন করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম।

1000269601.jpg

এই কাদার জন্যই মেলার দোকান থেকে কিছু কিনে খাওয়া হয়নি। তাই পরে মেলা থেকে বেরিয়ে আমরা বাড়ি ফেরার পথে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। রাতের খাবার সেরে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। এইভাবেই আমাদের এই বছরের রথ উৎসব উপভোগ করা হলো।

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।