নৈহাটি বড়মা-এর কাছে পুজো দিতে যাওয়া
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলের খুব ভালো আছেন। আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন আরো একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আমাদের শহর কৃষ্ণনগর থেকে নৈহাটি বড় মায়ের মন্দিরের দুরত্ব ট্রেন লাইনে ৮২ কিলোমিটার মতো। ট্রেনে করে যেতে সময় লাগে তাই দেড় ঘন্টা। বহুদিন ধরেই আমরা প্ল্যান করছিলাম নৈহাটি বড় মায়ের কাছে পুজো দিতে যাব। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে ঠাকুরের স্থানে হুটহাট করে যাওয়া যায় না। ঠাকুরের যেদিন চাইবে, তার ভক্তরা সেদিনই তার দেখা পাবে। তাই অনেকদিন ধরে প্ল্যান করা হলেও আমাদের যাওয়া হচ্ছিল না। কোন না কোন কাজ পড়েই যাচ্ছিল। তবে পরীক্ষা শেষ হতেই আমি শুভায়নকে বলেছিলাম এই রবিবারে আমরা নৈহাটি বড় মায়ের কাছে যাব। রবিবারে ওরও কোন সমস্যা ছিল না কারণ রবিবারে ওদের অফিস বন্ধ থাকে। তাই অবশেষে অনেক প্রতীক্ষার পর এই রবিবারে আমরা বড় মায়ের দেখা পেয়েছিলাম।
যেহেতু প্রতিদিন মন্দিরে হাজার হাজার মানুষ লাইন দিয়ে পুজো দেয় তাই আমরা ঠিক করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছে যাব। সেইমতো প্রথমে ভেবেছিলাম আমরা চারটে কুড়ির ট্রেন ধরবো। তাহলে আমরা মোটামুটি ছটার মধ্যে মন্দিরে পৌঁছে যাব। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে পড়বো, তাহলে আর বেশি লাইন দিতে হবে না। তাড়াতাড়ি আমাদের পুজো হয়ে যাবে। কিন্তু পরে শুভায়ন বলল, ৫ টার সময় একটা ট্রেন আছে, সেই ট্রেনেই যেতে, তাহলেও খুব বেশি দেরি হবে না। কারণ চারটে কুড়ির ট্রেন ধরতে গেলে আমাদের অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে, সেটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। যাই হোক, ৫ টার ট্রেন টা ধরার জন্য আমরা সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম।
তখনো রাস্তায় খুব বেশি মানুষ ছিল না। তবে কয়েকজন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে পড়েছিল। স্টেশনে পৌঁছে আমরা দুটো টিকিট কেটে নিই। তারপর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে থাকি। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার কাছাকাছি চলে এলেও ট্রেনের কোন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনো ট্রেন প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায়নি। আমি তো সেই মুহূর্তে বড্ড রেগে গিয়েছিলাম। কারণ এরপরের ট্রেনে যেতে হলে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যেত আর আমরা লাইনের অনেক পিছনে থাকতাম। পাঁচটার দিকে অ্যানাউন্সমেন্ট করা হলো যে কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য পাঁচটার ট্রেনটা আধঘন্টা লেট আছে। তবে এই সেই ট্রেন এসে পৌঁছালো ৫.৪০ নাগাদ আর ছাড়লো ৫.৪৫ এ। মানে আমরা ইতিমধ্যে ৪৫ মিনিট লেট ছিলাম।
এরপর আমরা নৈহাটি স্টেশনে গিয়ে পৌঁছালাম সকাল ৭.১৫ নাগাদ। আমাদের দুজনের কেউই যেহেতু আগে মায়ের কাছে ফিরে যেতে আসেনি তাই স্টেশন থেকে কোন দিকে যেতে হবে কিছুই জানতাম না। একজনকে জিজ্ঞাসা করতে যে আমাদের রাস্তা দেখিয়ে দিল। রাস্তা দিয়ে বাইরে বেরোলাম। আমাকে আমার পড়ানোর বাড়ির সকলে বলে দিয়েছিল যে স্টেশন থেকে বড় মায়ের মন্দির খুব কাছেই। তাই টোটো কিংবা রিক্সা ভাড়া করার প্রয়োজন নেই। সেইমতো আমি শুভায়নকে বললাম কাউকে জিজ্ঞাসা করে হেঁটেই যেতে। কিন্তু ও কিছুতেই হেঁটে যেতে রাজি হলো না, কারণ আমরা এমনিতেই অনেকটা লেটে সেখানে পৌঁছেছি আর ও রাস্তাও চেনে না। তাই হেঁটে গেলে দেরি হয়ে যাবে। তাই অবশেষে আমরা রিকশা ভাড়া করলাম।
প্রায় ১৫ বছর পর রিকশায় উঠলাম। বেশ ভালো লাগলো। অনেক পুরনো স্মৃতি ফিরে এলো। সেখান থেকে রিকশা করে দু-তিন মিনিটের রাস্তা। হেঁটেই যাওয়া যায়। তবুও আমাদের কুড়ি টাকা দিতে হলো। আমি এই ব্যাপারে একটু রাগ করছিলাম শুভায়ন এর ওপর। কারণ এটুকু রাস্তা হেঁটেই আসা যেত। যাই হোক, মন্দিরের সামনে পৌঁছে আমরা পুজোর জন্য একটা ডালা কিনে নিয়েছিলাম। ওই ডালার মধ্যেই জবা ফুল, আলতা ,সিঁদুর, সন্দেশ, ধূপকাঠি, মোমবাতি সমস্ত কিছু ছিল।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার আপনাদের সাথে আমার নৈহাটি বড় মায়ের কাছে পুজো দিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতার বাকি পর্ব শেয়ার করব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
TEAM 8
Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator08. Good post here should be..Thank you so much