আমার বানানো জুয়েলারী (চুড়ি, গলার হার ও আংটি)

in Incredible India17 hours ago (edited)

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? এই গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। গরম যেন বেরেই চলেছে। আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আমার বানানো জুয়েলারীর ছবি শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

প্রতিবছর আমাদের কলেজে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে থাকে। প্রথম যে বছর পর্যন্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলাম সেই বছর সুন্দর একটি জুয়েলারী সেট পরে গিয়েছিলাম। ওই জুয়েলারি সেটটা আমার খুব পছন্দ ছিল। বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করেই ওই সেটটা আমি আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে বানিয়েছিলাম। তবে এত পরিমাণ আবির খেলা হয় যে সেটটা পুরোটাই আবিরে ভরে গিয়েছিল। যার ফলে ঐ জুয়েলারী সেটটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই পরের বছরের বসন্ত উৎসবের সময় আমি ঠিক করে রেখেছিলাম এই বছর আর দামি কোনো জুয়েলারী সেট পরবো না। তবে একেবারেই সেজে না গেলে নিজেকে ভীষণ odd লাগবে। তাই ঠিক করেছিলাম শাড়ির সাথে ম্যাচ করে নিজেই কিছু জুয়েলারী বানিয়ে নেব।

1000262671.jpg
যেহেতু এর আগে কখনো এমন কিছু বানাইনি তাই ভাবছিলাম কিভাবে বানাবো। এরপর আইডিয়া এল। যেহেতু বসন্ত উৎসবে হলুদ রঙের শাড়ি ও নীল রঙের ব্লাউজ পরতাম তাই ঠিক করলাম এই দুটো কালার দিয়েই কিছু চুড়ি বানাবো। সেইমতো হলুদ ও নীল রঙের কাপড় জোগাড় করে ফেললাম। এইরকম চুড়ি বানানোর জন্য বাজারে রেডিমেড বেস পাওয়া যায়। তবে আমি যেহেতু একেবারেই ইনভেস্ট করতে চাইনি তাই আমার কাছে বাড়িতে কিছু পুরনো কাঁচের চুড়ি ছিল, যেগুলো এখন আর পরা হয় না, সেগুলোকেই কাজে লাগালাম। একটার সাথে আরেকটা আঠা দিয়ে ধরে একটু মোটা করে নিলাম। তারপর একে একে হলুদ ও নীল রঙের কাপড় তার উপর জড়িয়ে দিলাম। এরপর একটু শুকিয়ে নিয়ে, দাদার কাছে থাকা ফেব্রিক দিয়ে চুড়িগুলোর ওপর কিছু ডিজাইন করে দিলাম। এই ভাবেই আমার চুড়িগুলো তৈরি হয়ে গেল।

1000262673.jpg

চুড়ির পরে এবার পালা গলার হার বানানোর। তবে গলার হার বানাতে তো বেশ কিছু উপকরণের প্রয়োজন। তবে আমার কাছে সেসবের কিছুই জোগান ছিল না। তবে কিছু না কিছু তো বানাতেই হবে। তাই অনেক ভাবনা চিন্তা করে দেখলাম আমার কাছে কাপড় ও উল আছে। তাই যাই বানাই না কেন, এই উপকরণ গুলো দিয়েই বানাতে হবে। আমি যে খুব ভালো কিছু বানাবো এটা আশা আমার ছিল না। কারণ তার জন্য আমাকে বেশ কিছু জিনিস কিনতে হতো। তাই আমি কাপড় গুলো মাফ করে কেটে সেলাই করে ফুলের মত আকার দেওয়ার চেষ্টা করি। এইভাবে তিনটি ফুল বানায়। তারপর কিছু উল নিয়ে বিনুনির মতো করে নিই। তারপর একে একে সেই ফুলগুলো উলের ওপর বসিয়ে দিই। ফুল গুলোর মাঝখানটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। তাই সেগুলোর মাঝে একটা করে শোলার বল বসিয়ে দিয়েছিলাম। এইভাবেই আমার গলার হার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর একই রকম ভাবে ফুল বানিয়ে একটি আংটির বেসের ওপর বসিয়ে একটা আংটি বানিয়ে নিয়েছিলাম।

1000262675.jpg

তারপর বসন্ত উৎসবের দিন সেইসব জুয়েলারি গুলো পরেই পৌঁছে গিয়েছিলাম কলেজে। আমি নিজের হাতে এই জিনিসগুলো বানিয়েছি দেখে সবাই খুব পছন্দ করেছিল, যেহেতু আমি এই সবে একেবারেই দক্ষ নই। আর গত বছর অনেকেরই কাস্টমাইজ গহনা আবিরে ভরে গিয়েছিল। তাই সকলেই দুঃখ করছিল। আর সেই জন্য আমি যে নিজে হাতে এগুলো বানিয়েছি সেটা শুনে ওরাও পরের বছর নিজেরাই বানাবে বলছিল। আবির খেলার আগে আমরা বেশ কিছু ফটো তুলে নিয়েছিলাম।

1000262676.jpg

তারপর আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আমরা রং খেলা শুরু করি। রঙ বলতে আমরা আবিরটাই খেলি। কলেজে শুধুমাত্র আবির খেলারই অনুমতি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে আমরা আবির খেলা শুরু করি। একে অপরকে আবির মাখিয়ে আমাদের আবির খেলার সূচনা হয়। তারপর বসন্ত উৎসব সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের গান চালানো হয়। স্যার ম্যামেরা ও আমরা সকলে একসঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি। স্যার আমাদের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করি। সবশেষ আমাদের দুপুরে কলেজে মধ্যাহ্নভোজন করানো হয়। এইভাবেই আমরা কলেজে বসন্ত উৎসব পালন করি।

1000262679.jpg
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
 8 hours ago 

এখনকার দিনে বসন্ত উৎসব নিয়ে প্রায় সব কলেজে কিংবা অনেক জায়গাতেই মাতামাতি হয়। তবে আমি কোনদিন বসন্ত উৎসবে অংশগ্রহণ করিনি। বসন্ত উৎসব বলতে আবির খেলতে বেশি ভালো লাগে ছোটবেলায় প্রচুর রকমের রং খেলেছে কিন্তু রঙে এখন কেমিক্যাল থাকায় এখন আর রং খেলতে ইচ্ছে করেনা। আবিরে ও অনেক রং মেশানো হয় তবুও আবীর খেলাটাই এখনকার দিনে চলে । বসন্ত উৎসবের জন্য নিজের হাতে চুরি ,হার, আংটি বানিয়েছ। আসলে আমরা চাইলে সবকিছুই করতে পারি কিন্তু সময়ের অভাবে কোন কিছু করা হয়ে ওঠে না। নিজের হাতে যে কোন জিনিস তৈরি করলে সেটা সব সময় ভালোই লাগে তোমারও বানানো প্রত্যেকটা জিনিস ভীষণ সুন্দর হয়েছে শাড়ি আর ব্লাউজের সাথে প্রত্যেকটা জিনিস ম্যাচ হয়ে গেছে। সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলো বানিয়ে শেয়ার করেছ তোমার বসন্ত উৎসবে প্রত্যেকটা জিনিস শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 11 hours ago 

বসন্ত উতসবের জন্য আপানার তৈরি করা জুয়লারীগুলো খুবই সুন্দর হয়েছে ।চুরিগুলো জুড়ে মোটা করারা বুদ্ধিটাও চমৎকার ।আর এই জুয়েলারি পরা আপনাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে ।ভালো থাকবেন সবসময় ।

 10 hours ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি, আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

Loading...